হে আমার ছেলে"বইটির প্রথমের কিছু অংশ: আল্লাহর ভয়ে! ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া টগবগে এক যুবক। নাম তার মীম হামযাহ। যৌবনের উন্মাদনায় তিনি বেসামাল ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। চতুরদিকে অন্যায় অসত্য ও অশ্লীলতার হাতছানি। অপর দিকে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা বাণী। কিন্তু যৌবনের তাড়না ও সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের দরুন অন্যায় থেকে বেঁচে থাকা ছিলাে খুবই দুষ্কর। ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলেন না সে এখন কি করবে। তাই কাগজ কলম হাতে তুলে নিলাে। জীবন জিজ্ঞাসার সমাধান কল্পে চিঠি লিখলাে। পাঠিয়ে দিলাে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ইসলামী শরীআতের প্রজ্ঞাবান আলেম ড. আলী তানতাবী রহ. এর নিকট। চিঠির আদ্যপান্ত তিনি পড়লেন। যুবকের মনােভাব বুঝলেন। তাকে নিজের ছেলের পর্যায়ে ভাবলেন। স্বীয় অভিজ্ঞতা আর প্রজ্ঞার সাহায্যে শরীআতের দিক নির্দেশনার আলােকে আন্তরিকভাবে চিঠির উত্তর লিখলেন। দরদী রাহবর হিসাবে যুবককে উপদেশমূলক নসীহত করলেন। পত্রে লেখা তার সেই উপদেশগুলাে আজও আমাদের জন্য স্বরণীয় ও বরণীয়, যেগুলাে যুগ যুগ ধরে পথহারাদেরকে সঠিক পথের দিশা দেবে, শােনাবে মুক্তির পয়গাম। তাই বাংলা ভাষাভাষীদের উপকারার্থে পত্রটি আরবী থেকে বাংলা ভাষায় ভাষান্তর করা হলাে।
বিংশ শতাব্দীর এক সমাজচিন্তক দার্শনিক ড. শায়খ আলী তানতাবী। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার দামেশক নগরীতে তাঁর জন্ম। পৈত্রিক আবাস মিসরের তানতা শহর হওয়ায় তানতাবী নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। ছাত্রজীবনেই তুখােড় মেধার কারণে তিনি গবেষক শিক্ষকগণের দৃষ্টি কাড়েন। সেকালে গবেষণা ও জ্ঞানসাধনায় তার পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল ঈর্ষণীয়। সেই পরিবারেই তিনি ইসলামি ও সাধারণ শিক্ষার সমন্বিত জ্ঞান অর্জন করে ঐতিহ্যের তিলকে সােনার প্রলেপ আঁটেন। সতেরাে বছর বয়স। থেকেই বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও গল্প প্রকাশ হতে থাকে। ১৯৩৬ সালে সাম্রাজ্যবাদীদের জুলুম ও শােষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিনি ইরাক গমন করেন। সুদীর্ঘ পাঁচ বছর পর দামেশকে ফিরে এসে বিচারক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে যােগ্যতার সিঁড়ি বেয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির আসন অলঙ্কৃত করেন। আর লেখালেখি! সে তাে তার নেশা। এ নেশা তার মজ্জার সাথে মিশা। একটু সময় পেলেই এ চিন্তাবিদ কাগজ কলম হাতে লিখতে বসে যেতেন। তাঁর জ্ঞানের নিগুঢ় চশমায় ধরা পড়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘাপটি মেরে থাকা অসঙ্গতির কালাে পাহাড়। সেই অমানিশা দূর করতে তিনি। জ্বালান নানান রঙের জ্ঞানের মশাল। সেই আলােয় বিদুরিত হয় শত প্রকারের। আঁধার-অজ্ঞানতা; সম্বিৎ ফিরে পায়। হতাশাচ্ছন্ন জাতি। গবেষণামূলক লেখালেখির খ্যাতির মধ্য দিয়ে তিনি মক্কা মােকাররমা শরিয়া কলেজের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যুগ-জিজ্ঞাসার সমাধানমূলক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। পাশাপাশি নিয়মিত পত্র-পত্রিকায় কলাম লেখা, বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থ প্রণয়ন আর বিভিন্ন মাদরাসা-কলেজে দরসদানও চলতে থাকে সমান গতিতে। ১৯৯৯ সালে ৯০ বছর বয়সে এ শায়খ মক্কা নগরীতে ইন্তেকাল করেন।