আত্মগত দার্শনিক গ্রন্থে প্রথম যে চরিত্রের সাথে পরিচয় হবে, তার নাম ওজুদ বা অস্তিত্ব। অস্তিত্বের স্ত্রী ইশক বা প্রেম। অস্তিত্ব ও প্রেমের সংসার থেকে জন্ম নেয় জীবন (হায়াত) সাধনা (সায়ী) ও আনন্দ (সুরুর)। সব কিছুর সমন্বয় হয়ে যার বিকাশ, সে হচ্ছে হায়াত বা জীবন। কারণ হায়াতই এ উপন্যাসের মূল চরিত্র। বুঝাই যাচ্ছে চরিত্র সমূহকে লেখক মেটাফোরে পরিণত করেছেন। যারা জীবনের এক দার্শনিক প্রকল্পের প্রতিনিধিত্ব করছে। উপন্যাসের অন্যান্য চরিত্র হচ্ছে উপলব্ধি বা বুদ্ধিবৃত্তি (ফহম), পারস্পরিক সহযোগিতা (নসর) ইত্যাদি। চরিত্রসমূহ জ্বলে উঠে সমুদ্রের বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে, জনহীন জঙ্গলে পশু ও পাখিদের প্রতিবেশে। এরই মধ্য দিয়ে গোটা কাহিনি এগিয়ে যায় এমন এক উপসংহারের দিকে, যা জীবনের সত্যসার! গ্রন্থটি রচিত হয়েছে পৃথিবীর প্রথম দার্শনিক উপন্যাস হাই ইবনে ইয়াকজান এর থিম অবলম্বন করে। মানবজাতির বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রগতিতে এ গ্রন্থের ভূমিকা ঐতিহাসিক। মুসা আল হাফিজ এ থিমের আধারে নিজের কথাশৈলীর ব্যবহার করেছেন। চরিত্রে প্রয়োগ করেছেন সৃষ্টিশীল কল্পনা। কাহিনিতে এনেছেন বিশেষ প্রলেপ। ফলে ধ্রুপদী সাহিত্যের সুন্দর এক উদগতি ঘটেছে এ উপন্যাসে। প্রাচীন থিম অবলম্বনে ধ্রুপদ রচনা বিশ্বসাহিত্যের বরেণ্য এক ধারা। এ গ্রন্থে মুসা আল হাফিজের বর্ণনাশৈলী সতেজ ও সুখদ। জনহীন দ্বীপের অরণ্যে এক বালকের জীবন-উদ্ভাবনের বিরল বিবরণে লেখক যে রহস্যমেদুর ও জীবন্ত চিত্ররূপ এঁকেছেন, তা পাঠকদের জন্য নিয়ে আসবে চিত্তসুধার উপাদেয় আস্বাদ!
কবি, গবেষক ও আলেম মুসা আল হাফিজ। ১৯৮৪ সালের ৫ অক্টোবর সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের মাখর-গাঁও গ্রামে তাঁর জন্ম। ১৯৯৫ সালে, ১১ বছর বয়সে কুরআন মজিদের হিফজ সম্পন্ন করেন। ২০০৭ সালে কৃতীত্বের সাথে তাকমিল ফিল হাদীস (মাস্টার্স সমমান) সম্পন্ন করেন। জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ তরুণ আলেম প্রতিভা-২০০৮ এ সম্মানীত হন। ২০০৯ সালে কর্মজীবনের শুরু ঐতিহ্যবাহী বিশ্বনাথ জামেয়া মাদানিয়ায় শিক্ষকতা এবং মাসিক আল ফারুকের উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে। ২০১৬ সালে উচ্চতর ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামেয়াতুল খায়র আল ইসলামীয়া সিলেটে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৯ সালে ঢাকায়, যাত্রাবাড়ীতে প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামী দা‘ওয়াহ ও গবেষণা কেন্দ্র মা‘হাদুল ফিকরি ওয়াদদিরাসাতিল ইসলামিয়া। বর্তমানে ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করছেন। ২০১১ সালে হয় তার কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয় কবি-সমালোচক মুকুল চৌধুরীর সনাক্তধর্মী আলোচনা ‘মুসা আল হাফিজ: কবিতার নতুন কণ্ঠস্বর’। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. রিজাউল ইসলাম তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে লিখেন গবেষণাগ্রন্থ- মুসা আল হাফিজের মননবিশ্ব (২০১৮)। তরুণ কবি এম আসাদ চৌধুরীর সম্পাদনায় ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিশজন আলোচকের পর্যালোচনাগ্রন্থ ‘মননের কবি, বৈদগ্ধের দৃষ্টিতে’। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ৫০টির অধিক বই লিখেছেন।