দেখতে দেখতে বছর শেষ হয়ে এল। এসএসসি পরী¶ার্থীদের জন্য স্কুলের প¶ থেকে একটি বিদায় অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিষয়টা সাইফুলকে খুব নাড়া দেয়। কত দুষ্টামি করেছে সে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কখনো মনেই হয়নি এ স্কুল ছেড়ে চির জীবনের জন্য চলে যেতে হবে। গত পাঁচটি বছর কিভাবে শেষ হয়ে গেল ভেবে পায় না সে। গত পাঁচ বছরের সব স্মৃতি যেন স্থির চিত্র হয়ে তার মনে জেগে উঠছে। জুয়েল ছিল ক্লাসের সেরা ছাত্র, পাশাপাশি ভালো গানও গাইত সে। সব অনুষ্ঠানেই গানের জন্য পুরস্কার জিততো। বিদায় অনুষ্ঠানের সাথে সাথে তার সুন্দর কণ্ঠের গান আর শোনা হবে না, ভাবতেই কষ্ট হয়। আদনান অবশ্য ক্লাস নাইন থেকে এ স্কুলে কিন্তু অল্প সময়েই সে তার বন্ধুদের মাঝে দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। ওর বাবা ছিল উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা। খাদ্য গুদামের ভিতরে ছিল বিশাল এরিয়া। তার মধ্যেই ছিল ওদের সরকারি বাসা। সব বন্ধুরা সেখানে গিয়ে আড্ডা দিতো। বাসার পাশে একটা ছোট মাঠ ছিল। মাঠে চলতো ক্রিকেট, ফুটবল ও রেকেট খেলা। সব মিলিয়ে ওদের বাসা ছিল একটা মিলন মেলা। কিন্তু আজ এ বিদায়ের মাঝে হয়তো সে মিলন মেলারও পরিসমাপ্তি ঘটবে। সেলিম তার জন্মদিনে একবার তার বন্ধুদের বাসায় দাওয়াত দিয়েছিল। সে সুন্দর মুহূর্ত অনেকদিন মনে থাকবে। সাইফুল খুব দুষ্ট ছিল। তার দুষ্টামি মিশে থাকবে স্কুলের বারান্দায় কিংবা ক্লাসরুমে। বিদ্যুৎ, সাগর, পলাশ, নজরুলকে আর একসাথে আড্ডা দিতে দেখা যাবে না। মানিক আর কোনোদিন পলাশ ফুলের আস্ত ডাল নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিবে না। জীবন এমনি। ক্ষয়ে যায়। স্মৃতি থেকে যায়। চিনচিনে ব্যথা কিংবা সুখের অনুভূতি নিয়ে। শিখা, ইতি, শিউলি, নাসরিন ওদের মন খুব খারাপ। ওরা যেন আজ হাসতে ভুলে গেছে। স্কুলের হলরুমে আজ সব ছাত্র-ছাত্রী একত্রিত হয়েছে। নিয়মমাফিক স্কুলে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। ছাত্র ছাত্রীদের প¶ থেকে জুয়েল বক্তৃতা দেওয়ার জন্যে মঞ্চে উঠল। পুরো অনুষ্ঠানে পিনপতন নিরবতা। জুয়েল সবার দিকে একবার তাকিয়ে বক্তব্য শুরু করল।