মানুষের অনুভূতির যে অব্যক্ত খনি আছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তা খনন করে সূর্যালোকে এনেছিলেন। তিনি শুধু মসি-সদৃশ শাবল চালিয়ে সেগুলোকে তুলে আনেননি, তুলির আঁচড়েও রাঙিয়েছেন। বাঙালির সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রেম-বিরহ, প্রীতি-ঘৃণা দিয়ে তিনি সাজিয়েছেন এক অমর আর্টগ্যালারি। সেই গ্যালারি প্রজন্মান্তরে আজও বাঙালির পদচারণায় মুখর থাকে। বাঙালির ঠোঁটে আজও খেলা করে রবি ঠাকুরের গল্প, রবি ঠাকুরের কবিতা, রবি ঠাকুরের গান।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দিকেও ছুটে গেছে প্রভূত নিন্দা-শলাকা। পাকিস্তানপন্থী প্রতিক্রিয়াশীলরা আসলে রবীন্দ্রনাথের সমালোচনা করেনি, তাঁকে খুন করতে চেয়েছে, যেমনটা তারা করতে চেয়েছিল বাংলার মানস ও মানুষকে। অন্যদিকে অন্যান্য-ক্ষেত্রে প্রগতিশীল অনেক ব্যক্তিবর্গ হয়ত অজ্ঞতা, হয়ত অসূয়া, নয়ত নির্দোষ সমালোচনার খাতিরেও রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। তাঁদের এসব সিদ্ধান্ত ও পাকমন-পেয়ারু বুদ্ধিজীবিদের দুর্বৃত্তি ব্যবচ্ছেদ করেছেন কুলদা রায় ও মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান (জালাল)। তাঁদের অণুবীক্ষণ লেন্সে ফুটে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের কথিত প্রজা-নিপীড়ন, মুসলমানদের সঙ্গে সম্পর্ক, বঙ্গভঙ্গে তাঁর ভূমিকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর কথিত বিরোধীতা, অন্য গীতিকারের গান হতে সুর চুরির অভিযোগ, পল্লিপুনর্গঠন, পাকিস্তানপর্বে রবীন্দ্রবিরোধিতার স্বরূপ ও অন্যান্য। অভিযোগ খ-নের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের একটা সম্যক চিত্রও উঠে এসেছে এই বইতে।