বাংলা সাহিত্যে ছোটোগল্পের সূচনা বিলম্বে হলেও তা ছিল বেশ চমকপ্রদ। আধুনিক যুগে ছোটোগল্প খুব দ্রুত পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোটোগল্পের একটা শক্ত ভিত তৈরি করে দেন। তাঁর পরবর্তী লেখকগণ গল্পকে আরও সমৃদ্ধ ও বিচিত্র বৈভবে ঋদ্ধ করেছেন। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে এসে বাংলা ছোটোগল্প একটা বাঁক নেয়। একঝাঁক তরুণ নানা ধরনের নিরীক্ষা চালিয়ে বাংলা ছোটোগল্পের ভিত্তি আরও মজবুত করেন। বেঁচে থাকার আর্তি, বৃহত্তর জীবনসংগ্রাম, প্রেম—আকাক্সক্ষা ও স্বপ্নের সমন্বয়ে নতুন এক মাত্রা যোগ হয় তখন। আশির দশক কাটে স্বৈরশাসনে। তার প্রভাবে ওইসময় তুলোতুলো কাহিনির বদলে গল্পকারদের হাতে প্রাধান্য পায় দ্রোহ। লেখকরাও হয়ে ওঠেন অতি মাত্রায় রাজনীতি সচেতন। নব্বইয়ের দশকে এসে ছোটোগল্পে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। কাহিনিনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে ভাষানির্ভর উপস্থাপনা, বিষয়বস্তুতে নাটকীয়তা, বহুরৈখিক প্লট ও একই সঙ্গে অনেক ঘটনার ইঙ্গিত, এইসব পরিবর্তনে ছোটোগল্পের বহুকৌণিক দ্বার উন্মোচন হয়। আমাদের চিরায়ত কাহিনিগল্পে এখন একেবারে হযবরল অবস্থা। বর্তমান বাঙালিয়ানায় নেই কোনও ঘাত—প্রতিঘাত, বিপ্লব কিংবা ব্যর্থ অভ্যুত্থান, ফলে প্রেম ও কামের ছটফটানিই যেন মূখ্য। এমন কিছু গল্পও আছে এই সংখ্যায়। বহুবৈচিত্র্যময় এইসব গল্পপাঠে সময়ের অবস্থান নির্ণিত না হলেও মুদ্রিত গল্পে আগামীর ইঙ্গিত পাঠক পাবেন বলে মনে হয়। বুনন গল্প সংখ্যার জন্য আমাদের কাক্সক্ষা ছিল, অগ্রন্থিত ও অপ্রকাশিত (যে কোনও মাধ্যম) গল্প। কিছু পূর্ব—প্রকাশিত গল্প পেয়ে বিব্রত হয়েছি। অনেক সময় প্রকাশনার ব্যাপকতার কারণে জানাও সম্ভব হয় না। গল্প পেয়েছি ১৫৪টি। আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এবং কয়েকজন স্ব—প্রণোদিত হয়ে এই গল্পগুলো পাঠিয়েছেন। গুটিকয়েক গল্প আমাদের হতাশ করলেও বেশিরভাগ গল্পই ছিল নিরীক্ষাধর্মী ও মানসম্মত। ১০০ গল্পের পূর্ব ঘোষণা ও গল্প বাচাই প্রক্রিয়া ছিল বেশ বিব্রতকর। এই সংখ্যায় সব গল্প ছাপাতে পারলে নিঃসন্দেহে সংখ্যা আরও বেশি ঋদ্ধ হতো। খুব কাছাকাছি সময়ে গল্পসংখ্যা—২ প্রকাশের ইচ্ছা থাকল। প্রিয় গল্পলেখক, সে পর্যন্ত অপেক্ষার অনুরোধ রইল। বরাবরের মতো বুননে প্রকাশিত লেখাগুলোর প্রথাগত কোনও ক্রমবিন্যাস নেই। প্রকাশিত লেখার সব লেখকরাই আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। বুননের লেখক—পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছা। সকলের কল্যাণ হোক।