সম্পাদকীয়... মানবসভ্যতা কতদূর এগুলো? গুহাযুগে হিংস্র্র বন্যপশু ছিল মানুষের শত্রু। বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন মানুষ ধীরে ধীরে হিংস্র্র পশুর ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করল। ঐক্যবদ্ধ সামাজিক হলো। সভ্য হলো। আর নিজে নিজেরই শত্রুতে পরিণত হলো। হিংস্র্র পশু দমনের জন্য যে—অস্ত্র তৈরি করেছিল তার চেয়ে হাজার গুণ শক্তিশালী মারণাস্ত্র তৈরি করল নিজেদের বিনাশ করতে। যার কাছে যত বড়ো অস্ত্র সে তত শক্তিশালী। হায় সভ্যযুগের মানুষ! আর কট্টর ধর্মীয় মৌলবাদের স্বর্ণযুগ বলে খ্যাত মধ্যযুগকেও হার মানিয়েছেন এই সময়ের ধর্মীয় রাজনীতির নির্লজ্জ উন্মাদনা। অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ শান্তিকামী। যুদ্ধ চায় না। শান্তিই পরম আরাধ্য। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, বিশে^র নানা প্রান্তে এখন যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধে লিপ্ত দেশগুলোর মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বহু মানুষ হতাহত হচ্ছে, ঘরবাড়ি হারাচ্ছে অনেকে। মাতৃভূমি ছেড়ে লাখো মানুষকে বেছে নিতে হচ্ছে শরণার্থীর জীবন। করোনা মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিকে যতটা না—ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে রাশিয়া—ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধ শুধু বিবদমান দেশগুলোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না। বিশ্ব অন্যান্য অঞ্চলেও এর ক্ষতিকর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। রাশিয়া—ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব কমবেশি পুরো বিশে^ই পড়েছে। এবারের ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়েছে, ইসরায়েলের ওপর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার মধ্য দিয়ে। যা এখনো অব্যাহত আছে। এ পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা প্রায় ছাব্বিশ হাজার। যুদ্ধ মানে মানুষের বিরুদ্ধে মানুষের নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা, হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ। এই যুদ্ধ মানুষ কম দেখেনি। গত শতাব্দীতে দুটি বিশ^যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধে বিশে^ ছয় কোটিরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। সে যুদ্ধে সদ্য উদ্ভাবিত পারমাণবিক বোমার সামান্য অংশ ব্যবহার হয়েছে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে। তাতেই মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে কী ভয়ানক পারমাণবিক বোমার প্রতিক্রিয়া। প্রায় সত্তর বছর গত হলেও আজও সেই বোমার ক্ষতিকর প্রভাব অব্যাহত আছে। বর্তমানে শুধু আমেরিকার কাছে যে—পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র আছে, তাতে পৃথিবীকে একশতবার ধ্বংস করা যাবে। এছাড়া রাশিয়া, চীন, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ভারত ও পাকিস্তান তো আছেই। বুনন এ সংখ্যার জন্য কাক্সক্ষা ছিল মানুষে মানুষে যে—যুদ্ধ তার আদি—অন্ত নিয়ে বিশ্লেষণমূলক লেখা। আহ্বানে এমন অনুরোধও ছিল। আশার কথা, কিছু লেখায় যুদ্ধের সামগ্রিক চিত্র কিছুটা হলেও উপস্থাপিত হয়েছে।