আর্বানের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে রাজমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি ইউক্যালিপটাস। ইউক্যালিপটাসের ফাঁকে ফাঁকে সোনালী আলো আর্বানের পিচঢালা পথকে যেন সোনালু ফুলে সাজিয়েছে। যেন আজ ভোর থেকেই বড় কোনো আয়োজন অথবা উৎসব শুরু হবে। আলোর সৌরভে সুরভিত হয়ে আছে গোটা আর্বান। যেন আলো নয় ফুল হয়ে আছে। সোনালী আলো যেন স্বর্ণ কণার ভাণ্ডার, চিকচিক করে অবিরাম। শান্ত হাওয়ার দোলনে সেখানকার ইউক্যালিপটাসগুলো নেশাতুর ভাবে দুলছে। নব্য বেড়ে ওঠা ইউক্যালিপটাস চোখের নজরের বাইরে। তবুও বেড়ে ওঠার দাপটে যেন উঁকিঝুঁকি করে। তারাও হাওয়ায় দুলছে। সেই দোলনে সূর্যের অহামিকা চকচকে আলোগুলো অবস্থান পরিবর্তন করছে। এটাই যেন সকালের সুন্দর, সকালের অলংকার। প্রতিদিনকার মত সব ঠিকঠাক থাকলেও আজ কিছু একটা অন্যরকম মনে হল আর্বানে। আর্বানের সীমানা প্রাচীর ও দালানের দেয়ালগুলোর দিকে তাকালে চমকে উঠতে হবে। অজস্র অদ্ভুত সব গ্রাফিতিতে ভরে আছে দেয়ালগুলো। কে বা কারা যেন এসব করে গেছে, কেউই টের পেল না। নিঃসন্দেহে তারা দুরন্তর এবং এ কাজে পেশাদার। লেখাগুলোর আড়ালে কীসের যেন একটা ইঙ্গিত। কিন্তু তা কারোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হল না। গ্রাফিতিতে বিক্ষিপ্তভাবে লেখা একেকটা শব্দ। ‘উই আর কামিং! ইউর ডেথ ইজ ইম্মিনেন্ট, এইদ্যার বাই আস অর সামওয়ান এলস’। এ যেন মোহিত বৃষ্টিতে কঠিন বজ্রপাতের ভয়। তবুও বৃষ্টির স্নেহে মগ্ন যে বা যারা তার বজ্রপাতের ভয়াবহতাকে উপেক্ষা করে বৃষ্টি বরণে রয়। অথচ এতে বিপদ বাড়ে। ঠিক তাই হয়েছিল আর্বানের বাসিন্দাদের। — হিউম্যান বার্গার অ্যান্ড ব্লাড ক্যাফে। — তকিব তৌফিক।
তকিব তৌফিক- বর্তমান সময়ের পাঠকপ্রিয় একজন লেখক। পাঠক মহলের অনেকেই যাকে বলে ‘বিষাদ যপা লোক’। লেখকের লেখাজুড়ে বিষাদের যে ছাপ তা পাঠকের অন্তরে বেশ গেঁথে যায়। এবং পাঠকের মনে লেখককে বাঁচিয়ে রাখতে এই বিষাদী আকুলতাই যেন যথেষ্ট। ২০১৮ সালের গ্রন্থমেলায় লেখকের প্রথম বই ‘এপিলেপটিক হায়দার’ প্রকাশিত হয়। বইটি মূলত একটি মৌলিক উপন্যাস। ব্যতিক্রমধর্মী শিরোনামের এই উপন্যাসটি লেখকের প্রথম উপন্যাস হলেও সাড়া পায় দ্রুত। এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ছিল সম্পূর্ণ রূপে বাস্তবমুখী। সামাজিক এই উপন্যাসটি মূলত মৃগীরোগ নিয়ে সমাজের কুসংস্কার নিয়ে এবং আত্মশুদ্ধি নিয়ে লেখা হয়েছে। উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় নালন্দা প্রকাশনী থেকে। ২০১৯ সালের গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয় লেখকের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘অধ্যায়’। এটি মূলত প্রেমের উপন্যাস। এবং এই উপন্যাসটি’ই তকিব তৌফিককে অসংখ্য নতুন পাঠকের কাছে লেখক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। যার মধ্যে রয়েছে লেখকের দারুণ সব কথা মালা এবং গল্পের প্রয়োজনে লেখকের সৃষ্ট কিছু বিক্ষিপ্ত কবিতা। একই বছরে লেখক ব্যতিক্রমধর্মী এক বই রচনা করে বসলেন। বইটির নাম 'কাঙালের সংলাপ'। এই বইটি মূলত কথোপকথনের বই। যার শুরু থেকে শেষ শব্দটি সংলাপের মধ্যে দিয়েই হয়। এই ব্যতিক্রম বইটিও রোমান্টিক গল্প নির্ভর। ২০২০ সালের গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয় তকিব তৌফিকের তৃতীয় এবং ত্রয়ী উপন্যাসের প্রথম খণ্ড 'নিদাস্তিয়া'। যা পুরপুরি সফলতা বয়ে আনে লেখক তকিব তৌফিকের জন্য। এবং গল্পের মূল চরিত্র নিদাস্তিয়া'র শেষ পরিণতি থেকে নিষ্কৃতির দাবি উঠে পাঠকমহলে। আর তখন পাঠকমহলে জানানো হয় মূলত এই উপন্যাস একটি ত্রয়ী উপন্যাস। যার আরও দুইটি খণ্ড আগামীতে যেকোনো সময় প্রকাশ পাবে। সেই খণ্ডগুলোতেই হয়তো 'নিদাস্তিয়া' চরিত্রের মুক্তি হবে। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় লেখক তকিব তৌফিক পাঠকের জন্য নিয়ে এলেন কবিতার বই- ক্যাকটাস। ক্যাকটাস কবিতার বইয়ের মধ্যে দিয়ে তকিব তৌফিককে পাঠক একজন কবি হিসেবেও চিনতে শুরু করে। ক্যাকটাস কবিতার বইয়ের কবিতাগুলোর মধ্যে ‘ক্যাকটাস’, ‘সংসার’, চিরকুট সংলাপ’, ‘সাবলেট’, বিচ্ছেদের বর্ষপূর্তি’, ‘লিকারের তেজ;, ‘সময়ের ভোজ’সহ অসংখ্য কবিতা দুই বাংলার অসংখ্য পাঠকের হৃদয় জয় করে। ২০২১ সালের গ্রন্থমেলায় লেখক তকিব তৌফিক পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করেন ‘রিঙ্গণপুর’ শিরোনামের সামাজিক উপন্যাস। যা সমাজের রাজনৈতিক চিত্র যেমন উপস্থাপন করে তেমনই মানুষের গোঁড়ামি থেকে সৃষ্ট উপদ্রব থেকে জীবননাশের চিত্র উপস্থাপন হয়। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসেই লেখক তকিব তৌফিক পাঠকদের জন্য নতুন বইয়ের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। যার নাম ‘একটি হলুদ ফুল’। লেখক তকিব তৌফিক ব্যতিক্রম সব গল্প লেখেন পাঠকের জন্য। তার গল্প বলে দেয়, তিনি পাঠকের স্রোতে গা ভাসিয়ে উপন্যাস, গল্প রচনা করেন না, তিনি এমন সব গল্প রচনা করেন যা পাঠককে কৌতূহলী করে তুলে আর একঘেয়েমিতা থেকে মুক্তি দেয়। লেখক তকিব তৌফিকের জন্মস্থান চট্টগ্রাম জেলায়৷ তিনি ফটিকছড়ি উপজেলার, লেলাং ইউনিয়নে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা মোস্তফা কামাল পাশা এবং মা জোছনা আকতার-এর চার সন্তানের একমাত্র ছেলে সন্তান তিনি। ব্যবস্থাপনা বিষয়ের উপর স্নাতকোত্তর পাশ করা ছেলেটি একদিন বাংলা সাহিত্যের তরুণ লেখকদের তালকায় ভূমিকা রাখবে তা হয়তো তার নিকটস্থ অনেকেই ভাবেনি৷ এখন সেটা তারা দেখতেই অভ্যস্ত। ‘ইউনাইটেড ন্যাশন'স হাই কমিশনার ফর রিফিউজিস (ইউ এন এইচ সি আর)’-এ রেজিষ্ট্রেশন ইউনিটে একজন কর্মী হিসেবে তিনি নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর ত্রয়ী উপন্যাস 'নিদাস্তিয়া'-এর প্রথম খণ্ডে তার কর্মস্থানের কিছুটা চিত্র ফুটে উঠেছে। এছাড়াও তিনি শরনার্থী শিবিরে তুর্কী পাহাড়ে বসে সূর্যের বিদায় বেলায় দিগন্তরেখায় দৃষ্টি রেখে রচনা করেছিলেন 'আমি শরনার্থী শিবির থেকে বলছি' কবিতাটি। বর্তমানে তিনি বেপজার চট্টগ্রাম শাখার অধীনে ডেলমাস এ্যাপারেলস (প্রাঃ) লিমিটেড-এ কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধান ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।