রিকার্দো এলিয়াসার নেফতালি রেয়েস বাসোয়ালতোর জন্ম চিলিতে। এই নামে তারে সম্ভবতআপনেরাচেনেন না। চেনেন পাবলো নেরুদা নামে। টিনেজেই কবি হিসাবে মোটামুটি সাড়া জাগাইছিলেন নেরুদা। আর মরার আগপর্যন্ত সেইটা ক্রমে বাড়তেই থাকছে। মরার পর বাড়ছে আরও বেশি।১৯৭৪ এ চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোর সান্তা মনিকা ক্লিনিকে মারা যান ১৯৭১ এ সাহিত্যে নোবেল পাওয়া পাবলো নেরুদা। কবিতা বা মেনস্ট্রিম শিল্প- সাহিত্যের পাশাপাশি তিনি ছিলেন রাজনীতিবিদ, ডিপ্লোম্যাট, এক্টিভিস্ট। ১৯৭১ এর চিলিয়ান নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে কম্যুনিস্ট পার্টি থিকা নমিনেশনও পাইছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ভোট করেন নাই। সালভাদর আলেন্দেরে সমর্থন জানান ফলে গণতান্ত্রিক উপায়ে চিলির প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হন আলেন্দে। কিন্তু ১৯৭৩ সালেই জেনারেল অগুস্তো পিনোশের করা সেনা অভ্যুত্থানে আলেন্দেরে হত্যা করা হয়। নেরুদার বাড়িতেও হামলা হয়। বইপত্র পুড়াইয়া ফেলা হয় তার। শোনা যায় সেনারা যখন তার বাড়িতে তল্লাশী চালাইতেছিল তখন নেরুদা বলছিলেন, “খোঁজো, খোঁজো এইখানে তোমাদের ভয় খাওয়ানোর মতো একটা জিনিসই আছে… কবিতা।” প্যারিস রিভিউয়ে প্রকাশিত রিটা গিবার্টের নেয়া নেরুদার ইন্টারভিউটার ইংরেজি অনুবাদ করছিলেন রোনাল্ড ক্রাইস্ট আর আমি করছি সেইটার বাংলা। তো ইন্টারভিউটার একটা ইন্ট্রো আছে যা শুরু হইছে নেরুদার একটা কথা দিয়া। কথাটা হইলো, “জীবনরে আমি কবিতা থিকা আলাদা কইরা দেখি নাই কখনও।” সান্তা মনিকায় মারা যাওয়ার দিন নেরুদা তার বউ মাতিলদেকে ফোন করেন, বলেন যে তারা মনে হয় আমারে মাইরা ফেলার জন্যে কিছু একটা দিছে। এরপর দুনিয়ায় অনেক কিছুই ঘইটা গেছে। তার মধ্যে একটা হইলো ফোনটা করার সাড়ে ছয় ঘন্টা পর নেরুদার মৃত্যু। এরপর নানান সমায় তার মৃত্যুর কারণ খুঁজতে পোস্টমর্টেম করা হইছে। যার গড়পড়তা ফলাফল হইলো তারে ব্যাকটেরিয়া ইনজেক্ট কইরা মারাইছিল পিনোশে। নেরুদার কবিতা বা কবিত্ব নিয়া এইখানে কিছু বলতে চাইতেছি না। সেইটা আপনেরাই যাচাই কইরা দেখতে পারবেন। তাই এইসব প্যাচাল। ইন্টারভিউটা মোটাদাগে আমার বেশ ভাল্লাগছে। তবে একটা জায়গা নিয়া ফোকাসটা কম মনে হইছে সেইটা হইলো তার বাল্যকাল। এইখানে তার বলা কথাগুলার প্রেক্ষিতে নেরুদারে ভালই লাগছে আমার। প্রথাগত কোন পেশাজীবি না হইলেও বই থিকা রয়্যালটির টাকায় তিনি বেশ কয়েকটা বাড়ি আর জাগাজমি কিনছিলেন। সেগুলার সবই আবার হয় কম্যুনিস্ট পার্টি না হয় কবি সাহিত্যিকদের খেদমতে খরচ করছেন। অথচ এরপরেও তারে সমসাময়িক লাতিন আমেরিকান সাহিত্য শিবির আক্রমণ কইরা গেছে সারা জীবন। নেরুদা বেসিকালি সিস্টেমে ঢুইকা সিস্টেম বদলানোর ইচ্ছা ওয়ালা বান্দা ছিলেন বইলা মনে হইছে আমার। মানে এলার্জি থিকা কাউরে এড়াইয়া যাওয়ার লোক তিনি ছিলেন না মোটেও। তার এই পলিটিকাল এপ্রোচটাও ভাল্লাগছে আমার।
পাবলাে নেরুদা বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী লেখক পাবলাে নেরুদা ১৯০৪ সালের ১২ জুলাই লাতিন আমেরিকার সুদূর চিলিতে এক রেল-শ্রমিক ও স্কুল-শিক্ষিকার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রকৃত নাম নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসােয়ালতাে। কৈশােরে তিনি পাবলাে নেরুদা’ ছদ্মনামটি গ্রহণ করেন। কারণ ছিল দুটি- এটা সে যুগের জনপ্রিয় রীতি; আর দ্বিতীয়ত, এই নামের আড়ালে কবিতাগুলি নিজের পিতার কাছ থেকে তিনি লুকিয়ে রাখতেন। কবিতা লিখে অল্প বয়সেই খ্যাতি অর্জন করেন। কিন্তু পরে এক বিচিত্র-জটিল ও বর্ণাঢ্য জীবনযাপনে প্রবৃত্ত হয়ে পড়েন। রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে একসময় হয়ে যান বড় রাজনীতিবিদও।। অন্যায় ও হিংসার বিরুদ্ধে, মানুষের সামাজিক ও আত্মিক বন্দিদশার প্রতিবাদে সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। স্পেনের গৃহযুদ্ধ শুরু হলে প্রজাতন্ত্রী দেশপ্রেমিকদের সঙ্গে অস্ত্র হাতে নিয়েছেন। স্প্যানিস শরণার্থীদের জন্যে লাতিন আমেরিকায় সাহায্য-তহবিল সংগঠিত করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বছরগুলিতে মেক্সিকোর রাস্তায় দেয়ালে-দেয়ালে স্তালিনগ্রাদ-বিষয়ে নিজ কবিতার অনুলিপি সেঁটে বেড়িয়েছেন। সালভাদোর আলিন্দের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন সুনিশ্চিত করার জন্যে তিনি নিজের নামও প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। কবিতায় ইউরােপীয় স্যুররিয়েলিজম, সিম্বলিজম ও বাস্তববাদের বিচিত্র প্রভাবের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন তিনি। লিখেছেন পরাবাস্তববাদী কবিতা, ঐতিহাসিক মহাকাব্য, প্রকাশ্য রাজনৈতিক ইস্তাহার। এমনকি কামােদ্দীপনামূলক কবিতার সংকলন টোয়েন্টি পােয়েমস অফ লাভ অ্যান্ড আ সং অফ ডেসপায়ার-এর মতাে গ্রন্থও লিখেছেন। ১৯৭১ সালে তাঁকে সাহিত্যে নােবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস একদা নেরুদাকে ‘বিংশ শতাব্দীর সকল ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি’ বলে বর্ণনা করেছেন। চে গুয়েভারা ১৭ বছর বয়সে নাকি তাঁর প্রথম প্রেমিকাকে নেরুদার কবিতা শুনিয়েছিলেন। তারপর সারা জীবন ধরে তাঁর লেখা সঙ্গে নিয়ে ঘুরেছেন। ১৯৭৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।