রোকেয়া সাখওয়াত হোসেন ( ডিসেম্বর ৯, ১৮৮০ - ডিসেম্বর ৯, ১৯৩২), যিনি বেগম রোকেয়া নামে বেশি পরিচিত, উনার লেখাপত্র অনেক পাবলিশারই বই হিসাবে ছাপাইছেন, অনলাইনেও উনার লেখা এভেইলেবল, খুঁজলে পাওয়া যায়। গল্প-কবিতা-উপন্যাস লেখলেও ‘সুলতানা’স ড্রিম’র বাইরে উনার নন-ফিকশন লেখাগুলাই এখনো পপুলার। সুলতানা’র স্বপ্ন একটা ওয়ার্ল্ড ক্ল্যাসিক আসলে। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসনের বাপ জহীরউদ্দিন মোহাম্মদ আলী হায়দার সাবের ছিলেন রংপুরের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ গ্রামের জমিদার। রোকেয়া উনার আম্মা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরাণী’র লগে কলকাতায় থাকার সময় একজন ইংরেজ মহিলার কাছে কিছুদিন পড়াশোনা করছিলেন। উনার বাপ উনারে ফরমাল পড়াশোনা করতে দেন নাই। ভাই-বইনের কাছ থিকা এবং নিজের আগ্রহে উনি বাংলা, উর্দু, ফারসি, আরবি এবং ইংরেজি ভাষা শিখছিলেন। উনার লেখাতেও এই ভাষার টেক্সটের রেফারেন্স পাইবেন। ১৮৯৮ সালে বিহারের ভাগলপুরের লোক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখওয়াৎ হোসেনের সাথে উনার বিয়া হয়। বিয়ার পরে সাখওয়াৎ হোসেন উনার পড়াশোনার ব্যাপারে হেল্প করেন। ১৯০২ সালে রোকেয়া’র ফার্স্ট লেখা ছাপা হয়। উনাদের দুইটা বাচ্চা হইলেও অল্প বয়সে দুইজনই মারা যায়। ১৯০৯ সালে সাখায়াৎ হোসেন মারা যাওয়ার পরে উনার রাইখা যাওয়া টাকা দিয়া ভাগলপুরে উনি “‘সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল” বানাইছিলেন। কিন্তু ফ্যামিলির চাপে উনারা কলকাতাতে চইলা হইলে ১৯১১ সালে কলকাতাতে একই নামে একটা স্কুল চালু করেন। মূলতঃ এই এক্টিভিজমের কারণেই উনি সমাজে পরিচিত ছিলেন। ১৯৩২ সালে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত উনি উনার সোশ্যাল এক্টিভিজম চালু রাখছিলেন। এইখানে আলাদা কইরা এই চাইরটা লেখা ছাপানোর কারণ মেইনলি তিনটা। এক হইতেছে, বাজারে উনার যা বই পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগই হইতেছে রচনাসমগ্র, প্রবন্ধসংগ্রহ, বা পুরান বইগুলার রিপ্রিন্ট; আর ‘নির্বাচিত’ ‘শ্রেষ্ঠ’ বইলা যেই বাছাইগুলা পাওয়া যায় সেইগুলার বেশিরভাগই রেন্ডমলি সিলেক্ট করা লেখা। মানে, একজন রাইটারের সব লেখা একশ বছর পরে আইসা তো রিলিভেন্ট থাকতে পারে না। আমরা এই চাইরটা লেখারে বর্তমান সময়ের কনটেক্সটে এখনো রিলিভেন্ট বইলা মনে করতেছি, যেই লেখাগুলা আমরা মনে করি, বাংলা-ভাষায় যারা নন-ফিকশন লেখা পড়েন, এই কয়টা লেখা পড়তে পারেন উনার। আর যদি উনার সব লেখা পড়তে চান অন্যসব বইগুলা তো আছেই। সেকেন্ড জিনিস হইলো, কেন এই জিনিসগুলারে রিলিভেন্ট বইলা মনে করতেছি আমরা? উনার চিন্তার একটা ইউনিকনেস হইতেছে, চিন্তা ও কাজের মিল। উনি যেই কাজ করছেন, সেইটার লগে মিলায়া চিন্তা করছেন বা যেই চিন্তা করছেন, সেইটা নিয়া কাজ করছেন এবং এই লেখাগুলাতে উনার চিন্তা ও কাজের মিলের জায়গাগুলা স্পষ্টভাবে আছে। ব্যাপারটা এইরকম না যে, অন্য লেখাগুলাতে নাই, বরং এই চাইরটা লেখা উনার চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে স্পষ্ট একটা ধারণা দিতে পারবে বইলা আমরা মনে করতেছি। উনার চিন্তা ও কাজ একটা সময়ে অনেক মানুশরে ইনফ্লুয়েন্স করছে, নতুনভাবে ভাবাইতে পারছে। এখন যখন ‘নারী-শিক্ষা’ ব্যাপার’টা সমাজে আর ‘অশ্লীল’ ‘নাজায়েজ’ কোন জিনিস না, মনে হইতে পারে যে, উনার চিন্তার রিলিভেন্স মেবি কমে আসছে। কিন্তু উনার লেখাগুলা পড়লে সেইটা ভুল মনে হইতে পারবে বইলা আমরা মনে করি। ‘নারী-শিক্ষা’ জিনিসটারে উনি একটা টুল হিসাবে ভাবছেন, অইটারেই মঞ্জিলে মাকসুদ ভাবেন নাই। তবে উনার লেখাগুলার উদাহারণ, যুক্তি, এইসব জিনিসরে উনার সমাজের সোশ্যাল কনটেক্সট অনুযায়ী ভাবতে পারলে ভালো। কোন লেখা পুরান বইলাই বাতিল হয়া যায় না, বরং অই জিনিসগুলা একটা সময়ে কিভাবে ডিল করা হইতো, আর এখন কিভাবে ডিল করা হইতেছে এর ভিতর দিয়া সামাজিক অভ্যাসগুলার, রীতি-নীতিগুলার, অবস্থার একটা কম্পারিজন মেবি আমরা করতে পারবো। লাস্ট জিনিস হইলো, আমরা মনে করি রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের লেখার, চিন্তা-ভাবনার ইন্টারপ্রিটেশন করতে পারাটা জরুরি। এই কারণে উনার ইম্পর্টেন্ট টেক্সটগুলারে আমরা এভেইলেবল রাখতে চাই যাতে নতুন কাউরে নতুন চিন্তা করতে এই লেখাগুলা হেল্প করতে পারে। এই লেখাগুলা খালি এক ধরণের ‘সাহিত্যিক’ ঘটনাই না, ‘সমাজ-চিন্তার’ ধারণা হিসাবেই হাইটলাইট করতে চাইতেছি আমরা। তো, আসেন, বেগম রোকেয়া লগে কিছু বাতচিত হোক আমাদের, আবার!
(সাহিত্যসেবী মহলে তিনি বেগম রোকেয়া নামেই সমধিক পরিচিত; ৯ ডিসেম্বর ১৮৮০ - ৯ ডিসেম্বর ১৯৩২) হলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক। তাঁকে বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে গণ্য করা হয়। তার প্রকৃত নাম "রোকেয়া খাতুন" এবং বৈবাহিকসূত্রে নাম "বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন"। রোকেয়া জন্মগ্রহণ করেন ৯ ডিসেম্বর ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার অর্ন্তগত পায়রাবন্দ গ্রামে। তাঁর পিতা জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী ছিলেন। তাঁর মাতা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী। রোকেয়ার দুই বোন করিমুননেসা ও হুমায়রা, আর তিন ভাই যাদের একজন শৈশবে মারা যায়। তিনি একজন অসাধারণ নারী।১৮৯৮ সালে ১৮ বছর বয়সে রোকেয়ার বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। বিয়ের পর তিনি "বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন" নামে পরিচিত হন। তাঁর স্বামী মুক্তমনের মানুষ ছিলেন, রোকেয়াকে তিনি লেখালেখি করতে উৎসাহ দেন এবং একটি স্কুল তৈরির জন্য অর্থ আলাদা করে রাখেন। রোকেয়া সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯০২ সালে পিপাসা নামে একটি বাংলা গল্প লিখে সাহিত্যজগতে তার অবদান রাখা শুরু হয়। স্কুল পরিচালনা ও সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রোকেয়া নিজেকে সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রাখেন। ১৯১৬ সালে তিনি মুসলিম বাঙালি নারীদের সংগঠন আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন সভায় তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন। ১৯২৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলার নারী শিক্ষা বিষয়ক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া মৃত্যুবরণ করেন। সেসময় তিনি ‘নারীর অধিকার’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখছিলেন। তাঁর কবর উত্তর কলকাতার সোদপুরে অবস্থিত যা পরবর্তীকালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক অমলেন্দু দে আবিষ্কার করেন । বাংলাদেশের ৭ম বিভাগ হিসেবে রংপুর বিভাগের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে 'রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়' ৮ অক্টোবর ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর ২০০৯ সালে 'নারী জাগরণের অগ্রদূত' হিসেবে তাঁর নামকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়টির বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করেন । উল্লেখ্য , নারীর নামে বাংলাদেশে প্রথম কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এটি।ছাড়াও, মহিয়সী বাঙালি নারী হিসেবে বেগম রোকেয়ার অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসনের জন্য "রোকেয়া হল" নামকরণ করা হয়। রোকেয়ার তাঁর নারীবাদী চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন মতিচূর প্রবন্ধসংগ্রহের প্রথম (১৯০৪) ও দ্বিতীয় খণ্ডে (১৯২২)। সুলতানার স্বপ্ন (১৯০৫), পদ্মরাগ (১৯২৪), অবরোধবাসিনী (১৯৩১) ইত্যাদি তাঁর সৃজনশীল রচনা। তাঁর সুলতানার স্বপ্নকে বিশ্বের নারীবাদী সাহিত্যে একটি মাইলফলক ধরা হয়।