বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের (২৪ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬) প্রবন্ধ বা নন-ফিকশন লেখাগুলা উনার গান, কবিতা ও গল্পের মতন এতোটা সেলিব্রেটেট জিনিস না। কিন্তু একজন রাইটার-এক্টিভিস্ট হিসাবে উনার আর্টের এবং ইন্টেলেকচুয়াল পজিশনটারে বুঝার জন্য এই লেখাগুলা দরকারি ডকুমেন্ট। এই বইয়ের ফার্স্ট পাঁচটা লেখা (বাঙলা সাহিত্যে মুসলমান, আমাদের সাহিত্য স্থায়ী হয় না কেন?, কালা আদমীকে গুলি মারা, ভাব ও কাজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়) উনার ১৯২২ সালে ছাপা হওয়া “যুগবাণী” বই থিকা নেয়া হইছে। লেখাগুলার বেশিরভাগই ১৯২০ সালের দিকে কলকাতার “নবযুগ” পত্রিকায়া ছাপা হইছিল। বইটা ছাপানোর পরে বাজেয়াপ্ত করা হইছিল। পরে আবার ছাপানো হয়। পরের চাইরটা লেখা (মোহররম, হিন্দু-মুসলমান, তরুণের সাধনা, স্বাধীন-চিত্ততা) উনার “রুদ্র-মঙ্গল” বইয়ে একই সময়ে ছাপা হইছিল। এই বইটাও বাজেয়াপ্ত করছিল অই সময়ের গর্ভমেন্ট। “আমার ধর্ম” লেখাটা ছাপা হইছিল “ধূমকেতু” পত্রিকায়, “বড়র পিরীতি বালির বাঁধ” ছাপা হইছিল “সাপ্তাহিক আত্মশক্তি” পত্রিকায়, অই একই সময়ে। “ধর্ম ও কর্ম” লেখাটা ছাপা হইছিল ১৯৪১ সালে “দৈনিক নবযুগ” পত্রিকায় আর “আমার সুন্দর” লেখাটা একই পত্রিকায় ছাপা হইছিল ১৯৪২ সালে। নানান লেখা-পত্রে যা জানা যায়, কাজী নজরুল ইসলামের লেখালেখি’র শুরুই হইছিল নন-ফিকশন বা গদ্য দিয়া। “বাউন্ডুলের আত্মকাহিনী” ছিল উনার ফার্স্ট পাবলিশ হওয়া লেখা। তখন উনি মিলিটারিতে চাকরি করতেন। (মাসিক সওগাত পত্রিকায়, ১৯১৯ সালের মে মাসে।) তারপরে লেখালেখিতে উনি যতদিনই এক্টিভ ছিলেন (১৯২২ - ১৯৪২) অন্য লেখালেখির পাশে কলকাতার পত্রিকাগুলাতে কলাম লিখছেন, স্পেশালি শুরুর দিকে অনেক বেশি এনগেইজ ছিলেন। আর ইংরেজ সরকার যে উনারে জেলে নিছিল, তার একটা বড় কারণ ছিল উনার এই এক্টিভিজম। এখন উনি মারা যাওয়ার পরে এই জায়গাটা যে ইগনোর করা হয় তার একটা বড় কারণ মেবি এইটাও যে, উনার এই লেখালেখি যে কোন অথরিটির জন্যই থ্রেট হিসাবে কাজ করে। আর এইটাই উনার লেখাগুলার সিগনিফিকেন্স হিসাবে আমরা হাইলাইট করতে চাই, যেইটা এখনো রিলিভেন্ট। আর যে কোন লেখা পড়ার সময়ই, পড়ার সময়ের পাশাপাশি লেখার সময়টারেও মাথায় রাখা ভালো। মানে, যখন ২০২১ সালে এই লেখাগুলা আমরা পড়তেছি, তখন মনে রাখতে পারাটা বেটার যে, এই লেখাগুলা আজকে থিকা একশ বছর আগে, কলকাতা শহরে বইসা লেখা। এই কারণে না যে, পুরান লেখা বইলা “অনেক কিছু বুঝে নাই” বা “মাফ কইরা দিতে হবে”; বরং অই সময়ের চিন্তা এবং ঘটনাগুলাও এই লেখাগুলার লগে রিলিভেন্ট। আর আজকে আমরা যখন এই লেখাগুলা পড়তেছি, তখন আমাদের সময়ের চিন্তা এবং ঘটনাগুলা দিয়া কানেক্ট করতেছি। এই কনটেক্সট’টা আলাদা হওয়ার ফলে লেখার মানে’গুলা উল্টা-পাল্টা হয়া যাইতেছে না, বরং নতুনভাবে রি-ক্রিয়েট হওয়ার বা পড়তে পারার পসিবিলিটির মধ্যে চইলা আসতেছে আসলে। তো, আসেন, কাজী নজরুল ইসলামের লেখাগুলা আমাদের সময়ের কনটেক্সটে আবার পড়ার চেষ্টা করি আমরা। খোশ আমদেদ!
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী, সুরকার ও প্রবন্ধকার। নজরুলের বাল্যকাল কেটেছে দুঃখ-দুর্দশায়। তাই তাঁর ডাকনাম ছিলো দুখু মিয়া। তাঁর বৈচিত্র্যময় শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের মক্তবে। পিতৃহীন হওয়ার পর তিনি পড়ালেখা ছেড়ে যোগ দেন লেটোর দলে, যেখান থেকে তিনি কবিতা ও গান রচনার কৌশল রপ্ত করেন। পরবর্তীতে এক বছর ময়মনসিংহের দরিরামপুর হাই স্কুলে পড়ে পুনরায় চুরুলিয়ায় রানীগঞ্জের শিয়ারসোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন, এবং সেখানে তিন বছর অধ্যয়ন করেন। প্রবেশিকা পরীক্ষার আগেই তাকে পড়ালেখা ছাড়তে হয় যুদ্ধে যোগদানের জন্য। যুদ্ধের দিনগুলোতে নানা জায়গায় অবস্থান করলেও তার করাচির সৈনিকজীবনই উল্লেখযোগ্য, কেননা সেসময়েই তার প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় ‘বাউণ্ডেলের আত্মকাহিনী’ নামক গল্প প্রকাশের মাধ্যমে। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমূহ’র বিষয়বস্তু বিবিধ। তবে কাজী নজরুল ইসলাম এর বই-এ সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক যন্ত্রণা এবং সাম্যবাদের ধারণা প্রকটভাবে স্থান করে নিয়েছে। রাবীন্দ্রিক যুগে তার সাহিত্য প্রতিভা উন্মোচিত হলেও তার সৃষ্টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমগ্র এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘রিক্তের বেদন’, ‘দোলনচাঁপা’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘সাম্যবাদী’, ‘সর্বহারা’, ‘প্রলয়শিখা’ ইত্যাদি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নজরুল ‘সাপ্তাহিক লাঙল’, দ্বিসাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধূমকেতু’র সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।