এলিস মুনরোকে আমি ভালবাসি৷ যেকোনো লেখকই তার নিজের মতো লেখকদের খুইজা বেড়াইতে থাকে৷ আমার যখন ফিকশন লেখার ইচ্ছা জন্মাইতে থাকে, তখনোই মুনরোর কিছু গল্প পড়তে পারছিলাম। উনারে মনে হইছিল নিজের মনের মতো লেখক। মানে গল্প নিয়া আমার যা যা ইচ্ছা ও বোঝাপড়া, তার অনেককিছু পাইছিলাম এলিস মুনরোর গল্পগুলাতে। এইজন্য এলিস মুনরোর সাক্ষাতকার অনুবাদ করতে পারাটা আমার জন্য বড় একটা ঘটনাই ছিল। এই সাক্ষাতকারে মুনরো নিজের লাইফ নিয়া অনেক কথা বলছেন, কথা বলছেন লেখালেখির সাথে তার এতোদিনের সম্পর্ক নিয়াও। একজন লেখকের লেখাপত্র বুঝার জন্য ওর জীবন নিয়া জানা অনিবার্য কিছু না। কিন্তু কখনো কখনো এইগুলা আমাদের গল্পের বোঝাপড়ায় কাজে লাগতে পারে। মুনরোর ক্ষেত্রে কথাটা একটু বেশি খাটে। কারণ মুনরোর গল্পগুলা খুবই মিমেটিক, কাফকা বা বোর্হেসের মতো না৷ উনার গল্পে কাহিনী ইম্পর্টেন্ট। কাহিনী নিজেই রিডারের লগে কথা কইতে থাকে। নিজের অভিজ্ঞতা আর আশেপাশের জগত নিয়াই বেশি লেখছেন মুনরো। এইজন্য অন্টারিওর আশেপাশের এলাকাগুলা তার গল্পে খুবই ইম্পর্টেন্ট। মুনরোরে অনেকে ফকনারের মতো রিজিওনাল লেখকও বলেন। এই অভিজ্ঞতার উপর একটু বেশি নির্ভরশীলতার কারণেই হয়তো উনার গল্পে একই চরিত্ররা বিভিন্ন জায়গায় ঘুইরা ফিইরা আসে। যেমন কয়েকটা গল্পের মধ্যেই থাকে একই লাইব্রেরিয়ানের ক্যারেক্টার। আবার মুনরোর গল্পে প্লেস খুবই ইম্পর্ট্যান্ট একটা ব্যাপার৷ উনি একজায়গায় বলছিলেন মফস্বলের প্রান্তিক মানুষদের নিয়াই উনার বেশিরভাগ গল্প লেখা৷ মুনরোর নিজের লাইফের বেশিরভাগ সময়ও থাকছেন অন্টারিওর এক মফস্বলে। এইসব ল্যান্ডস্কেপ আর মানুষেরা তার গল্পের পরতে পরতে আছে। এইসব কিছুর জন্যই উনার গল্পে অটোবায়োগ্রাফিক্যাল উপাদান বেশি৷ তবে কোন লেখারে শুধুমাত্র অটোবায়োগ্রাফিক্যাল হিসেবে পড়ার যে ঝামেলা, সেটার কথাও উল্লেখ করছেন উনি এই সাক্ষাতকারে৷ আসলে যেকোনো ভালো লেখাই তো খালি অভিজ্ঞতার অনুকরন না, বরং অভিজ্ঞতার সাথে সাথে মাত্রাজ্ঞান, এস্থেটিক সেন্স, লিটারারি সেন্সসহ আরো অনেককিছুর মিশ্রন। কেউ কেউ উনারে তুলনা করেন চেখভের সাথে। এক অর্থে এটা সত্যি। যে কেউই উনার গল্পে চেখভিয়ান জিনিসপাতি খুইজা পাবেন। মুনরোর ক্যারেক্টারগুলার মধ্যে যে আইরনির হদিস পাওয়া যায় মাঝেমাঝে, সেটা অনেকসময় চেখভের কথাই মনে করায়া দেয়৷ তবে আমার মনে হয় মুনরো গল্পে অনেক ডিটেইলস দিতে পছন্দ করেন, উনার গল্পে মানুষের লাইফের একটা বৃহৎ ক্যানভাস থাকে, যেখানে চেখভ তুলনামূলক বেশি কৌশলী আর মিনিমালিস্ট৷ এইজন্য মুনরো গল্পে সিম্বল বা খুব সূক্ষ্ম জিনিসগুলা হাজির করেন না সবসময়, পুরা গল্পটারেই একটা কন্টিনিউয়াস লাইফের অংশ আকারে হাজির করেন। মুনরোরে নিয়া আরো অনেককিছুই বলা যায়। উনারে নিয়া কইতে গেলে আমি কিঞ্চিত আবেগীও হইয়া পড়ি। অনেকদিন ধইরাই উনার গল্পগুলার সাথে বাইচা আছি। যেকোনো কিছু পড়া আসলে একটা রিফ্লেক্সিভ প্রক্রিয়া। লেখা অথবা অনুবাদও তাই৷ সুতরাং, এখানে আমিই শুধু অনুবাদটা করি নাই, এই অনুবাদটাও আমারে করছে। তাসনিম রিফাত