বাংলা-মিডিয়ামের ‘মাদরাসা-ট্যাবু’ হইতেছে কলোনিয়াল লিগাসির একটা ঘটনা মিডল-ক্লাস ফ্যামিলিতে বড় হইছেন কিন্তু ‘বস্তি লোকদের মতো কথা বলতেছে’ টাইপ কথা শুনেন নাই - ব্যাপারটা রেয়ার হওয়ার কথা। মানে, একটু গলা উঁচা কইরা কথা কইতেছেন, বা একটা গাইল দিতেছেন মানে হইতেছে ‘বস্তির লোকদের মতো’ কথা বলতেছেন মিডল-ক্লাস ফ্যামিলি’তে থাইকা এইরকমভাবে কথা তো আপনি বলতে পারেন না! তো, বাংলাদেশের এই মিডল-ক্লাস যতোটা না একটা ইকনোমিক পজিশন না, তার চাইতে বরং একটা কালচারাল আইডেন্টিটি। এই ক্লাস’টা এমার্জ করছে ১৯৪০ থিকা ১৯৭০ এই সময়ের মধ্যে, মেইনলি ঢাকা শহরে, তবে কলকাতারে সেন্টার মাইনা, আইকন মাইনা। (এইটা বেটার বুঝা যাবে মুহাম্মদ শহীদুল্লা'রা যখন ১৯৬৪/৬৫ সালে বাংলা একাডেমি থিকা ‘আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’ বাইর করেন, বাংলা ডিকশনারি না বানায়া; কারণ কলকাতাতে তো আছেই একটা!) ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার রাজধানী কলকাতা থিকা দিল্লীতে ট্রান্সফার হওয়ার ভিতর দিয়া কলকাতার পলিটিক্যাল গুরুত্ব শেষ হয়। ঢাকা, যা মোগল আমলের একটা সেন্টার - এই অঞ্চলের, কলোনিয়াল আমলে কলকাতার একটা রিজিওনাল প্রটো-টাইপ হয়া-ই ছিল। তো, ঢাকার যেই মিডল-ক্লাস কালচার সেইটা তৈরি হইছে কলোনিয়াল কলকাতার ছাঁচ দিয়াই। যার ফলে ১৯৪৭’র সময় এবং তার পরেও রাষ্ট্র হিসাবে আলাদা হইলেও ‘ভালো বাংলা’ ‘শুদ্ধ বাংলা’ বলতে কলকাতারেই বুইঝা আসতেছি আমরা। (শেইম!) কলকাতার লোকজন খারাপ বা অইখানের শিল্প-সাহিত্যের লোকজন হিন্দু - এইগুলা কোন ইস্যু না, বরং খেয়াল করার ঘটনা হইতেছে এসথেটিক্যালি কোন জিনিসগুলারে উনারা হাইলাইট করেন। হিন্দুধর্মের লোক হিসাবে উনারা উনাদের কালচারের জিনিসপত্র পূজা করা, ধূতি পরা, সিঁদুর দেয়া - এইসব জিনিসরেই হাইলাইট করবেন, কারণ উনাদের ডেইলি লাইফে এইগুলা আছে। কিন্তু দেখবেন বাংলাদেশের ‘শিক্ষিত মিডল-ক্লাসের’ কাছে নামাজ পড়ার চাইতে পূজা করা’রে সফিটটিকেটেড ও সেক্যুলার জিনিস বইলা মনেহয়, লুঙ্গির চাইতে ধূতি’রে এলিট লাগে এবং অবভিয়াসলি শাখা-সিদুঁর গোলামির সাইন না এতোটা যতোটা হিজাব! মানে, ‘খাঁটি মুসলমান’ হওয়ার পরেও হিন্দু কালচারের জিনিসগুলা যে সুপিরিয়র লাগে আপনার কাছে এইগুলা জাস্ট ‘ভাল্লাগার’ ব্যাপার না, বরং এসথেটিক্যাল একটা কন্সট্রাকশন। আমাদের ন্যায়-নীতির ধারণা এই এসথেটিকসের উপর ভর দিয়াই তৈরি হয়। যেমন ধরেন, যেইটারে আমরা বলি ধর্মের আচার, রিচুয়াল সেই জিনিসগুলা ধর্ম থিকা আলাদা কোন জিনিস না, বরং ধর্মরে অই জায়গাগুলা দিয়াই পারসিভ করি আমরা। তো, এইরকম না যে, ধর্ম হইতেছে এথিকস আর ধর্মের রিচুয়ালস হইতেছে এসথেটিক্স। একটা কালচারে জিনিসগুলা বরং উল্টা; আপনার এসথেটিক্স, ভালোলাগা/খারাপলাগা সরাসরি না হইলেও একভাবে তৈরি কইরা দেয় নৈতিকভাবে কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ, সেই বিচারের জায়গা। (মাদরাসার লোকজন আন্দোলন করতেছে, তাইলে তো ঠিক না! ঢাকা ভার্সিটি'তে করতেছে, ও তাইলে ঠিকাছে! এইরকম।) এই কারণে যে কোন কালচারে এসথেটিক্সটা কোর। আর ধর্মও রিচুয়ালগুলারে চেইঞ্জ করতে পারে, কিন্তু এইরকম প্রাকটিসের ভিতর দিয়াই, এসথেটিক্যাল জায়গার ভিতর দিয়াই অনেকদিন ধইরা সারভাইব কইরা আসতেছে। (এই আলাপ’টা এইখানেই পজ দিলাম।) তো, কলকাতার এই এসথেটিকস বাংলাদেশে আসছে এবং এস্টাবলিশড হইছে বাংলা-মিডিয়ামের ‘শিক্ষা’র ভিতর দিয়া। আমাদের রাষ্ট্র, মিডিয়া এখন বাংলা-মিডিয়ামে পড়াশোনা করা এই মিডল-ক্লাসের দখলে। উনাদের কালচাররেই কনজিউম করি আমরা। এই বয়সের লোকজন যখন স্কুলে গেছেন, পড়াশোনা করছেন তখনো দেশে ইংলিশ-মিডিয়া আসে নাই, এতোটা ছড়ায়া পড়ে নাই, গত ১০/১২ বছরে যা হইছে। কিন্তু তখনো মাদরাসা ছিল। কেমন ছিল মাদরাসাগুলা? আমার ধারণা, মিডল-ক্লাসের পারসেপশনে, মাদরাসা হইতেছে এতিম ও গরিবদের ‘কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও অ-বৈজ্ঞানিক’ শিক্ষার জায়গা। যারা ‘জানে না’, যারা ‘বুঝে না’, এবং ‘প্রকৃতপক্ষে’ ‘মানুশ’ হওয়ার সুযোগ পায় না। কারণ তারা ‘বাংলা-মিডিয়ামে’ পড়ে নাই। (খুবই আজব ব্যাপার খেয়াল করবেন, মিশনারি স্কুলগুলা কিন্তু ‘খুবই ভালো’! অইখানে ধর্মীয়-শিক্ষা কোন সমস্যা না।) অনেক ‘বাংলা মিডিয়ামের’ এইরকম ধারণাও আছে যে, ব্রিটিশ’রা আসার আগে, আগের দিনের ঘটনা হইতেছে এই মাদরাসা; স্কুল হইতেছে ‘আধুনিক ঘটনা’; অথচ হিস্ট্রিক্যালি এই দুইটা খুবই কাছাকাছি ঘটনাই হওয়ার কথা।… মানে, বাংলা-মিডিয়াম যেহেতু ডমিনেন্ট ধারা বাংলাদেশে, এই ন্যারেটিভগুলাই সমাজে চালু আছে সবসময়। তো, ঘটনা’টারে ঠিক ‘একমুখী শিক্ষা-ব্যবস্থার’ জায়গা থিকা দেখতে গেলে আরো বড় ভুল করবো আমরা। বরং আমার রিকোয়েস্ট হইতেছে, এসথেটিক্যাল কন্সট্রাকশনের জায়গা থিকা দেখার। বাংলা-মিডিয়াম যেই এসথেটিক্যাল জায়গা থিকা অপারেট করে, দুনিয়ারে দেখে, রিয়ালিটি বইলা বুঝে মাদরাসা-শিক্ষার জায়গাতে ঘটনাগুলা একইরকম না। অবভিয়াসলি, দুইটা জায়গাই অনেক চেইঞ্জের ভিতর দিয়া গেছে এবং যাবে। কিন্তু আমার পয়েন্ট হইতেছে, দুইটা আলাদা আলাদা এসথেটিকসের জায়গা। এইটা এক নাম্বার পয়েন্ট। সেকেন্ড পয়েন্ট হইতেছে, এই ডিফরেন্সের জায়গাগুলারে কেমনে মোকাবিলা করা হয়, সেইটা নিয়া। শুরু’র দিকে যেইটা বলতেছিলাম, কলকাতার এসথেটিকসটারেই কিন্তু নিছে ঢাকার লোকজন, এই কারণে না যে অইটা বেটার; বরং যেইটারে আমরা ‘ভালো’ ‘বেটার’ এবং ‘রুচিশীল’ বইলা ভাবি সেইটা অই কলকাতার এসথেটিক্যাল একটা ঘটনা। কারণ অই লিগাসি’টারে আমরা ধইরা নিছি, রিড করি একটা ‘ইতিহাসের ধারা’ হিসাবে। যেই ট্রাপ’টা থিকা আমরা এখনো বাইর হইতে পারি না। তো, আমার ডর’টা হইতেছে, এই মাদরাসা-পিপল, যারা ডমিনেন্টেড হইতেছে, কালচারালি অপ্রেসড হইতেছে ‘বাংলা-মিডিয়াম’ দিয়া তাদের এসথেটিক্যাল জায়গায় ‘ভালো’ ‘বেটার’ ও ‘রুচিশীলতার’ এক্সাম্পল হিসাবে এইরকম একটা জায়গারেই নিজেদের মঞ্জিলে মাকসুদ বানায়া নেন কিনা; আর যদি এইরকমই হয়, সেইটা হবে (মেবি হইতেছেও ) খুবই সুইসাইডাল একটা ঘটনা। মানে, ঘটনা’টা এইটা না যে, কলকাতার এসথেটিক্স খারাপ, কিন্তু সেইটা ঢাকার এসথেটিক্স কেমনে হয়? হইতেছে, কারণ কলোনিয়াল লিগাসির জায়গা থিকা আমরা বাইর হইতে পারতেছি না। এই কলোনিয়াল লিগাসির জায়গা থিকাই বাংলা-মিডিয়াম মনে করে মাদরাসা একটা ‘পশ্চাতপদতার’ (কলোনিয়াল বাংলা!) জায়গা। এখন ঢাকার যেমন কলকাতার কাছে খারাপ-ভালো প্রমাণ করার, সার্টিফিকেট নেয়ার কিছু নাই, বরং বলতে পারা দরকার তোমাদের ভালো আর আমাদের ভালো একই জিনিস না, একইভাবে মাদরাসারও বাংলা-মিডিয়ামের কছে প্রমাণ করার কিছু নাই, বরং সমাজের ভিন্ন ভিন্ন এসথেটিক্যাল জায়গাগুলা যেন তাদের ডিফরেন্সগুলাসহই টিইকা থাকতে পারে, সেই জায়গাগুলারে স্পষ্ট করা দরকার। আর এইটা তখনই সম্ভব, যখন সমাজে ‘সব মানুশ এক’ এই ধারণার বিপরীতে ‘সব মানুশই যার যার মতো আলাদা’ - এই বিশ্বাসের জায়গাতে পৌঁছাইতে পারবো আমরা; নতুন একটা এসথেটিক্যাল কন্সট্রাকশনের দিকে যাইতে পারা’র মতো কঠিন কাজটারে কাজ বইলা ভাবতে পারবো আমরা।…