‘ল্যাটিন আমেরিকান লেখকদের মধ্যে, শুধুমাত্র কলম্বিয়ার গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজই ব্রাজিলের পাওলো কোয়েলহোর চেয়ে বেশি পঠিত।’ -দ্য ইকোনমিস্ট ‘দ্য আলকেমিস্ট’ লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। -নিয়ইয়র্ক টাইমস প্রতি কয়েক দশকে এমন একটি বই প্রকাশিত হয় যা তার পাঠকদের জীবন আমূল পরিবর্তন করে দেয়। পাওলো কোয়েলহোর ‘দ্য অ্যালকেমিস্ট’ এমনই একটি বই- যা বিশ্বব্যাপী ৩০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে এবং ৮৫টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ‘দ্য অ্যালকেমিস্ট’ ইতোমধ্যেই একটি আধুনিক ক্লাসিকের মর্যাদা অর্জন করেছে। মাত্র দুই সপ্তাহে লেখা ‘দ্য আলকেমিস্ট’ একটি রূপকধর্মী উপন্যাস যার নায়ক সান্তিয়াগো একজন তরুণ আন্দালুসিয়ান মেষপালক। সে তার জন্মস্থান স্পেন থেকে স্বপ্নে দেখা গুপ্তধন অন্বেষণের জন্য ভ্রমণ শুরু করে। ভ্রমণের এক পর্যায়ে মরূদ্যানে পৌঁছানোর পর, সান্তিয়াগো ফাতিমা নামের এক আরব মেয়ের প্রেমে পড়ে, যাকে সে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তবে মেয়েটি বালকের যাত্রা শেষ করে ‘নিজস্ব কিংবদন্তি’ অর্জনের পরেই তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে বলে জানায়। বালকটি প্রথমে হতাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু শেষপর্যন্ত সে ফাতিমার কাছ থেকে শিখেছিল যে সত্যিকারের ভালোবাসা থেমে থাকে না। ভ্রমণপথে পিরামিডের কাছে গুপ্তধনের সন্ধানে মিশর গমন করলে সেখানে মরুভূমিতে একজন আলকেমিস্টের সাথে সান্তিয়াগোর দেখা হয় এবং এভাবে কাহিনি আবর্তিত হতে থাকে। ‘দ্য অ্যালকেমিস্ট’ একটি চিরস্মরণীয় উপন্যাস-যা শেখায় হৃদয়ের কথা শোনার অপরিহার্য জ্ঞান এবং সর্বোপরি আমাদের স্বপ্ন অনুসরণ করতে অনুপ্রেরণা যোগায়। ‘দ্য অ্যালকেমিস্ট’ আধুনিক দিনের ‘দ্য লিটল প্রিন্স’-এর মতো। একটি সর্বোত্তম এবং সহজ বই। -মিলোরাড প্যাভিক (সার্বিয়া) ‘দ্য অ্যালকেমিস্ট’ জাদু, স্বপ্ন এবং গুপ্তধন সম্পর্কিত একটি অসাধারণ বই যা আমরা বিভিন্ন জায়গায় খুঁজি এবং শেষমেশ তা আমাদের দোরগোড়ায় পেয়ে যাই। -সোনট্যাগে ম্যাডোনা-আকটুয়েল (জার্মানি)
ব্রাজিলিয়ান ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহো ডি’সুজা ১৯৪৭ সালের ২৪ আগস্ট দেশটির রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে জন্মগ্রহণ করেন। একই শহরে তার শিক্ষাজীবনের শুরু এবং বেড়ে ওঠা। আইন বিষয়ে কিছুদিন পড়াশোনার পর ভ্রমণের নেশায় তা আর শেষ করতে পারেননি। ঐ সময়টা ভবঘুরের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন মেক্সিকো, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, চিলিসহ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর পরপরই ছোটবেলার স্বপ্ন বই লেখাকে বাস্তবে রূপ দেন। ১৯৮২ সালে ‘হেল আর্কাইভস’ নামক বই দ্বারা সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তবে এই প্রবেশ আকর্ষণীয় ছিলো না। এমনকি দ্বিতীয় প্রকাশিত বই ‘প্রাক্টিক্যাল ম্যানুয়েল অব ভ্যাম্পায়ারিজম’ তার নিজেরই অপছন্দের তালিকায় ছিলো। ১৯৮৭ সালে ‘পিলগ্রিমেজ’ এর পর ১৯৮৮ সালে প্রকাশ পায় তার আরেক বই ‘দ্য আলকেমিস্ট’। পাওলো কোয়েলহো এর বই হিসেবে ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইটিই মূলত কোয়েলহোর লেখক-জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তবে ‘৮৭ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো ব্রাজিলের একটি ছোট প্রকাশনা সংস্থা থেকে, যারা ন’শোর বেশি কপি ছাপাতে নারাজ ছিলো। ১৯৯৩ সালে একই বই আমেরিকার বিখ্যাত প্রকাশনী হারপার কলিন্স থেকে প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে হুলুস্থুল পড়ে যায়। বইটি এখন পর্যন্ত মোট ৮০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যা পাওলো কোয়েলহো এর বই সমূহ এর মাঝে অনন্য। কোয়েলহোর কাহিনীগুলোর বিশেষত্ব হলো তার কল্পনাশক্তির জাদুকরী মোহ। কোনো সরল গল্প দ্বারা তিনি গভীর জীবন দর্শনবোধ পাঠকদের মাঝে সঞ্চালন করতে চান, এবং সফলতার সাথে করেও এসেছেন। পাওলো কোয়েলহো এর বই সমগ্র-তে স্থান পাওয়া উপন্যাসগুলোর মাঝে ‘দ্য আলকেমিস্ট’, ‘ব্রিদা’, ‘দ্য ডেভিল এন্ড মিস প্রাইম’, ‘দ্য জহির’, ‘দ্য ভ্যালকাইরিস’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ‘দ্য মাডি রোড’, ‘দ্য রং গিফট’, ‘দ্য জায়ান্ট ট্রি’, ‘দ্য ফিশ হু সেভড মাই লাইফ’, ‘আই উড র্যাদার বি ইন হেল’, ‘রিবিল্ডিং দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর মতো ছোটগল্পগুলোতেও দর্শনের প্রমাণ মেলে, যা পাঠকদের গভীরভাবে ভাবতে শেখায়। পাওলো কোয়েলহোর আরেক পরিচয় তিনি গীতিকার। বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্রাজিলীয় গানের জনক তিনি।