ইয়াসমিন সুলতানা বালিশের পাশে হাত রেখে চমকে উঠলেন৷। বালিশের পাশটা ফাঁকা। ডায়েরিটা নেই। কাল রাতে তো তিনি এখানেই রেখেছিলেন। ইয়াসমিন সুলতানা মনে করবার চেষ্টা করলেন৷ কাল শোবার সময়ে তিনি ডায়েরিটা পড়েছিলেন কিছুক্ষণের জন্য। তারপর? আলমারিতে চাবি ঝুলছে৷ তার মানে তিনি ডায়েরিটা আলমারিতে রেখেছিলেন। কিন্তু চাবি তো তার বালিশের তলায় রাখবার কথা? হয়তো মনের ভুলে রাখা হয়নি৷ ইয়াসমিন সুলতানা উঠে গিয়ে আলমারি খুললেন৷ ডায়েরিটা আলমারিতেও নেই। তিনি দ্রুত চিন্তা করতে লাগলেন। তার ঘরের দরজা সবসময় খোলা থাকে৷ এমনি ভেজানো থাকলেও সিটকিনি দেওয়া থাকে না। তিনি না ডাকলে তার ঘরে আসবার কারো পারমিশন নেই। কারো দরকার হলে, তাকে বলে আসতে হয়। ইয়াসমিন সুলতানা চিন্তিত হয়ে ঘর থেকে বের হলেন। বাড়ির সবাই এখনো জাগেনি। নিচতলায় মা আর নার্স সুরিয়াকে দেখা যাচ্ছে। সুরিয়া মাকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে রেখে সকালের ব্যায়াম করাচ্ছে। ইয়াসমিন সুলতানা ছাদে গেলেন। বাড়ির গেট কি খোলা? কেউ কি বেরিয়েছে? ছাদে রোদেলা বসে আছে৷ সে সকালের মিষ্টি রোদে ইয়োগা করছে। তার উপস্থিতি টের পেতেই রোদেলা মিষ্টি হেসে বললো, “সুপ্রভাত বড়ফুফু! আজ দিনটা অনেক সুন্দর!” ইয়াসমিন সুলতানা রোদলার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। “ফুফু, দেখে যাও আজ কতগুলো টিউলিপ ফুটেছে।” ইয়াসমিন সুলতানা টিউলিপ দেখতে গেলেন না, ব্যস্ত হয়ে ঘরে এলেন। সমস্ত ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজলেন। ডায়েরিটা কোথাও নেই। আশ্চর্য! এই ডায়েরি নেবে কে? ইয়াসমিন সুলতানার ভয় হতে থাকলো, ডায়েরিটা চুরি হয়ে বাড়ির বাইরের কারো হাতে চলে যায়নি তো? তিনি সাথে সাথেই ফোন করলেন দারোয়ানকে৷ “হ্যালো ইকামত!” “জি! আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম।” “বাড়ি থেকে কেউ বেরিয়েছে সকালে?” “জি না, ম্যাডাম।” “আমি না বলা পর্যন্ত কেউ যাতে বাড়ি থেকে বের না হতে পারে৷ কেউ বেরোতে গেলেই আমাকে ফোন করবে।” “জি আইচ্ছা ম্যাডাম।” ইয়াসমিন সুলতানা তার ছোটবোন জেসমিন সুলতানাকে মেসেজ করলেন, “জরুরি মিটিং আছে। বাড়ির সবাইকে থাকতে বলে দে।” ইয়াসমিন সুলতানা ওযু করে এসে জায়নামাজে বসলেন। এখন তিনি একাধারে দরুদ পাঠ করবেন। মন অশান্ত হয়ে আছে খুব। মনটা শান্ত করে ডায়েরি খুঁজবার কথা ভাবতে হবে৷ আচ্ছা, ডায়েরিটা শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে তো?
এই একটা ব্যাপার লিখতে এলেই আমার মাথার ভেতর ফাঁকা হয়ে যায়। ব্যক্তিগত তথ্যগুলো কেন জানি মানুষকে জানাতে ইচ্ছে করে না। আরেকটু গুছিয়ে বললে, বলার সাহস পাই না। তবে আজ ঠিক করেছি নিজের কিছু কথা বলবোই। আচ্ছা, লিখা ভালো লাগার জন্য কি লেখকের পরিচয়টা আদৌ জরুরি? আমার মনে হয় না। নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলি, এমন অসংখ্য লিখা আমার ভালো লাগার আছে, যাদের লেখককে আমি দেখিনি। হয়তোবা লেখকের ছবি বইয়ের পেছনে ছিলও। কিন্তু আমি দেখিনি। কারণ লিখার মাধুর্য আর গল্পের চরিত্র আমায় টেনেছে, লেখক নয় । ফেলুদা যখন পড়ি, আমি ভেবেছি ওটা তোপসেরই লিখা অন্য কারো নয়। সত্যজিৎ রায়ের পরিচিতির জন্য আমি কিন্তু একটুও ব্যাকুল হইনি। শার্লক হোমস যখন পড়ি, আমি স্যার আর্থার কোনান ডয়েলকে একদিনও চিনতে চাইনি। বরং বারবার আমার কল্পনায় শার্লক হোমস সামনে এসেছে। বারবার আমি লিখা আর গল্পের চরিত্রতে মুগ্ধ হয়েছি। একজন লেখকের জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া কি জানেন? তাঁর লিখার জন্য পাঠকের ভালোবাসা। সুতরাং তৃধা আনিকার ব্যক্তিগত জীবন আপাতত লুকানোই থাক। তার চেয়ে বরং তৃধা আনিকা তার গল্পে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র সেজে নিজের মনের কথাগুলো অনায়াসে বলে যাক । দেখা যাক না, কি হয়। পাঠক তার লিখাকে কেমন ভালোবাসে, দেখি!