কবিতার দিন ফুরিয়ে আসছে কিনা? যে হারে প্রযুক্তির প্লাবনে ভাসছে মানুষ, ডুবছে ভার্চুয়াল দুনিয়ায়, ছুটছে ক্যারিয়ারের পেছনে, নাচছে পুঁজির তালে, গাইছে করপোরেটের সুরে, তাতে এমন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। মানুষের হাতে অখণ্ড অবসর কই কবিতা পড়ার? অলস সময় কই কবিতা-নিমগ্ন হওয়ার? দু দণ্ড শান্তি কই কবিতার পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসার? মানুষ আজ বড্ড ব্যস্ত শশের মতো। ঘুরছে কেবল চরকির মতো। কীসের যেন তাড়া তার। কোথায় যেন এক্ষুণি পৌঁছাতে হবে তাকে। চৌরপর দিনভর শুধু দৌড়াচ্ছে মানুষ। এইসব দৌড়ক্লান্ত মানুষের জীবনে কবিতার স্থান কোথায়? তাই প্রশ্ন উঠছে, নটে গাছটি মুড়োল, কবিতার দিন কি ফুরোল? না, কবিতার দিন সম্ভবত ফুরাবে না। যতদিন আলো হাওয়া, গাছ, নদী, মাটি, মানুষ, প্রকৃতি থাকবে, তত দিন কবিতা থাকবে। কারণ কবিতার আরেক কাজ সময়কে ধরে রাখা। যতদিন সময় প্রবহমান আছে, তত দিন কবিতা আছে। সময় যেদিন থেমে যাবে, যেদিন থামবে কোলাহল, সেদিন কবিতার অনন্তযাত্রাও থামবে। তার আগে পর্যন্ত কবিরা লিখে রাখবেন সময়কে। কবি রিক্তা রিচি এই বইয়ে সেই কাজই করেছেন। লিপিবদ্ধ করেছেন মূলত সময়কে। পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় কালো অক্ষরের আড়ালে আপনি পাবেন সময়যাপন, সময়ক্ষেপণ, সময়ের আর্তনাদ, সময়ের আহ্লাদ। ক্লেদাক্ত, পঙ্কিল, পাথুরে এক সময় পার করছি আমরা। সেই সময়কে আজ থেকে দশ বছর পর পেছন ফিরে দেখতে চাইলে এই বইয়ের দ্বারস্ত হতে হবে। কারণ সময়ের নিরঙ্কুশ বয়ান আছে এই বইয়ে। আছে প্রেম, কাম, ভালোবাসা, মুগ্ধতা, অভিমান, আবদার। সন্ধ্যার অন্ধকারে মুখোমুখি বসে দু দণ্ড হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো ভাষা আছে রিক্তা রিচির কলমে। হৃদয়কে শীতল করার মতো বহু পঙক্তি আছে এই বইয়ে। 'একদিন খুব ভোরে বিস্ময় চিহ্নের মতো তুমি চলে এসো, প্রতিদিন বালিশের পাশে দুঃখগুলো জমা রেখে ঘুমিয়ে যাই, আমার একটা ব্যক্তিগত তুই চাই, আমাকে লিখে রাখো ছেলে... এমন কোমল আবদার যিনি করতে পারেন, তাঁকে লিখে না রেখে উপায় আছে?
রিক্তা রিচির জন্ম ৮ ই নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার নবীপুর গ্রামে। ছোট থেকে ঢাকায় বসবাস। ২০১০ সালে মোহাম্মদপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এস এস সি এবং ২০১২ সালে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হোম ইকোনোমিকস কলেজের 'সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনরশীপ' বিভাগ থেকে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। পড়াশোনা শেষে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি সমকাল পত্রিকার লাইফস্টাইল ও ফ্যাশন ট্যাবলয়েড শৈলীর দায়িত্বে আছেন। রিক্তা রিচি কবিতা লিখতে ভালবাসেন। নিয়মিত লিখছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন ম্যাগাজিন, পত্রিকা ও জাতীয় দৈনিকসহ ভারতের বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও পত্রিকায়। ২০১৬ সালে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'যে চলে যাবার সে যাবেই'। ২০১৮ সালে বইটির দ্বিতীয় মুদ্রণ বের হয়। ২০১৯ সালের একুশে বইমেলায় ‘অগ্রদূত অ্যান্ড কোম্পানি’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ 'বাতাসের বাঁশিতে মেঘের নূপুর'। ২০২০ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘রোদের গ্রাফিতি বোঝে না রক্তাক্ত বুলেট’। ২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলায় দেশ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ 'আমাকে লিখে রাখো'।