‘আমি ঝরার রুমে গেলাম। ঝরা ওর বেডে শুয়ে আছে। দু’জন নাসর্কে ওর পরিচর্যার জন্য রাখা হয়েছে। স্যালাইন পুশ করা হয়েছে ঝরাকে। ব্যথায় কাতরাচ্ছে ঝরা। ওর চোখেমুখে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম লেগে আছে। আমাকে দেখে হাসি হাসি মুখে ঝরা বললো, আপা তুমি এসেছো? হ্যাঁ, ঝরা তোর কেমন লাগছে? খুব ভালো লাগছে। খুব আনন্দ লাগছে। আমার ছেলে হবে। ব্যথা কি আছে? হ্যাঁ, আছে। খুব ব্যথা আছে। তবে এতে আমি কিছু মনে করছি না আপা। বাচ্চা হবার সময় এ-রকম ব্যথা হয়-ই। সবার ক্ষেত্রেই হয়। হয় না আপা? হ্যাঁ হয়। ছেলের মা হবো এটুকু ব্যথা সহ্য করবো না? ঝরা তুই চুপ কর। তোর কষ্ট হচ্ছে। হোক কষ্ট। তুমি এসেছো আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। একজন নার্স ঝরাকে নিষেধ করলো, আপনি কথা বলবেন না, প্লিজ; বারণ আছে। ঝরা ঝাঁঝিয়ে উঠলো, কেন? কথা বলবো না কেন? আমি তো সিরিয়াস কোনো রোগী না। আমি আপার সাথে কথা বলছি। ঝরাকে বললাম, ঝরা আমি যাই। নার্স আমাকে যেতে বলছে। ঝরা বাধা দিল, না আপা, তুমি যাবে না। আর তুমি তো ছেলে মানুষ না। থাকলে অসুবিধা কী? তাছাড়া আমার তো এখনও অনেক দেরি আছে, তুমি থাকো। তোমার সাথে কথা বললে আমার ব্যথা কমে যাচ্ছে। পরাগ কোথায় আপা?’ ‘দুপুর ঠিক একটার দিকে একটা ফর্সা ফুটফুটে পুত্রসন্তান জন্ম দিয়ে মারা গেল ঝরা। যখন মারা গেল তখন আমি ক্লিনিকে ছিলাম না। আমার সবচেয়ে আদরের এবং প্রিয় একজন মানুষের মৃত্যু যন্ত্রণা স্বচক্ষে দেখতে পারবো না বলে আগেই চলে এসেছিলাম বাসায়।
আব্দুর রাজজাক বকুল লেখালেখির শুরু নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে, কিশোর বেলায়। প্রথমে সাংবাদিকতা পরে সাহিত্য চর্চা। মূলত গদ্যের মানুষ তিনি। লেখেন গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক। নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র। বাবা ডা. আছির উদ্দিন প্রাং ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের হেড মাস্টার। মা মাহমুদা খাতুন ছিলেন গৃহিনী। বর্তমানে দুজনেই স্বর্গবাসী। চার ভাই এক বোনের মধ্যে লেখক সর্বকনিষ্ঠ। জন্ম বগুড়া শহরের হাজরাদিঘী গ্রামে। পড়াশোনার তাগিদে ছোটবেলাতেই গ্রাম ছাড়েন লেখক। ভর্তি হন শহরের স্কুলে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন কৃতিত্বের সাথে। মাস্টার্স পাস করেন সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে। চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জেলা শহরে থাকলেও লেখালেখি নিয়মিতই চালিয়ে গেছেন। ছোটবেলা থেকে দেশের বিভিন্ন পত্রিকা ও লিটলম্যাগে নিয়মিত লিখলেও সে তুলনায় তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা অপ্রতুল। এর পূর্বে প্রকাশিত হয়েছে চারটি উপন্যাস ও তিনটি গল্পগ্রন্থ। ভিজ্যুয়াল বিষয়ের প্রতি লেখকের দুর্বলতা ছোটবেলা থেকেই। নির্মাণ করেছেন একটি চলচ্চিত্র ও দুটি প্রামাণ্য চিত্র। ‘দৈনিক আজকের কাগজ’ থেকে পেয়েছেন রচনা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার, নওগাঁ সাহিত্য পরিষদ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট, বগুড়ার প্রাকৃতজন থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষ্যে লেখক পুরস্কার, জেলা প্রশাসক বগুড়া কর্তৃক লেখক সম্মাননা স্মারক ক্রেস্ট, ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘ত্রৈমাসিক সাহিত্য দিগন্ত’ থেকে কথাসাহিত্যে পুরস্কার। একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবেও ব্যাপক পরিচিতি আছে তাঁর। তিনি বগুড়া জীবনানন্দ পরিষদ-এর সভাপতি, ঢাকা সাহিত্য পরিষদ-এর সহসভাপতি ও বগুড়া লেখক চক্র-এর গণসংযোগ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।