প্রচন্ড কোনো এক প্রিয় মানুষের সামনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে, যার হাতের মুঠোয় এক গুচ্ছ রক্ত রাঙা গোলাপ। তার দৃষ্টি জুড়ে কেবল এক মহাকাব্য, আর বুকের মাঝে ওই প্রিয় মানুষ হারিয়ে যাবার ভয়, আশংঙ্কা আর আর্তনাদ। নীরব ওই আর্তনাদে এই পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছে প্রবল কষ্ট-বর্ষার স্রোত। কষ্টের তুমুল প্রলয়ংকারী ঝড়ে সৃষ্টির সমস্তকিছু একে একে চুরমার হয়ে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। পা জোড়া ভেঙে যেতে চাইছে। এ কেমন বিষণ্ণতার বোঝা ওর উপরে ভর করেছে? মনের ভারে কোমর আহত! শিরদাঁড়া কুঁকড়ে আসছে। ব্যথায় চিৎকার জুড়েছে শরীর, ভেঙে লুটিয়ে পড়তে চাইছে ধরণীর চরণে। তবুও মানুষটা প্রচন্ড স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রিয় মানুষটার অচেনা দৃষ্টির সম্মুখে। দু’চোখে জন্ম নিয়েছে অশ্রু-ঝর্ণা। উপায়হীন মানুষটার কন্ঠে ফুটে ভিক্ষের অনুরোধ—'এভাবে চলে যাবে আমায় একা ফেলে? থেকে যাওয়া যায় না শেষবারের মতোন, আর একবার? একজীবন?’ এ অনুরোধ যেনো ওই প্রিয় মানুষের শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে এক অসহনীয় পাপ! পাপী এই অনুরোধের প্রতিউত্তরে ওই প্রিয় মানুষটার মাঝে জন্ম নিয়েছে ‘অনলের বিধ্বংসীরূপী এক দেবীর ছায়ামূর্তি!’ রুক্ষতার এই প্রতিমূর্তিতে মানুষটার সব ভাষা হারিয়ে যায়, মহাকাব্যের মৃত্যু হয়। মানুষটা দাঁড়িয়ে থাকে, নিস্তব্ধ, নির্বাক, নীরব। শেষবারের মতোন, একজীবনের মতোন প্রিয় মানুষটা থেকে যায় না। ফিরে আসে না আর সেই চেনা প্রিয় মানুষ হয়ে। মানুষটা চলে যায় অন্য পথে, দূরত্ব বাড়ে প্রতি পদক্ষেপে। প্রিয় মানুষটার প্রস্থানে কাব্যিক মানুষটার চোখে আবার এক মহাকাব্যের জন্ম হয়। অথচ যাকে নিয়ে এই কাব্যের জন্ম, যার জন্য এই কাব্যের জন্ম, যিনি এই কাব্যের জন্ম দিয়ে গেলেন, ওই প্রিয় মানুষটা আর নেই। প্রিয় মানুষ হারিয়ে যায়, মহাকাব্য হয়ে যায়— “নষ্ট কাব্য বেজন্মা।”
আমি জন্মেছি রুদ্রের শহর, মোংলাতে। আমার ছেলেবেলা কেটেছে এই মফস্বলেই, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। আমার বাবা প্রচন্ড সুন্দর করে গল্প গড়তে পারতেন। শুক্রবার, ছুটির দিনের দুপুরে "আম্মু"র হাতে খাওয়ার পরের ভাত ঘুম হতো 'আব্বু'র গল্প শুনে। আব্বু ছবি আঁকতেন, কবিতা লিখতেন, আবৃত্তি করতেন! আরো কতো কি! আববুর কিছুটা গুন হয়তো আমি পেয়ে গেছি। A আমার লেখালেখির শুরুটা হয় ২০১২ সালে। আমার প্রথম পাঠক আমার ছোটবোন 'নাহার।' এরপর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু আধটু লিখতে শুরু করি 'পথ হারা পথিক' নামে। এখন অবশ্য এই নামে লেখা হয়না আর। লিখতে ভালো লাগতো, তাই লিখতাম। কখনো বই বের হবে, সেটা না ভাবলেও মনের কোথাও সুপ্ত একটা ইচ্ছে ছিলো- আমার সৃষ্টিরা প্রকাশ পাক। আজ দীর্ঘ ১১ বছর পরে সেটা পূর্ণ হতে যাচ্ছে! এটা কি ধৈর্য্য? যদি তাই হয় এই ধৈর্য্য আমি আমার মায়ের থেকে পেয়েছি। মাকে দেখে শিখেছি কিভাবে ধৈর্য্যের সাথে কঠিন সময় পাড়ি দিতে হয়। আমার যত ভালো দিক আছে সেগুলো এই দুটো মানুষের থেকেই পাওয়া। আব্বু বেঁচে থাকলে হয়তো আমার এই অর্জনে আমার থেকেও বেশ খুশি হতেন। আম্মুকে বই প্রকাশের কথা জানাইনি এখনো। একেবারে বই নিয়ে গিয়ে হাতে দিয়ে একদম চমকে দেবো ভেবেছি। আবু বকর সিদ্দিক রাজ। - শনিবার | ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩। ভোর ৪টা ৩৪ মিনিট। (বিঃদ্রঃ পাঠকদের থেকে প্রায়ই একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। 'আপনার পুরো নাম কী?' আমি প্রতিবারই বলেছি, সময় হলে কোনো একদিন পুরোপুরি প্রকাশ পাবো। আজ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেই কথা রেখেছি।)