তাহমিনা শিল্পী বাংলা কবিতার ঐতিহ্যের পথের সারথি। আমাদের চারপাশের জগতকে তিনি তুলে ধরেন পরম মমতায়। যে-সব প্রতিপার্শ্ব তাকে জড়াজাড়ি করে থাকে, তার নতুন অর্থ নির্মাণে তিনি সদা-তৎপর। তার প্রেম ভালোবাসা, অনুরাগ-বিরাগ, নিত্য কথা বলা- তার নিজের জগতের সাথে। মনোযোগী পাঠক সহজেই ধরতে পারবেন- তার রয়েছে এক নিজস্ব নির্মিতি। আধুনিক কবির অস্থির চিত্ত তার নিজস্ব জগত থেকে খুব বিচ্যুৎ করতে পারেনি। তার কবিতার ঘর-গৃহস্থালি তার নিজ¯^। এতটাই নিজস্ব সম্প্রতি যে সব চিরন্তন বিষয়াদি কবিরা ভুলতে বসেছে, সে সব দিয়েই শিল্পী তৈরি করেন তার কবিতার রেসিপি। খোঁজেন ঘাস-ফড়িংয়ের কাছে ঠিকানা, স্বপ্ন রথে ভেসেও ঘরের গাঁথুনিটা শক্ত করে ধরতে চান তিনি; ঈদ ও পূজার উপাচার, মায়াময় বৃক্ষ, জ্যোৎস্নায় ভেজা উঠান, ঘাসফুলের গড়াগড়ি- এসবই তার কবিতায় বাক্সময় হয়ে ওঠে। আধুনিক জীবনের সঙ্কট তার কবিতাকে প্রাত্যহিক প্রেম-বাৎসল্য থেকে দূরে ঠেলে দিতে পারেনি। প্রথম পাঠে চট করে তার কবিতার এই সব বৈশিষ্ট্য খুব ধরা দিতে চায় না, কিন্তু তার কবিতার সাথে কিছুদূর ভ্রমণ করলেই জড়িয়ে ধরে- তার কুঞ্জবীথি; হার্দ্যকি আমন্ত্রণ- উদ্রেক করে ‘মুগ্ধতার ক্ষিধে’, ‘শিকড়ের জড়তা ভেঙে কথা বলে ওঠে মায়াবৃক্ষ।’ এ-সব তার মতো করে বুঝে নিতে গেলে একান্ত আপন করে ধরা দেয়- মনে হয় এই তো, এগুলো তো হতে পারে, আমাদের কবিতার ঘর-গৃহস্থালি, বাংলা কবিতার ঐতিহ্যের সারথি। - মজিদ মাহমুদ
০২ নভেম্বর ১৯৭৭ মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলা সদরে পৈত্রিক বাড়িতে তাহমিনা শিল্পীর জন্ম। পিতা তৈয়ব আলী মিয়া এবং মাতা মমতাজ জাহান নিলু। তিন বােনের মধ্যে তিনি সবার বড়।। তাহমিনা শিল্পী ছােটবেলা থেকেই কবিতা লেখা শুরু করেন। স্থানীয় পত্রিকা, স্কুলের বার্ষিকীতে কবিতা লেখা শুরু করলেও সপ্তম শ্রেণিতে থাকাকালীন বাংলাদেশ বেতারের কলকাকলি অনুষ্ঠানে নিয়মিত ভাবে কবিতা প্রচারের মাধ্যমে তাঁর আত্মপ্রকাশ হয়। তাহমিনা শিল্পী কবিতার পাশাপাশি ছােটগল্প, সমসাময়িক ঘটনাবলী ও সামাজিক সচেতনতা বিশেষ করে নারী ও শিশু অধিকার বিষয়ে ফিচার লিখে থাকেন । বিভিন্ন অনলাইন জার্নাল ও জাতীয় দৈনিকে তার লেখা বেশ কিছু কবিতা গল্প ও ফিচার ছাপা হয়েছে। ব্যক্তিজীবনে তিনি বিবাহিত। স্বামী শামসুদ্দীন আহমেদ হীরা এবং একমাত্র ছেলে শারার যুবায়ের অর্পণ। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে ভূগােল ও পরিবেশ বিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাকোত্তোর ডিগ্রি করেন। বর্তমানে তিনি বেসরকারী স্যাটেলাইট টেলিভিশন বাংলাভিশনের সম্প্রচার ও প্রকৌশল বিভাগে কর্মরত আছেন।