শশী বলল, চলুন, এবার আমরা চোখ বুজে মনে মনে বৃষ্টিতে ভিজি। আনিস বলল, শশী, মনে মনে কেন, চলো আমরা এখন সত্যি সত্যি বৃষ্টিতে ভিজি। শশী খানিকটা অবাক হলো। সে ভাবতে পারেনি আনিস তাঁর সঙ্গে সত্যি সত্যি বৃষ্টিতে ভিজবে। সে এক মুহূর্ত দেরি না করে আনিসের হাতটা টেনে দোতলা থেকে হাসপাতালের মাঝখানের সেই লনে এসে দাঁড়াল। ওরা নামতেই যেন বৃষ্টির ধারা বেড়ে গেল। নারিকেল গাছের চিরল পাতার গা বেয়ে বৃষ্টির জল একটু বেশিই পড়তে শুরু করল। শশী বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কেমন নদীর ধারার মতো কলকল করে হেসে উঠল। আনিস মুগ্ধ হয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে রইল। তার তৎক্ষণাৎ মনে হলো, শশীর সৌন্দর্য বৃষ্টিতে ভিজে বিকশিত হয়ে যেন একটা অপার্থিব পরিবেশের সৃষ্টি করছে। সেই অপার্থিব পরিবেশের দিকে কেন জানি বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যাচ্ছে না। দু’জন যুবক-যুবতীর প্রেম-ভালোবাসা ও অনেকগুলো মায়াগন্ধা বিকেলের গল্প নিয়েই উপন্যাসের কাহিনি এগিয়ে গেছে। উপন্যাসের একস্থানে এসে মায়াগন্ধা বিকেলের গল্প ছাপিয়ে গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে বিপন্ন মুক্তিযোদ্ধা বদির আহমেদ মাস্টার ও মধুরিমা সাহার কাহিনি। এদিকে শশীর আরেক নাম যে মধুরিমা, তা আনিস আবিষ্কার করে দু'বছর পর। অতীত ও বর্তমানের দুই মধুরিমা, একই রকম অবস্থান। কিন্তু মাঝখানে ব্যবধান পঞ্চাশ বছরের। একদিকে বদির মাস্টার ও অন্যদিকে আনিস। বদির মাস্টার যখন বলে ওঠেন, ‘আনিস, তুই আমার মতো ভুল করিস নে!’ কথাটা সত্যি আনিসকে ভাবায়। বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ ও বিপন্ন মানুষের আর্তিও এই উপন্যাসে সবিস্তার ডালপালা মেলেছে।