গল্পটা সেজুতির। গল্পটা সূচির। গল্পটা সেজুতি ও সূচির মত হাজারো নারীর জীবনের- যারা কখনো পরিবার, কখনো সমাজ অথবা সমাজের তৈরী তথাকথিত নিয়মের জালে আবদ্ধ হয়ে নিজেদের জীবনকে বয়ে নিয়ে চলে এক অজানা গন্তব্যের পথে। যেখানে তার ইচ্ছা ভালোলাগা মন্দলাগা মূল্যহীন। জীবন নামের সেই গন্তব্যহীন সর্পিল চলার পথে বাঁকে বাঁকে শত আঘাত সহ্য করে সে সকল নারী। পরনের কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে সেই আঘাতের চিহ্নগুলো লুকিয়ে রাখে, রক্তের অশ্রু ঝরায়, হাজারো তিক্ততাকে সহ্য করে হাসি মুখে এই সমাজকে অথবা সমাজের মানুষদের এটা বোঝাতে ব্যস্ত থাকে- তার জীবনটা কত সুখের। বাস্তবতা কি সত্যিই তাই। সাজানো গোছানো সংসার ও পরিপাটি চেহারার পেছনের সত্যিটা কি এতোটাই সুখের? যেটা বাইরে থেকে দেখতে পাওয়া যায়। সাজানো গোছানো স্বচ্ছ কাচের দেয়ালে ঘেরা ঘরের জীবনগুলো কতটা দমবদ্ধ অনুভূতির মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকে সেটা আমরা কতটাই বা জানতে পারি॥ সুখের সংসার নামক নাটকের মঞ্চে সুখী পরিবারের অভিনয় করতে থাকা হাজারো নারীর সেই দমবদ্ধ অনুভূতির কথাই “কাচের ঘর” গল্পের মূল উপজীব্য বিষয়। কাচের ঘর উপন্যাসটি একজন উচ্চ শিক্ষিতা গৃহিনী সেজুতির গল্প- যে জীবনের সকল প্রতিকূলতাকে মেনে নিয়ে স্বামীর সংসারকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল। নিজের শিশু কন্যা সন্তানটিকে বুকে নিয়ে সে জীবনের সকল কষ্টকে হাসি মুখে বরণ করে নিয়েছিল। কিন্তু স্বামী সজলের দ্বারা নিগৃহীত ও প্রতারিত হয়ে একসময় ভুল ভেঙেছিল তার। নিজের আত্মসম্মানে ভীষণভাবে আঘাত পেয়ে সে বাধ্য হয়েছিল তার একমাত্র মেয়েকে সাথে নিয়ে স্বামীর সংসার ছেড়ে বেরিয়ে আসতে। পরিস্থিতির কারণে এক সময় নিজ সিদ্ধান্তে স্বামীকে ডিভোর্স দেয় সেজুতি। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মেয়েকে মানুষ করার সিদ্ধান্ত নেয় সে। যে কারণে পরিবার ও সমাজের কাছে তাকে প্রতিনিয়ত হেও প্রতিপন্ন হতে হয়েছে। তবুও নিজের মনোবল ধরে রেখে সকল প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে জীবনের পথে এগিয়ে চলতে থাকে সেজুতি। কিন্তু ভাগ্যের খেলা সেটা সবার চিন্তার বাইরেই থেকে যায়। ভাগ্য যেন তার সাথে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভাঙনের খেলায় মত্ত থাকে। আর সেই ভাঙনের খেলায় ভাগ্যের কাছে পরাজয় বরণ করে সেজুতির জীবন। এই উপন্যাসে সেজুতি যেন সেই সকল নারীদের প্রতিনিধিত্ব করছে যারা অন্যের ইচ্ছে-খুশির সিদ্ধান্তে নিজেকে দম বদ্ধ কাচের ঘরে বন্দী করেও সবার মনের ঘর থেকে দূরেই থেকে যায়। সেজুতি এই সমাজের খুব সাধারণ একটি নারী চরিত্র যাকে প্রতিনিয়ত কখনো বাবা কখনো ভাই অথবা কখনো স্বামী সন্তানদের সিদ্ধান্তের সামনে নিজের ইচ্ছা ও খুশিকে মাটি চাপা দিতে হয়। কিন্তু সেই সাধারণ নারী সেজুতি যখন প্রতিবাদী হয়ে নিজের পথ খুঁজে নেয় তখন তার জীবনের গল্প “কাচের ঘরের” মত উপন্যাসের বিষয়বস্তু হয়ে উঠে।
২০১৮ সালে প্রথম কবিতার বই প্রকাশের মাধ্যমে তার প্রকাশনার সূচনা হয়। এ পর্যন্ত তার আটটি বই প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকের অনুপ্রেরণা আর ভালোবাসা সাথে নিয়ে তিনি সামনের দিনগুলোতে আরও অনেক নতুন নতুন লেখা নিয়ে এগিয়ে যেতে আগ্রহী। কানিজ ফাতেমার জন্ম কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারায়, বাবার নাম জনাব আবুল কালাম ও মায়ের নাম মিসেস আনজেরা বেগম। নিজ জন্মস্থান মফস্বল শহরেই তার শৈশব ও কৈশর কাটে এবং কাটে তার স্কুল ও কলেজ জীবন। অতঃপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, ঢাকা থেকে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ২০০৫ সালে বিএসএস (অনার্স) ও ২০০৬ সালে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। অবসর সময়ে তার বই পড়তে ও গান শুনতে ভালো লাগে। ব্যক্তি জীবনে তিনি এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জননী। আর স্বামী জনাব মোহা: রফিকুল ইসলাম বর্তমানে সরকারের একজন উপসচিব হিসেবে কর্মরত।