১৯৫৯ সালের ২৮ অক্টোবর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন হেমায়েত উদ্দিন। চাকরি জীবনে চট্টগ্রাম-যশোর হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের এবোটাবাদের আর্মি মিউজিক স্কুলে কাজ করেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ১৯৭১ এর ঐতিহাসিক স্বাধীনতা সংগ্রামের উদাত্ত আহ্বনে ফলে স্ত্রী হাজেরাকে নিয়ে মাতৃভ‚মি এ বঙ্গে চলে আসেন। ২ ইবিআর জয়দেবপুরে যোগদান করলেও সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবলোকন করছিলেন। এরই মধ্যে ১৯ মার্চ জয়দেবপুরের ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পাকিস্তান আর্মি। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহানজেব আরবার এর নির্দেশ উপেক্ষা করেন হাবিলদার হেমায়েত উদ্দিন। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ও ১৯ মার্চ বাঙালি হত্যার প্রতিবাদে হেমায়েত মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত আরো পাকা করেন। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলে ধৈর্যের বাধ ভেঙে যায়। শুরু হয় যুদ্ধ। মুক্তির যুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জনের জন্য মরণজয়ী বাংলাদেশ অর্জনের যুদ্ধ। মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত অর্জনের যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে হেমায়েত নিজ নামে ‘হেমায়েত বাহিনী’ প্রতিষ্ঠা করে ১৫ মে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটরাতে পাকিস্তানি পতাকার পরিবর্তে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে হেমায়েত জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন। টুঙ্গিপাড়ায় অবরুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর বাবা-মা-সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের মাদারীপুর জেলার শিবচরে নিরাপদে পৌঁছে দিয়ে জীবন রক্ষা করেন। রামশীল যুদ্ধ বা গোপালপুর রাজাকার ক্যাম্প পতন ইতিহাসের শুধু এক বা দুটি অনন্য অধ্যায় নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধকালীন হেমায়েতকে ও তাঁর বাহিনীকে বিচার করতে হলে ছুটতে হয় পাকিস্তানের এবোটাবাদ ত্যাগের অত্যুজ্জ্বল কাহিনিতে। জয়দেবপুর থেকে কাপাসিয়া, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, যশোর, খুলনা, বরিশাল ও ফরিদপুরের বিল-ঝিল, পথ-প্রান্তর, নগর-বন্দর ও গ্রাম-গঞ্জের দুঃসহ যন্ত্রণাবিদ্ধ যুদ্ধ সময়ে। কাল-কালান্তরের কাছে হেমায়েত তাই পরীক্ষিত বীর, কিংবদন্তি তুল্য এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বরিশাল অঞ্চলে তাঁর বাহিনীকে সম্প্রসারিত করে গঠন করেন বাহিনী।