বাবুলের প্রতিটি গল্পই এক-একটি তথ্যচিত্রের প্রাথমিক বিস্তার। যেখানে ছড়িয়ে আছে বাবুলের নিজস্ব ভুবন, চিন্তা, চেতনা, দর্শন এবং বিশ্বাস। যে ভুবন থেকে বাবুল উঠে এসেছেন; সেই ভুবনকেই এখন দূর থেকে পুনরায় স্মৃতি আর কল্পনার সম্মিলনে একটি শ্রোতাশ্বিনী নদীতে ভাসিয়েছেন তিনি। এই গল্পগুলির প্রতিটি পরতে পরতে এবং বাবুলের বেড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে একটি সরল এবং সবল দৃষ্টির উন্মোচন ঘটে। যা আমাদেরকেও নিয়ে যায় প্রাচীন অথবা শৈশবের সেই অমানিশাকালকে খুঁজে পাওয়ার অস্থিরতায়।। সংকলনে মোট ৯টি গল্পের মধ্যে ৬টি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের, ১টি উত্তাল ঊনসত্তুরের, ১টি সমাজ এবং রাজনীতি বিষয়ক এবং ১টি নারীর অবস্থানগত বিভীষিকার ভয়ঙ্কর রূপ। এই গল্পগুলির ভেতরে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে আমাদের নারী-সমাজ-রাজনীতি এবং মুক্তিযুদ্ধের ছায়া-প্রতিচ্ছায়া। যে ছায়া এখনও এবং আগামীতেও আমাদেরকে, সকলকে মনে করিয়ে দেবে আমাদের অস্তিত্বের প্রবল প্রতিরূপ। গল্পগুলো তোমার আমার তেমনি একটি গল্পের জাগতিক সংকলন। উপসংহারে বলতে হয়, দর্শনগত বিচারে মনে হচ্ছে বাবুল বর্তমানকালে এসে খানিকটা বিভ্রান্ত। তবে পথ-হারা নন; এমন কি পথ যাতে কেউ না হারায় তিনি তা-ই মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাঁর গল্পের প্রতিটি স্তরে স্তরে এবং বিন্যাসে। এই বিন্যাস বা নির্যাস হয়তো আমরা গ্রহণ করবো, হয়তো নয়। তবে গল্পগুলির মর্মমূলের বিস্তার যেন ঘটে আমাদের মননে এবং চেতনে সেইটুকু তো বলতে পারি।
নাট্যশিল্পের অনিত্যতা সত্ত্বেও নাট্যমঞ্চায়ন রেখে যায় নানা স্মৃতিচিহ্ন; স্মারক-প্রকাশনা, মুদ্রিত সামগ্রী, আলােকচিত্র, লিখিত ভাষ্য ইত্যাদি কত কিছু।। নাটকের এবং নাট্যসংস্কৃতির পরিচয় পেতে এইসব তথ্য-উপাত্তের গুরুত্ব অপরিসীম, অথচ নাটক ঘিরে উৎপাদিত ও প্রকাশিত বিবিধ তথ্যসমূহ সংরক্ষণে। আমরা চরমভাবে উদাসীন ব্যক্তিগত, সাংগঠনিক ও জাতীয়ভাবে প্রতিফলিত এমনি ঔদাসিন্য ও অবহেলার শিকার হয়েছে নাট্যতথ্যবাহী উপকরণাদি।। এই অভাব মােচনে ভালােবাসা ও দায়বদ্ধতা থেকে এ নাটকের তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উপস্থাপনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন বাবুল বিশ্বাস । ১৯৮৬ সাল থেকে নিরলসভাবে নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত। এই কাজের ফসল ‘বাংলাদেশ থিয়েটার আর্কাইভস'। তাঁর ভাণ্ডারের বিভিন্ন সম্পদ নিয়ে ইতিমধ্যে করেছেন ৪১টি প্রদর্শনী। বর্তমান সংকলন-গ্রন্থ সেই শ্রমসাধ্য কাজেরই আরেক প্রকাশ। তিনি থিয়েটার' পত্রিকার সংযুক্ত সম্পাদক, ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব থিয়েটার। (ইউনেস্কো)-এর দ্বিবার্ষিক প্রকাশনা ‘ওয়াল্ড অব থিয়েটার'-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। বর্তমানে তিনি ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট-এর পাবলিকেশন্স কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। ইতােমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গ্রন্থ ‘আর্ট অব বাংলাদেশ থ্র হানড্রেড থিয়েটার পােস্টার্স। নাটক লিখেছেন হনন, পােড়ামাটি, ঠিকানা। কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন জাকারিয়া স্মৃতিপদক, ফৌজিয়া ইয়াসমিন শিবলী পদক ও মহাকাল সম্মাননা।