কুরআন-হাদীসের মর্মানুসারে মুসলিমরা পরস্পর ভাই ভাই। তাদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক হবে ভালোবাসা ও সহযোগিতার। এই ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের মূলভিত্তি হলো ঈমান। যে কেউ ঈমান আনবে, সে এই মহান ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবে; চাই সে যেকোনো বর্ণেরই হোক কিংবা যেকোনো অঞ্চলেরই হোক অথবা যেকোনো ভাষাভাষী হোক। সকল মত ও বর্ণ-নির্বিশেষে মুসলিম জাতি একতাবদ্ধ হয়ে পুরো বিশ্বে নিজেদের মিশন পরিচালনা করবে—এটিই ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। . ইসলামের ঐক্যের চিরন্তন শিক্ষাকে মজবুতভাবে ধারণ করেই মুসলমানরা দুনিয়ার বুকে অসাধ্য সাধন করেছে। তারা অতি অল্প সময়ের মধ্যে দুনিয়ার বুকে সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক নবযুগের দ্বারোদঘাটন করেছে। কিন্তু যখনই মুসলমানরা ঐক্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অনৈক্য ও দলাদলির পথে পা বাড়িয়েছে; গোষ্ঠীগত, জাতিগত, মতাদর্শ ও মত-পথের বিভাজন-দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে ইসলামের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তখনই তারা সব গৌরব হারিয়ে একটি হতভাগা হতোদ্যম জাতিতে পরিণত হয়েছে। তারা সভ্যতা-সংস্কৃতিতে পিছিয়ে পড়েছে। . আলিমগণই উম্মাহর পথপ্রদর্শক। অতএব, উম্মাহর কাক্সিক্ষত ঐক্য সাধনে আলিমগণই অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন—এটাই প্রত্যাশিত। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আলিম সমাজের সেই বহুল প্রতীক্ষিত ঐক্যের রূপরেখা অঙ্কন এবং ঐক্যের পথে যাবতীয় অন্তরায় দূরীকরণে বইটি একটি মাইলফলক বিবেচিত হবে বলে আমরা আশা রাখি, ইনশাআল্লাহ।
ড, আহমদ আলী ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার লােহাগাড়া উপজেলাধীন পশ্চিম কলাউজান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রজীবনের শুরু থেকে প্রতিটি স্তরে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে বি.এ. (অনার্স) ও মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জনসহ পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। অতঃপর সৌদি আরবের রিয়াদস্থ কিং সাউদ ইউনিভার্সিটি থেকে আরবি ভাষার শিক্ষক প্রশিক্ষণের ওপর উচ্চতর ডিপ্লোমা অর্জন করেন।
কর্মজীবনের শুরুতে তিনি চুনতী হাকীমিয়া আলিয়া মাদরাসা, চট্টগ্রাম-এর মুহাদ্দিস ও উপাধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যােগদান করেন। বর্তমানে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে প্রফেসর হিসেবে নিয়ােজিত আছেন এবং বাংলাদেশ ইসলামিক ল' রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা। থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক গবেষণা পত্রিকা ‘ইসলামী আইন ও বিচার'-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক।
তিনি দেশেবিদেশে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে গবেষণাপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। ইতােমধ্যে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে তাঁর 'ষােলটি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলাে- খলীফাতু রাসূলিল্লাহ আবু বাকর আস-সিদ্দীক (রা.), বিদ'আত (১ম-৪র্থ খণ্ড), মুসলিম লিপিকলা: উৎপত্তি ও বিকাশ, আধুনিক আরবী কাব্যের ইতিহাস ১ম খণ্ড, ইসলামের শাস্তি আইন, তাযকিয়াতুন নাফস (আত্মশুদ্ধি), ইসমাতুল আম্বিয়া, ইসলামে বাসস্থানের অধিকার ও নিরাপত্তা, ইসলামের দৃষ্টিতে পােশাক, পর্দা ও সাজসজ্জা, সার্বভৌমত্ব: ইসলামী দৃষ্টিকোণ, গণতন্ত্র ও ইসলাম। তাছাড়া আরবি ভাষা ও সাহিত্য, লিপিকলা, ইসলামের ইতিহাস, জীবনদর্শন, আইন ও সমাজ ব্যবস্থার ওপর তার নানা বিষয়ে লিখিত পঞ্চাশােধিক গবেষণাপ্রবন্ধ দেশবিদেশের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।