মহাকালের তুলনায় মানুষের জীবন ক্ষুদ্রস্য ক্ষুদ্র। কিন্তু এই ক্ষুদ্র জীবন ধারণের জন্য মানুষ বৃহৎসব পরিকল্পনা করে । তবে সময় শেষ হয়ে এলে ওপরওয়ালা ঠিকই অসমাপ্ত পরিকল্পনার মাঝখানে তাকে টেনে নিয়ে যান অন্য কোথা অন্য কোনোখানে। মানুষ তখন বোঝে— এতদিন যাকে নিজের জীবন ভেবেছিল, এ তো আসলে স্রষ্টারই সাজানো একটি জীবননাট্য। ন' অবশ্য তার জীবন ঘিরে ঘটে যাওয়া বিচিত্র ঘটনাবলি যে স্রষ্টার প্ল্যান, তা কীভাবে যেন বুঝতে পারতো। কিন্তু তার জীবনের সব ঘটনা লিপিবদ্ধ করে, তার মুখ নিঃসৃত সব বাণী লিখে তার প্রেমিক রবি বিশ্বকবি অভিধায় সম্মানিত হবে আর সে নিমিত্তমাত্র তার ছায়াসঙ্গী হয়ে থাকবে স্রষ্টার এমন একচক্ষু নাটক মেনে নিতে পারতো না সে কিছুতেই! তার সাথে রবির বাল্যপ্রেম, রবির মেজদাদার বালিকাবধূ হিসেবে তাদের ঘরে অনুপ্রবেশ, রবির অন্যত্র বিয়ে উপলক্ষ্যে তার আত্মহত্যার নাটক সাজানো—জীবনের এই তুমুল উত্থানপতনের মাঝে এগিয়ে চলা সাহিত্যসাধনা—সাহিত্যে রবির বিশ্বস্বীকৃতি—এই সবই রবি, রবির পরিবার ভাবত, উপভোগ করত এক সফল জীবনের গল্প হিসেবে। কিন্তু ন'ই শুধু জানতো, এ জীবন দেবীর রচিত জীবননাট্যে তাদের অভিনয় মাত্র। অবশেষে, একদিন ঈশ্বর তাদের জীবনের নাটকের সমাপ্তি ঘোষণা করেন, কিন্তু পৃথিবীর দশজন যথারীতি ভাবে, তারা মারা যাচ্ছে।
Foyez Tauhidul Islam লাইভ স্যাইন্স, ডিপ্লোম্যাসি, ভাষাবিজ্ঞান ও সুফীতত্ত্বের মতো বিষয়ের বোদ্ধা পাঠক, লেখক ও গবেষক। উদ্দাম, ফেনীলোচ্ছল গদ্যে তিনি জটিল মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয় উপস্থাপনে পারদর্শী। বিভিন্ন ভাষার উপর তাঁর দক্ষতা ও ব্যাপক কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা সংবেদনশীল বিষয়কে অবিতর্কিতভাবে উপস্থাপনে তাঁকে মুন্সীয়ানা দান করেছে। এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম ফয়েজ তৌহিদুল ইসলামের। পিতা-মাতা উভয়েই সুফী ঘরানার সাধক হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই গুপ্তবিদ্যা, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব ও সৃষ্টিতত্ত্বের উপর ব্যাপক অধ্যয়ন ও অনুধ্যানের সুযোগ পান। তাই নিজে কঠোর রক্ষণশীল ধর্ম চর্চাকারী হলেও তাঁর লেখায় উদারনৈতিক মতবাদ ফল্নুর মতো প্রবহমান। তাঁর চিন্তা ও লেখায় এসবের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। পড়াশোনা ও চাকরি সূত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিশেষত আমেরিকা ও ইউরোপে ব্যাপক ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ তিনি। এসব অভিজ্ঞতা ও অভিজ্ঞান তাকে কাব্যময় গদ্যের এক মননশীল লেখকে পরিণত করেছে। ২০১৫ সালের বই মেলায় প্রকাশিত “ইহকালে এইসব হয়” তাঁর বিপুল সমাদৃত উপন্যাস।