সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যখন মিডিয়া-পরিবীক্ষণ করেন, তখন তাঁরা সমাজে মিডিয়ার ভূমিকা সম্পর্কিত সুপ্রচুর গবেষণাদির বিদ্যাজাগতিক ধারাগুলোকে বিবেচনায় আনেন না, আবার বিদ্যাজাগতিক পণ্ডিতবৃন্দ মিডিয়ার ভূমিকাকে সদা-সতর্ক নজরদারির কর্তব্যটিকে অ-বিদ্যায়তনিক মনে করে উপেক্ষা করেন। এই দুইয়ের চমৎকার যুগলবন্দী ঘটিয়েছে এই বই।
তাত্ত্বিক পরিপ্রেক্ষিতের প্রতি সারাক্ষণ হুঁশিয়ার থাকার পাশাপাশি মিডিয়া-পরিবীক্ষণের বাস্তব ঘটনা, উদাহরণ, হাতে-কলমে প্রয়োগের সুবিস্তৃত-সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিসমূহকে হাজির করাটা, অর্থাৎ মিডিয়ার ক্ষমতা সংক্রান্ত আলোচনার তাত্ত্বিক ও ফলিত দিকের সম্মিলন ঘটানোটা, এই বইয়ের আরেকটি বৈশিষ্ট্য।
এটি বাস্তব কাজের ম্যানুয়াল বা হ্যাণ্ডবুক ধরনের একটি বই হওয়া সত্ত্বেও এতে তাত্ত্বিক ও বাস্তব বিস্তারিত বিশ্লেষণের কোনো ঘাটতি রাখা হয় নি। অন্যদিকে, মিডিয়া-পরিবীক্ষণের খুঁটিনাটি পদ্ধতি-প্রণালীর কথা বলতে গিয়ে খোদ পদ্ধতিতাত্ত্বিক প্রশ্নসমূহ মনোযোগের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ পায় নি।
মিডিয়া-পরিবীক্ষণের সহজ পুস্তক হিসেবে লিখিত হলেও ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা-বিভাগসমূহে ‘গণযোগাযোগ ও সমাজ’ নামের যে-কোর্সটি পড়ানো হয়, তার প্রধান একটি পরিপ্রেক্ষিতগত পাঠ্যপুস্তক হিসেবে যে এই গ্রন্থটি কাজ করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নাই।
এ-ছাড়া, এই তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা-বিভাগসমূহে মিডিয়া-গবেষণা-পদ্ধতি সংক্রান্ত কোর্সের (প্রধানত আধেয়-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে) অন্যতম সহায়ক-গ্রন্থ হিসেবেও বইটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাজে আসবে।
অন্যদিকে, মিডিয়া-পরিবীক্ষণের কাজে আগ্রহী অ্যাক্টিভিস্টগণ এবং বেসরকারী সংস্থাসমূহও এই বইটিকে ম্যানুয়াল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলার বর্তমান জরুরি প্রেক্ষাপটে মিডিয়ার ভূমিকা, তার ভালোমন্দ ও করণীয়-অকরণীয় সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা সার্বক্ষণিকভাবে জারি রাখা এবং মিডিয়ার ক্ষমতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে নজরদারি করা দরকার। অথচ, আমাদের দেশে এ-বিষয়ে তেমন কোনো গ্রন্থ নেই। এ-বই সেই অভাবও অনেকখানি মেটাবে।
লেখক পরিচিতি : সেলিম রেজা নিউটন
জন্ম ১৯৬৮। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক; প্রাক্তন সভাপতি। এই বিভাগে শিক্ষকতা করছেন ১৯৯৪ সাল থেকে। অধ্যাপনা ও অধ্যয়নের ক্ষেত্রে আগ্রহের মূল মূল জায়গা: মিডিয়ার রাজনৈতিক অর্থনীতি; বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতি; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা; রাষ্ট্র, কর্তৃত্ব ও বিদ্রোহ; ব্যক্তির স্বাধীনতা, আইনের শাসন ও কারাগার; এবং মুক্তিমুখিন সমাজতন্ত্র তথা নৈরাজ্যবাদ। সম্পাদনা করেছেন: মানুষ আর প্রকৃতি বিষয়ক ছোটকাগজ মানুষ এবং বিজ্ঞাপন, যোগাযোগ ও সমাজ বিষয়ক পত্রিকা Adcomso Journal। কবিতা লেখেন। প্রবন্ধ লেখেন। অনুবাদ করেন।
আশীর দশকে সামরিক স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। পরবর্তী কালে, ‘এক-এগারো’র আমলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাক্যাম্প স্থাপন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর সেনা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা রক্ষার দাবিতে প্রতিবাদী মৌন মিছিল সংগঠিত করার ‘অপরাধে’ জরুরি অবস্থা লঙ্ঘনের দায়ে দুই বছরের জন্য দণ্ডিত হয়ে সহকর্মীদের সাথে জেল খেটেছেন, ২০০৭ সালে। মুক্তি পেয়েছেন তিন মাসের মাথায়, শিক্ষার্থী-আন্দোলন এবং জনমতের চাপে, রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে।
বিয়ে করেছেন ২০০১ সালে। স্ত্রী সুস্মিতা চক্রবর্তী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। কন্যা লালন সুস্মিতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী।
সেলিম রেজা নিউটন: ৩০শে জানুয়ারি ২০১৯ জন্ম: জানুয়ারি, ১৯৬৮, সৈয়দপুর, নীলফামারী বাড়ি নাটোর। পড়াশােনা গণযােগাযােগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই নিয়ে শিক্ষকতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে 'গত ২৪ বছর ধরে। লেখালেখি নানা কিছু নিয়ে। সম্পাদনা: ‘অ্যাভাসাে জানলি’, ‘মানুষ’ 'আশীর দশকের সামরিক স্বৈরতন্ত্রের আগাগােড়া রাস্তায় ছিলেন। জরুরি আইন অমান্য করার দায়ে জেল খেটেছেন ২০০৭ সালে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতার প্রশ্নে। ইদানীং গানের লিরিক ও সুর রচনা করছেন টুকটুক করে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ: পরিস্থিতির ' বিবরণ (উলুখড়, ২০১৫)।