সমগ্র বিশ্ব যখন করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অস্থিরতায় নিমজ্জিত, জনজীবন বিষণ্ণতার মোড়কে আবৃত, অভাবের বীভৎস জিহ্বা সর্বত্র বিরাজিত তখনই নিস্তার পাওয়ার জন্যে কেউ কেউ আশ্রয় নিতে চায় বইয়ের পাতায়। জটিল জীবনযন্ত্রণার কিছুটা হলেও ঘটায় বইয়ের কালো অক্ষরগুলোর মধ্যে চোখ রেখে। যারা বাংলা, ইংরেজি কম জানে বা ধার্মিক তারাও ধর্মীয় গ্রন্থের মধ্যে যার যার বিধাতার কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে দুঃখ- গ্লানি থেকে স্বস্তি খোঁজে। সর্বত্র ধর্মের নামে, গোত্রের পরিচয়ে, আঞ্চলিকতার মোড়কে ছড়ানো হচ্ছে অশুভ শক্তির গাঢ় অন্ধকার। এইসব অন্ধকারের অপশক্তির কাছে সারা পৃথিবীর নানা প্রান্তে প্রত্যন্তে নানাভাবে বিপন্ন হচ্ছে মানবতা। বিচিত্র বিভাজনে বিভাজিত হচ্ছে বিশ্বের অখণ্ড মানব জাতি। মানুষের ইতিহাস বলে, তাদের রক্তস্রোত যেমন ঊর্ধ্বমুখী, তারাও তেমনি জন্ম নতজানু নয়। মানুষ সবসময়ই সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে হিমালয়সম দার্ঢ্যে। সমাজ, ধর্ম ও রাজনীতির এই ক্লেদ - পঙ্কিলতা দূরীভূত করে মানুষের মনে- মননে সুস্থিরতার সুবাতাস বইয়ে দিতে পারে একমাত্র সাহিত্য ও সংস্কৃতির একটি সমৃদ্ধ ধারা। আমি আমার 'মুক্ত বিহঙ্গের খোঁজে' নামের এ গ্রন্থের রচনাগুচ্ছে সেই স্বপ্নযাত্রার বাণী রূপই দিতে চেয়েছি। বইটির এ রচনাসমূহ রচিত হয়েছে ২০০১ থেকে ২০২২ সালের বিভিন্ন সময়ে। দেশের বিভিন্ন পত্রিকা ও সভা সেমিনারে একাধিকবার ছাপানো পঠিত হয়েছে। বর্তমানে দেশের স্বনামধন্য কবি, শিশু সাহিত্যিক, কলামিস্ট ও প্রতিবিম্ব প্রকাশ এর প্রকাশক জনাব আবুল খায়ের সাহেবের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গ্রন্থাকারে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। এটি আমার দ্বিতীয় প্রবন্ধ গ্রন্থ। প্রথমটি ' আপন বিম্ব আত্ম মুকুরে' দেশ পাবলিকেশন কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে ২০১৬ সালে। বর্তমান বইটির কম্পিউটার কম্পোজে সহযোগিতা করেছে স্নেহাস্পদ শ্যামল, তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। 'মুক্ত বিহঙ্গের খোঁজে' গ্রন্থটি প্রতিবিম্ব প্রকাশ এর প্রীতিস্পর্শে এর সৌষ্ঠব সুমিতিময় হয়ে উঠেছে। প্রচ্ছদসহ সার্বিক সহযোগিতায় যাদের পাশে পেয়েছি তাদের সবার জন্য আন্তরিক শুভ কামনা। শীরীন আক্তার
অধ্যাপক শীরীন আক্তার একই সাথে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, গবেষক, সমাজসেবক, নারীনেত্রী। তাঁর জন্ম ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার জীরতলীর এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে। পরবর্তীতে সদর উপজেলার মাইজদীতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। মাইজদী বাজারের নিকটবর্তী উকিল পাড়ায় বাবার বাড়ি, মাস্টার পাড়ায় শ্বশুরবাড়ি। পিতৃপরিচয় : মরহুম মাওলানা আবদুল মালেক মুন্সি, পেশায় ইউনিয়ন পরিষদের স্বনামধন্য চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি অবিভক্ত ভারতের কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে টাইটেল পাস করে নিজেকে জনগণের সেবায় নিযুক্ত করেন। আজীবন একই কাজে ছিলেন। মাতৃপরিচয় : মরহুমা আছিয়া খাতুন একজন সম্ভ্রান্ত ধার্মিক ও পর্দানশীন নারী ছিলেন। তিনিও সংসারধর্ম পালনের পাশাপাশি সমাজ সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। দাদা আতর আলী মুন্সি বিখ্যাত মাওলানা ও ব্যবসায়ী ছিলেন। আর নানা মফিজ উদ্দিন আহমেদও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ছিলেন। শিক্ষাজীবন : অধ্যাপক কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, গবেষক, নারীনেত্রী ও সমাজসেবক শীরীন আক্তার-এঁর তৃণমূল পর্যায়ের শিক্ষাজীবন ছিলো বড়োই টালমাটাল। মুক্তিযুদ্ধের কারণে তৃতীয় থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত কয়েক দফা স্কুল বদল করতে হয়েছে। পরিবারের স্থান বদলের কারণে তাঁরও বদল ঘটেছে। অবশেষে মাইজদী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে এস.এস.সি পাস করেন। ১৯৮০ সালে নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের আবাসিক ছাত্রী হিসেবে বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি পাস করেন ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে। যদিও স্বৈরাচার শাসকের আমলে সেশন জটের কারণে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে যথাক্রমে ১৯৮৫ ও ১৯৮৭ সালে। শিক্ষাজীবনে তিনি যেমন অলরাউন্ডার ছাত্রী ছিলেন, তেমনি তূখোড় রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিলেন। পেশাগত জীবন : এম.এ. পরীক্ষা শেষ করেই প্রথমে উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৮৭-১৯৯২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৪/৫টি স্কুলে শিক্ষকতা শেষে ১৯৯২ সালের নভেম্বর থেকে কলেজে আজোবধি চাকরি করছেন। সংসার ও বাচ্চার দেখাশোনার কারণেই বারবার বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েও দিতে পারেননি। পেশাগত জীবনে সহকর্মী ও সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে অত্যন্ত সহৃদয় ও আন্তরিক। লেখক-জীবন : স্কুলজীবন থেকেই তাঁর লেখালেখির হাতেখড়ি। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও তিনি স্বরচিত কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লিখে বহুবার পুরস্কৃত হয়েছেন। সংসার ও পেশাগত জীবনের ফাঁকে ফাঁকে তিনি লেখা চালিয়ে গিয়েছেন। ১৯৮৭ সাল থেকেই স্থানীয় পত্রিকা, দৈনিক পত্রিকা ও লিটল ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখালেখি করেছেন। বিভিন্ন দিবস, অনুষ্ঠান ও সভা সেমিনারে প্রবন্ধ-নিবন্ধ উপস্থাপন করে চলেছেন। ২০০৯ সালে একত্রে দুটো কাব্য-‘মেঘ নৌকার বহর’, ‘রক্ত ঝরা পঙক্তিমালা’; ২০১৬ সালে প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘আপন বিম্ব আত্ম মুকুরে’; ২০২১ সালে তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরিরা’ ও প্রথম উপন্যাস ‘নদী’ (প্রথম খণ্ড) প্রকাশ হয়েছে। প্রতিবিম্ব প্রকাশ থেকে বের হল উপন্যাস ‘নদী’ (২য় খণ্ড) ও ‘নদী’ (৩য় খণ্ড), খণ্ডিত চন্দ্রালোকে (যৌথ কাব্যগ্রন্থ), মায়ার ফাঁদে (একক কাব্যগ্রন্থ)