ধ্যানমগ্ন, ঋষি-মুনিদের ইশারাভাষা যার কবিতায় বারংবার দোল খায়, সময়কে নিয়ন্ত্রণ করেন যিনি সমান্তর ক্ষিপ্রতায়, পাঠক মননে যিনি রুইয়ে দেন শলমাজরির ফাঁদ, কবিতায় তিনি-ই তো প্রাসঙ্গিক। তানিয়া হাসান সেই গতিময় কবিতার প্রতিভূ। যার দর্শন সর্বজনীন; মুহুর্তেই বৃত্তগৰ্ভ ভেঙে ধাবমান। ধরা-বাধা ছক, রীতি-নিয়মের ঘেরাটোপ তো বটেই, যাকে বাধ্য করার ক্ষমতা রাখে না স্বয়ং পৃথিবীও। পাওয়ার পোয়েট্রির এ সময়ে তানিয়া হাসান অবধারিতভাবে অনিবার্য তার আপন তৃষ্ণাব্যঞ্জনে। তার প্রতিটি বাক্য, স্তবকই যেন স্বতন্ত্র কবিতা। কবিতায় তার বহুমুখী বিচরণ এবং গন্তব্যভেদের ধ্রুব দৃশ্যকল্প অমরত্বের অধিক দাবি ঘোষণা করে। সমকালে ক্রমকণ্টকী দর্শনের প্রপেলার ছড়িয়ে বহুবিস্তৃত এ কবি মায়াশৈলী ও শিল্পকেন্দ্রিক নিগূঢ় নথিবদ্ধ ঘোরের বংশীবাদক। তার কবিতার জলজিয়ন্তে আলবেলি রহস্য ও নিবিড় কুয়াশাগ্রাফ। জ্ঞানপ্রাপ্ত বৃক্ষে পাখিদের আশ্রম যেন তার কবিতা—আপনাকে হুহু করে টেনে-হিচড়ে, মন ও মগজে প্রচণ্ড আঘাতে, ক্ষত-বিক্ষত করতে করতে প্রারম্ভিক পাঠে বাধ্য করে উপসংহারে পৌঁছার মধে মাতাল করবে। তানিয়া হাসানের কবিতা ও বয়ানরূপ চিরধ্রুপদী। তার কাব্য-আরাধনা ও ভেতর-বাহিরের বর্ণশবনম যেন পরিপাটি প্রার্থনাপ্রধান চিত্রাশ্চর্যের খরস্রোতা এক নদী। নিজস্ব সুর, স্বপ্ন, স্বতন্ত্রতায় তার সংলাপপ্রবণ প্রক্ষেপণগুলো নিরিক্ষাধর্মী নয় বরং স্বয়ংক্রিয়, সর্বগামী। "বিস্ফোরিত চমৎকার' কবিতাগ্রন্থ পাঠে নিশ্চিতভাবেই পাঠকের আয়ু হবে মহাকালের সমান!