"ঘুম আসছে না। চোখ বুজে আছে চন্দা। তবে তার আত্মার চোখ খোলা। সেই চোখে দেখছে সব। দেখছে নিজেদের চাষের জমিন, দূর্বাঘাসে ঢাকা আইলের পর আইল। দেখছে এর ওপর দিয়ে ছুটছে সে। পথ শেষ হচ্ছে না। নতুন নতুন মোড় দেখতে পাচ্ছে। একটা মোড় পেরিয়ে দেখছে আরেকটা বাঁক। বাঁকে বাঁকে রয়েছে নতুন ধরনের ফাঁদ। সব জয় করে এগিয়ে যাচ্ছে, দূরে। আরও দূরে। হঠাৎ সে শুনল, কই যাও, চন্দার আঁধার থেকে আলোর দিকে, মুক্তির দিকে। তার আত্মার ভেতর থেকে জবাব বেরিয়ে এল। কার মুক্তি চাও, তুমি? উত্তর দিতে গিয়ে চুপ হয়ে গেল আত্মা। নিজের গভীর পানে তাকিয়ে বুঝল কেউ আছে গহিন তলে কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না সে। তবে দেখল কার্তিক মাসেও লাইন করা খেতে বোনা আলুর বীজ থেকে মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে কচি সবুজ আনুগাছ, পরশ নিচ্ছে কাঁচাসোনা রোদের। আকাশ ছোঁয়ার আশায় ধীরে ধীরে উঁচু করছে মাথা।" ঋতু-বৈচিত্রো কার্তিক মরা মাস হলেও চন্দা দেখছে বসন্তের রঙিন প্রকৃতি। পাঠকও দেখার সুযোগ পাবেন মনপুর বালিকা বিদ্যালয়ের তেজোদীপ্ত সখীদের সঙ্গে নিয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া চন্দার লড়াকু নেতৃত্বের আসনে উন্নীত হওয়ার আখ্যান। আরও দেখতে পাবেন প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাধর উদ্রেককারীর কুৎসা রটানোর দমবন্ধ করা ঘটনা, ঈর্ষা-নিষ্ঠুরতা-কুটিলতার বয়ান। বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল তাঁর 'কার্তিকে বসন্ত' উপন্যাসের মাধ্যমে আমাদের চিরায়ত গ্রাম্যসমাজকে উপজীব্য করে কলম ধরে বাল্যবিয়েসহ নানা ধরনের নারী নিপীড়ন নারী নির্যাতন, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করেছেন চন্দা চরিত্রের সংগ্রামী চেতনার মধ্য দিয়ে। একই সঙ্গে কৈশোর মনের অতলে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত ভালোবাসার গোপন কুঠুরিতেও মনস্তাত্ত্বিক আলো ঢেলে দিয়েছেন এই ঔপন্যাসিক।
তিনি একদিকে কথাসাহিত্যিক, অন্যদিকে মনোশিক্ষাবিদ। ২০১৮ সালে কথাসাহিত্যে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। জাপানের ১২তম ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব সাইকিয়াট্রির ফেলোশিপ প্রোগ্রামে নির্বাচিত হন বিশ্বের প্রথম সেরা ফেলো। জন্ম ১৯৬০ সালের ২ জানুয়ারি সাগরকন্যা সন্দ্বীপে। এমবিবিএস করেছেন সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে। তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতির মাসিক ’শব্দঘর’র সম্পাদক এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএমএইচ)-এর একাডেমিক পরিচালক। ২০১২ সালে তাঁর মনস্তত্ত্ব বিষয়ক গ্রন্থ ‘মানব মনের উদ্বেগ ও বিষন্নতা’ কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য করা হয়।