উপন্যাস : আমি ও আঁধার ( অংশবিশেষ ) রেবেকা বেগম সাগরের কপালে হাত রেখে আঁতকে উঠলেন। তার কাছে মনে হলো তিনি কোনো মানুষের গায়ে হাত রাখেননি, রেখেছেন জলন্ত চুলার উপর। রেবেকা বেগম ও তুলি মিলে ধরাধরি করে সাগরকে বিছানায় শোয়ালেন।মাথায় পানি দেবার প্রয়োজন। তুলি দুইহাতে একটি ভরা বালতি নিয়ে এলো। রেবেকা বেগম সাগরের মাথায় পানি ঢালতে শুরু করলেন আর তুলি সাগরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। কয়েক মগ পানি ঢালার পর রেবেকা বেগম জড়ানো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, বাবা, এখন কেমন লাগছে? সাগর রেবেকা বেগমের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নিজের মতো আবার বিড়বিড় করে কথা বলতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরপর শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। সাগর একবার চোখ মেলে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে রাখলো। তার কানে পানি পড়ার শব্দ আসছে। কিন্তু তার মাথায় যে পানি ঢালা হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে না। বিশ মিনিট পানি ঢালার পর সাগর চোখ মেললো।তার হাতের ডান পাশে রেবেকা বেগম বড় বড় চোখ করে বসে আছেন। আর তুলি মাথায় পানি ঢেলে যাচ্ছে। সাগর চোখ বন্ধ করে বড় করে শ্বাস ছেড়ে বললো, খালাম্মা আর ঢালতে হবে না। রেবেকা বেগম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, বাবা, এখন ভালো লাগছে? সাগর হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। চেতনা ফিরে পেলেও এখনও শরীরে শক্তি ফিরে আসেনি। সাগর চোখ বন্ধ করে তার বিছানায় আসার দৃশ্যটা কল্পনা করতে থাকলো। মা মেয়ে মিলে একটা অজানা অচেনা কোথাকার কার ছেলেকে সুস্থ করে তোলার জন্য ধরাধরি করে বিছানায় নিয়ে এলো। তারপর মাথায় পানি দেবার জিনিসপত্র জোগাড় করলো। কতোক্ষন মা পানি দিলো মেয়ে মাথায় হাত বুলালো। তারপর মেয়ে পানি ঢালতে শুরু করলো মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। দৃশ্যটা কল্পনা করে সাগরের ভিতরে একটা অদ্ভুত অনুভূতি নাড়া দিলো। আবার একটু লজ্জাও লাগলো। কেননা আত্মীয় হলে একটা কথা ছিলো।কিন্তু সে তো এই বাড়ির গৃহশিক্ষক। পড়াতে এসে মাথায় পানি! ব্যাপারটা হয় খুব হাস্যকর অথবা মানবতার চরম পর্যায়ের কিছু একটা।
ফয়সাল আহমেদ, পিতা মৃত সাইজুদ্দিন আহমেদ, মাতা ফরিদা খাতুন। জন্ম পুরনো ঢাকার মিডফোর্টে ১৯৮০ সালের ৫ এপ্রিল। পড়াশোনা মিল্লাত উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং শেখ বোরহানউদ্দিন পোষ্ট গ্রাজুয়েট কলেজ থেকে এইচএসসি ও স্নাতক শেষ করেন। পেশায় চাকুরিজীবি। দীর্ঘদিন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছোটগল্প লেখায় নিয়োজিত থাকলেও 'অজানা গন্তব্য' লেখকের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস।