দুই মুসাফির গ্রীষ্মের দুপুর প্রায় শেষ। অড়হর ক্ষেতে ছায়া পড়ছে। ক্রমশ দীর্ঘ। কুষ্টিয়া জেলা বোর্ডের সড়কপথে একজন পথিক হাঁটছিলেন । পরনে গেরুয়া উবন্দ, গায়ে গেরুয়া আলখেল্লা। লম্বাটে মুখ-বোঝাই সাদা দাড়ি। হাতে একটি একতারা। পথিক ধর্মকান্ত । তবু দুই চোখ পথের উপর নয়, পথের দু'ধারে। গ্রীষ্মের দাবদাহ সব পুড়িয়ে দিয়ে গেছে। এই রুক্ষতার সৌন্দর্য বৈরাগীর মনের রঙের মত । পথিক তাই চেয়ে চেয়ে দেখছেন আর হাঁটছেন। মাঝে মাঝে একতারায় হঠাৎ আঙুল অজানিতে দিয়ে পড়ে। টুংটাং আওয়াজ রৌদ্রের বিবাগী সুরে মিশে যায়। ত অজানিতে । নচেৎ পথিকের মন এখন একতারার সুরে নয়, বহির্বিশ্বের ফ্রেমে আবদ্ধ । মাঝে মাঝে ছায়াবতী গাছ পড়ে। কিন্তু মুসাফির থামে না। তিন মাইল দূরে প দেখা যায়। সেখানেই হয়ত তার গন্তব্য । পেছনে আর একজন হাঁটছেন। একটু দ্রুত। তার ইচ্ছা অগ্রগামী পথিকের সঙ্গ ধরা । ডাক দিয়ে হয়ত চলা থামানো যায়। কিন্তু এই মুসাফির অতদূর গায়ে-পড়াভাৰ দেখাতে রাজি নন । তাছাড়া এই মহাজনের চেহারায় রুক্ষ-কাঠিন্যের ছাপ স্পষ্ট তার কালো অক্ষরাশি এবং সুঠাম লোমপূর্ণ দুই বাহুর মধ্যে। মুখটি বেশ চও গোলা-ভাঁটার মত। দেখলেই মনে হয়, এই মানুষ হুকুম দিতে অভ্যন্ত, তামিলে নয়। কিন্তু তিনি হাঁটছেন জোর-পা। অগ্রগামী পথিককে ধরা উচিত। পথচলার ক্লান্তি দূর করতে সঙ্গীর মত আর কিছু নেই । দ্বিতীয় পথিক জোর হাঁটতে লাগলেন । ফলে ঘাম করে তার শরীর থেকে । মুখে অসোয়ান্তির ছাপ পড়ে। কিন্তু তবু সংকল্প টলে না। কাছাকাছি এসে দ্বিতীয় পথিক ডাক দিলেন, ও ভাই । আগের পথিক এবার পেছনে তাকায়। অন্য মানুষ দেখে, মুখে অভিনন্দনের হাসি, থামলেন প্রথম পথিক। পেছনে ফিরে বললেন, আমাকে ডাকছেন, ভাই?