জুয়েল মাজহারের প্রথম কবিতাবই ‘দর্জিঘরে এক রাত’। এতে চকিতে ধরা পড়ে স্বপ্ন-বাস্তবের বিচিত্র আততি; পরোক্ষের নানা ইঙ্গিতে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে নিসর্গপ্রসার, জড়বস্তুতে নড়ে ওঠে প্রাণ, সবুজ প্রিজমের ভেতরে একই মুখশ্রী উঁকি দ্যায় নানা অলিন্দ থেকে, মায়াকাজলের সরোবরের দিকে ছুটে চলে বিকলাঙ্গ, অন্ধ এক মাছ, বনে বনে ‘তুলার বলের মতো খরগোশ’ দৌড়ে চলে যায়। ব্রহ্মাণ্ডবৃক্ষের ডালে নিয়ত ঝুলতে থাকে দীর্ঘলাস্য ঘুম। ক্রমহননের পথ পাড়ি দিলে দেখা যায়, ঘাসে ঘাসে সিঁড়ি চলমান। দেখা যায়, পর্বতের ধাপে ধাপে মনুষ্যখুলির ছায়া প্ররোচনা আকারে সাজানো। হাসপাতালে রোগজর্জর এক শিশুর শিয়রে সংখ্যাহীন শাদা বেলুন উপহার পাঠায় চাঁদ। রাত্রির উপসংহার এলিয়ে পড়ে মোরগঝুঁটিতে; সারি সারি স্তম্ভে-শৈলে-ষাঁড়ের ককুদে রুপোলি শরবতসহ ঝাঁকে ঝাঁকে পরি এসে নামে। আবার কখনো-বা শাদাফেন-তাঁবু ফেলে মুখশ্রী ও ময়ূর পালিয়ে যায় ভয়ে।
এভাবে আধো-বাস্তব আর আপাত-বাস্তবের বিচিত্র লোধ্ররেণু পলে পলে উঁকি দ্যায়, অগোচরে ওড়ে; অন্যদিকে, চিতা ও হায়েনাদের শ্যেন চোখ এড়িয়ে মৃত্যু-মশগুল শব্দহীন উপত্যকার সানুদেশে এক অপ্রকাশ্য হ্রদে জল খেতে নামে পিপাসার্ত আলাভোলা সরল জেব্রা।
আমরা বুঝতে পারি, আমাদের চারপাশে, আমাদের অলক্ষে-অগোচরে সাজানো হচ্ছে এক হননব্যূহ; যাতে আমরা চিরকালের মতন আটকা পড়েছি। যেখানে ‘ব্যারেলে গুলির মতো শকুনিমামার হাসি বন্ধুগণ রেখেছে প্রস্তুত’!
অযোনিসম্ভূত এই উপহার
কালো কালো অক্ষরের ছাঁচ !!