আধুনিক যুগে কেউ কি যাযাবর হতে পারে? যাযাবরের আভিধানিক অর্থ যাই হোক না কেন আদতে সে এক অদ্ভুত ভ্রমণকারী। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছুটে চলার মাঝে আমার মনে ও মননে মিশে ছিল যাযাবরের দর্শন। পৃথিবীর বুকে আপন ঘর বাঁধবো বলে নিজ নীড় ছেড়ে বের হয়েছি। ছুটে চলেছি এই পথে প্রতিনিয়ত। পথই দেয় পথের খোঁজ। এই পথের খোঁজে পাড়ি দিয়েছি কত না পাহাড়-নদী-সমুদ্র-হাওড়-বাঁওড়। হারিয়ে গেছি প্রকৃতির মাঝে, দেখেছি হারানো সভ্যতার নিদর্শন। জেনেছি বাংলার ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে। কত-শত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনায় রেখে এসেছি পদচিহ্ন। এ সব গল্প কি এত অল্পতে শেষ হয়? সেই গল্পগুলো বলার তাগিদ অনুভব করে যাযাবর। যাযাবরের চোখে বাংলাদেশ তাই শুধু ভ্রমণ কাহিনী নয়। এ আমার দর্শন, আমার দৃষ্টিভঙ্গি- এক অস্থির-অদ্ভুত ভ্রমণকারীর। ভ্রমণকে একটি শব্দে বন্দী করতে আমি নারাজ। পথের মাঝে দেখা হয়েছে আমার হাজারো মানুষের সাথে, ভ্রমণসঙ্গী হয়েছে কতজন। সেই সব মানুষ ও বাংলার প্রকৃতির গল্পগুলো শোনাতেই এই আয়োজন। এবারের বই, প্রথম পর্বে রয়েছে দুটি গল্প যা একটু ভিন্ন ধরনের। আমি বড় হয়েছি এই পুরান ঢাকার বুকে। ঢাকার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা নিয়ে কিছু না বলে গেলে কি হয়? নিজের শেকড়ের সন্ধানে ফিরে গিয়েছি বিক্রমপুরের বুকে বার বার। পোস্টম্যানের ঘণ্টি সেরকমই এক শেকড় অনুসন্ধানের গল্প। তবে, গল্পের সবে তো শুরু হল। সামনের পর্বগুলোতে রাজশাহী, খুলনা বিভাগের প্রকৃতি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়ে থাকবে আয়োজন। এই পর্বের পুরোটা জুড়ে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়, ঝর্না, সমুদ্রের আধিপত্য আর আমার, এক ঢাকাবাসীর, নিজেকে খুঁজে ফেরার গল্প।