সমকালীন আরবী ভাষী নারীদের সাহিত্য নিয়ে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছিল 'আরব বসন্তে'র সময়কালে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্দরমহল বাংলাদেশের মানুষের কাছে ছিল গোপন রহস্যময় অজানা। বাংলাদেশের কর্মী বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রে প্রবাসী হয়ে যান, কাজ করে দেশে রেমিটেন্স পাঠান। আমেরিকা ইউরোপ এমনকী লাতিন আমেরিকা জাপানের দেশ-কাল-পরিস্থিতি আমাদের জানা। কিন্তু কিন্তু আরবীভাষী নারীদের মনের কথা, অনুভূতি, জীবনকে তারা কীভাবে দেখেন, বিশ্বায়ন ও অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে নিজের জীবনকে তাঁরা কোন নিরিখে দাঁড় করান? এসব জানার মরীয়া আগ্রহ থেকেই আরব নারী লেখকদের গল্প অনুবাদ করতে শুরু করি। তিন বছরের প্রচেষ্টার ফসল এই গ্রন্থ। কতটুকু শিল্পমানসম্মত হয়ে উঠছে তাদের লেখা? কী নিয়ে লিখছেন তাঁরা? প্রতিনিয়ত যুদ্ধ, সংঘাত, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কঠোর রক্ষণশীলতার বাতাবরণের মধ্যে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পৃথক অসম লড়াইয়ে তাদের কলম কতটুকু বেগবান ও প্রাসঙ্গিক? আমাদের পথচলা থেকে তাঁদের পথচলায় কতটুকু পার্থক্য? এসব সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি এগ্রন্থের প্রতি গল্পের অনুবাদ করতে গিয়ে। ২০১৯ সালে আরবী ভাষার ওমানী নারী লেখক জোখা আলহার্দী বুকার পুরস্কার লাভ করেছেন অনবদ্য সাহিত্যমান সম্পন্ন সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ। এছাড়াও এখানে সূচিবদ্ধ প্রতি লেখকই নিজ দেশের সাহিত্য অঙ্গনে এবং বিশ্বসাহিত্যকেও সমৃদ্ধ করেছেন নিজেদের সৃজনশীলতা দ্বারা। একারণেই তাঁদের লেখা ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে এবং ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদের সুযোগ গ্রহন করা গেছে। অনূদিত 'কুয়ো' গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল বাংলা একাডেমির উত্তরাধিকার পত্রিকায়। 'অতিথি' প্রকাশিত হয়েছে সমকালের কালের খেয়া সাহিত্য পত্রিকায়। 'ছোট্ট পাখিসোনা উড়ে যাবার পরে' প্রকাশিত হয়েছে সংবাদ সাময়িকীর সাহিত্য পাতায়। এগ্রন্থে ১৪টি গল্প আছে বারোজন নারী লেখকের রচনায়। এই লেখকদের যে বিষয়টি আমাকে প্রথমেই মুগ্ধ করেছে তা হলো তাদের শৈলী বা স্টাইল। তাদের লেখার জগত এত সুচিন্তিত, সৃজনশীল ও অনুভূতিঘেঁষা যে আমি থমকে গিয়েছিলাম। অহেতুক ভাষার কারসাজি বা শব্দের ব্যায়াম নয়, প্রগাঢ় অনুভবেদ্য উপলব্ধি থেকেই তাদের লেখা স্বতঃউৎসারিত। তাদের প্রতিটি গল্পে অন্যূন তিনটা করে ধাপ রয়েছে। প্রথমত, প্রতি গল্পে একটা করে নীরেট গল্প রয়েছে, অনেক গল্প যদিও সাজানো হয়েছে কয়েকটা দৃশ্য দিয়ে, তবুও তার মধ্যেই একটি নিটোল গল্পের অস্তিত্ব বিদ্যমান।
তিনি তরুণ কবি হিসেবেই সমধিক পরিচিত। সমান দক্ষতা রয়েছে কথাসাহিত্য ও অনুবাদে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ সহাস্য বিষন্নতা প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে। প্রথম উপন্যাস আরমান শেখ ও তার শেকড় সংক্রান্ত জটিলতা (২০০৮)-এর জন্য পেয়েছেন খুলনা রাইটার্স্ পদক ২০০৯। তৃণমূল মানুষকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন। প্রান্তিক সাংবাদিকতার সুবাদে পেয়েছেন প্রাকৃতজন পুরস্কার ২০০১। তাঁর উপন্যাসের প্রতি পরতে মানুষের জীবনবোধ, দ্বন্ধ, দর্শ্ন, জীবনকে নৈর্ব্যক্তিকভাবে দেখার প্রবণতা লক্ষনীয়। এই সঙ্গে প্রবল আবেগময় ভাষার সহজ সরল বুননে পাঠককে ধরে রাখেন উপন্যাস শেষ না হওয়া পর্য্ন্ত। একাধিক বই পুনঃমুদ্রিত হয়েছে। এ লেখকের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৬টি।