দুজন অশিক্ষিত মানুষ রতন ও লোকমান আত্মশুদ্ধির কী চক ঘটনা নিয়ে কথা বলছে তা পথচারী, শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদের কেউ জানতে পারলেন না। পৃথিবীর যে পাঠশালায় লোকমান জীবনের সর্বোচ্চ শিক্ষাটি নিয়েছে, দৈহিকভাবে অসম্পূর্ণ মানুষ রতন সেই পাঠশালার শিক্ষক সেই শিক্ষকের সামনে এখন অনুতাপ আর শ্রদ্ধায় নতজানু হয়ে আছে বেড়িবাধের দিকে লোকমানের কোনো কাজ নেই । তবুও সে ভাল লাগা থেকে রতনকে সেখানে পৌঁছে দিতে চাচ্ছে। রতনও লোকমানের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছে না। লোকটা ধোকাবজি ছেড়ে মানুষ হয়ে সৎ উপার্জনে জীবন যাপন করতে গায়ে খাটার কাজে নেমেছে। তার সাথে বাকি পথটুকু গেলে রতনের ভাল লাগবে । "কিরে ব্যাডা, চাইয়া রইলি ক্যান? ভ্যানে উঠ । লোকমান রতনকে তাড়া দেয়। তারপর রতনকে ধরে ভ্যানে তুলতে হাত বাড়ায় । কিন্তু রতন বাধা দেয়। আমারে ধরন লাগব না । আমি উঠতে পারি।' রতন বলল । বাসে কন্ডাক্টরের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ হিমশিম খায়। অসম্পূর্ণ শরীর নিয়ে যে রতন সেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে তার পক্ষে জামানের সহযোগিতা নিয়ে ভ্যানের উপর ওঠা শোভা পায় না। রতন জানের উপরের অংশ ধরে ক্ষুদে টারজানের মতো ঝুলে এক ঝটকায় উপরে উঠে বসে। তারপর তার ছোট পা দুটি সামনে ঝুলিয়ে লোকমানের ড্রাইভিং দিটির পাশে বসে। রতনের পেশির জোর ও কৌশল দেখে লোকমান অবাক হয়। সে ভ্যান টান দিল। লোকমান খুব জোরে ভ্যান চালাচ্ছে না। রতনেরও খাড়া নেই। দু'জনের কেউই নতুন করে ওভারব্রিজের উপর তাদের অতীত নিয়ে অন্য কথা বলে না। তারা তাদের বর্তমান নিয়ে কথা বলে । এক সময় খুনসুটিতেও দু'জন মেতে ওঠে তিন স্তরে একটা বিয়া করাইয়া দেই।' কথাটা বলে লোকমান স্বজনের মুখের দিকে তাকায় । রাস্তার সোডিয়াম লাইটের আলোয় রতনের মুখ সুর তো আমারে মাইয়া দিব কেডা? রতন আক্ষেপের সাথে কথাটা বলল। ।আবার হাসলও।