সাকিনা কাইউমের ‘আমারে ছাইড়া কই যাও পাগল’ পাণ্ডুলিপি পড়ে একটু অন্যমনস্ক হই। কিছু কবিতায় বিধৃত হয়েছে সময়বন্দি দুঃখ গাঁথার সাতকাহন, যেখানে অভিমানী ভালোবাসা পরাবাস্তব ঘোরে নিমজ্জিত থাকে। কিছু কবিতায় লাল, নীল, হলুদ স্বপ্নরা খেলা করে কবির আবেগী মনের অতল গহিনে। আবার কোথাও কোথাও পুরুষতন্ত্র আর সমাজের নিয়ম-অনিয়মের বিরুদ্ধে চলে বিষেদাগার। আবার অতি আবেগের আসঞ্জনে টইটম্বুর, কেউ কেউ হয়তো সেখানে অন্য কিছু খুঁজে বেড়াতে পারেন সাদামাটা চোখে। কিন্তু কবির দূরদৃষ্টি দেহতত্ত্বের বাইরে গিয়ে কামুকতা আর লোলুপতার বিষবাষ্পে ঘৃণা আর শ্লেষ ছড়াতেই বুঝি লেখার অক্ষরে নগ্নতাকে খানিকটা প্রশ্রয় দিয়েছেন। এখানে পরাণের গহিন আঁধারে বেদনার পাহাড় বাদ সাধে দিনান্তের নিত্যনৈমিত্তিকতায়। কিছু কবিতায় অবশ্য রোমাঞ্চের হাতছানি আছে বলাই যেতে পারে। তবে তা বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে নয়। মানুষের ভেতরে মানবিকতা, প্রেম, কামনা, বাসনাসহ ষড় রিপুর তাড়না থাকতেই পারে, তবে তা সমাজ-সভ্যতার ভব্যতা ছাড়িয়ে নয়, তাই মাঝে মাঝেই মনের উদোম আবেগের উচ্ছ্বাসে লাগাম টেনেছেন কবি নিজেই। কিছু কিছু কবিতায় কবি কখনো কথা বলেন নিজের একান্ত ‘আমি’র সঙ্গে, কখনো কথা বলেন অন্য কোন সত্তার সঙ্গে। কখনো সময়ের উল্টো স্রোতে সাঁতার কাটতে গিয়ে ডুবিয়ে দেন আবেগের তরি, কখনো ডুব দেন ভাবনার অতলে আবার কখনো পথের সাথীকে নিয়ে তীরে বাঁধেন মন-খেয়ালের স্বপ্নবাসর। কবি এখানে কখনো বড্ড এলোমেলো, উদাসীন আবার কখনো বড্ড সাজানো- গোছানো, এখানে যে কোন পথিক কিংবা আগন্তুক সময়ের তাড়ায় কবির উদাসীনতাকে অশালীনতা বলে ভুল করতে পারেন। আসলে কবি একেবারে সহজ, সরল, সাদামাটা, নিজেও যেন আস্ত এক মহাকাব্যের ললাট।
"মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি" হৃদয়ে ধারণ করে এগিয়ে চলা এক নিভৃতচারী স্বপ্নদ্রষ্টা'র নাম সাকিনা কাইউম । তিনি একাধারে - কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, কলামিস্ট, কণ্ঠশিল্পী, আবৃত্তি শিল্পী, কারুশিল্পী, প্রচ্ছদশিল্পী, সম্পাদক, প্রকাশক এবং একজন সফল শিক্ষক। নারায়ণগঞ্জের মেয়ে সাকিনা কাইউম তাঁর বহুমাত্রিক শিল্পকলা'র দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছেন "কালারফুল আর্টিস্ট্রি" নামক অনলাইন ভিত্তিক একটি আর্টস এন্ড ক্রাফটস প্রতিষ্ঠান, যা দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করছেন। ২০১০ সালে তাঁর প্রথম প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থ - " Let's Practice Manners "। ২০২২ সালে প্রকাশিত হয় কাব্যগ্রন্থ "আমি হেরে গেলে তুমি সমুদ্র পাবে", যা ব্যাপক পাঠক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ২০২৩ সালে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'আমারে ছাইড়া কই যাও পাগল' বইমেলার সেরা বিক্রিত গ্ৰন্হ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০২৪ সালে তার প্রকাশিতব্য উপন্যাস 'ফুঁ' খুব শীঘ্রই পাঠকের হাতে তুলে দেবেন বলে সাকিনা কাইউম আশাবাদী। এছাড়াও তাঁর বেশ কিছু যৌথ কাব্যগ্রন্হ রয়েছে । বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী "সাকিনা কাইউম" এতকিছু করার পরেও তিনি নিজেকে অণুমাত্রিক ভেবে সুখ পান। তিনি মানুষের প্রেম,বিষাদ,ঘৃণা,কামনা,বাসনাকে তার কবিতার ছন্দে প্রকাশ করেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ভয়ংকর চিত্রগুলো তাঁকে খুব বেশি আহত করে এবং মৌলবাদ ও উগ্রবাদের অশুভ হাত তাঁকে ভাবায় প্রতিনিয়ত। এ-সব ভাবনা থেকেই তিনি বারবার জ্বলে ওঠেন। আর এভাবেই সৃষ্টি হয় তার বহুমাত্রিক সৃষ্টিশীল কাজগুলো।