লর্ড এজওয়্যার ডাইজ: জেন যখন অহংকারের সঙ্গে জানালেন—আলাদা হয়ে যাওয়া স্বামীর একটা গতি করবেন, তখন সেখানেই ছিলেন পোয়ারো। সেই ভয়ানক লোকটি এখন মৃত, অথচ কেন যেন বেলজিয়ান গোয়েন্দাপ্রবরের মনে হচ্ছে: তাকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে! হাজার হলেও, কীভাবে লর্ড এজওয়্যারকে ভদ্রলোকের নিজের স্টাডিতে ছুরিকাঘাতে খুন করতে পারেন জেন...যখন ঠিক সেই সময়েই তাকে বন্ধুদেও সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতে দেখা গেছে? তাছাড়া লর্ড এজওয়্যার যেহেতু তালাক দিতে সম্মত হয়েই গেছেন, তখন এই খুনের মোটিভই বা কী? মার্ডার ইন মেসোপটেমিয়া: যখন অ্যামি লিথেরান ইরাকের একটা প্রাচীন খননকার্যের এলাকায় পা রাখল, তখন ওর দায়িত্বটা ছিল খুবই সাধারণ: বিখ্যাত এক আর্কিয়োলজিস্টের স্ত্রীর খেয়াল রাখতে হবে। কিন্তু অচিরেই যে পরিস্থিতি এমন অদ্ভুত রূপ নেবে, তা সে কল্পনাও করতে পারেনি! রোগিণীর অদ্ভুত আচরণ, তারচাইতেও অদ্ভুত ভ্রম তাকে হতভম্ব করে দিল। তবে অচিরেই আরও জমাট হলো পরিস্থিতি, ঘটল একটা খুনের ঘটনা! রক্তের একটা ফোঁটা—এছাড়া আর কোনো সূত্র নেই এরকুল পোয়ারোর হাতে। সেই সূত্রকেই ভিত্তি বানিয়ে রহস্যের সমাধানে নেমে পড়লেন এরকুল পোয়ারো। দ্য মার্ডার অ্যাট দ্য ভিকারেজ: কর্নেল প্রথেরোকে কেউ খুন করলে, সেটা সবার জন্য ভালোই হবে—এমন কথা যদি একজন যাজকের মুখ থেকে বের হয়, তাহলে পরিস্থিতি কেমন, সেটা বোধহয় আঁচ ভালোভাবেই করতে পারছেন। অথচ কে জানত, এমন কথা বলার কয়েক ঘণ্টার মাঝেই কর্নেল প্রথেরোর লাশ পাওয়া যাবে? তাও সেই যাজকের নিজের স্টাডিতে। কিন্তু কাজে নেমে আবিষ্কার করলেন মিস মার্পল: গ্রামের প্রত্যেকেরই কর্নেল প্রথেরোকে হত্যা করার মোটিভ ছিল!
'দ্য কুইন অব ক্রাইম' ও 'দ্য কুইন অব মিস্ট্রি' নামে পরিচিত আগাথা ক্রিস্টি অপরাধ বিষয়ক বা রহস্য উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর পুরো নাম আগাথা মেরি ক্ল্যারিসা ক্রিস্টি৷ বিখ্যাত এই ইংরেজ লেখিকা সকল গোয়েন্দাগল্প ও রহস্যকাহিনী পাঠকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তাঁর অসাধারণ লেখনীর মাধ্যমে। তিনি বেশ বিখ্যাত কিছু চরিত্রের স্রষ্টা, যাদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারো এবং মিস মার্পল, যাদের নাম শোনা যায় গোয়েন্দাকাহিনী পাঠকদের মুখে মুখে। 'ম্যারি ওয়েস্টমাকট' ছদ্মনাম ব্যবহারকারী এই প্রখ্যাত লেখিকা ১৮৯০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের ডেভন এ জন্মগ্রহণ করেন। আগাথা ক্রিস্টি এর বই সমূহ মূলত রোমাঞ্চ, হত্যারহস্য, অপরাধ ও গোয়েন্দাকাহিনী এবং রোমান্টিক ঘরানার। 'গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী আগাথা ক্রিস্টির বই বিশ্বের ইতিহাসে সর্বাধিক বিক্রিত বই এবং এক্ষেত্রে তাঁর সমকক্ষ হিসেবে শুধু আরেক কিংবদন্তী সাহিত্যিক উইলিয়াম শেক্সপিয়ারকেই ধরা যায়। আগাথা ক্রিস্টি এর বই সমগ্র এর সংখ্যা প্রায় আশিটি। আগাথা ক্রিস্টি রচনাসমগ্র এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দ্য মিস্টিরিয়াস অ্যাফেয়ার এট স্টাইলস, দ্য মার্ডার অফ রজার অ্যাকর্ড, দ্য বিগ ফোর, দ্য মিস্ট্রি অফ দ্য ব্লু ট্রেন, পেরিল এট এন্ড হাউস, মার্ডার ইন মেসোপটেমিয়া, ডেথ অন দ্য নাইল, অ্যাপয়েন্টমেন্ট উইথ ডেথ, এরকুল পোয়ারোজ ক্রিসমাস, স্যাড সাইপ্রাস, দ্য মার্ডার অ্যাট দ্য ভিকারেজ, দ্য বডি ইন দ্য লাইব্রেরি, দ্য মুভিং ফিংগার, এ মার্ডার ইজ এনাউন্সড, দে ডু ইট উইথ মিররস, এ পকেট ফুল অফ রাই, ৪:৫০ ফ্রম প্যাডিংটন, নেমেসিস ইত্যাদি। আগাথা ক্রিস্টি সমগ্র এর মধ্যে আরো রয়েছে বিখ্যাত সব নাটক, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা দৈর্ঘ্যের নাটক 'দ্য মাউজট্র্যাপ'। আগাথা ক্রিস্টি অনুবাদ বই এর সংখ্যাও অনেক, এমনকি ইউনেস্কোর বিবৃতি অনুযায়ী তাঁর বইগুলো সবচেয়ে বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর বাংলা ভাষায় অনূদিত বইয়ের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। অনূদিত আগাথা ক্রিস্টি বাংলা বই এর মধ্যে 'সিরিয়াল কিলার', 'গেম ওভার', 'পোয়েটিক জাস্টিস', 'খুনের তদন্ত', 'মার্ডার ইন মেসোপোটেমিয়া', 'থ্রি ব্লাইন্ড মাইস', 'এ বি সি মার্ডার' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য৷ সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৭১ সালে তিনি 'ডেম' উপস্থিতিতে ভূষিত হন। ১৯৭৬ সালের ১২ জানুয়ারি আগাথা ক্রিস্টি ৮৫ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডশায়ারে মৃত্যুবরণ করেন।