‘জগতে কেহ নাই, সবাই প্রাণে মোর’ বাংলা ১৩১৯ সালে প্রকাশিত ছিন্নপত্র গ্রন্থে ভ্রাতৃষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীকে লিখিত ১৪৫টি পত্র রবীন্দ্রনাথ বিশেষভাবে সংক্ষেপণ ও সম্পাদনাপূর্বক সংকলন করেন। সেই ১৪৫ পত্রের বাইরে শ্রীমতী ইন্দিরা দেবীকে আরও ১০৭টি পত্র। কাকু রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, বোলপুর থেকে ৫ জ্যৈষ্ঠ মঙ্গলবার ১২৯৯ (১৭-৫-১৮৯২) এ প্রকাশিত পত্রিকাটির প্রথম লাইনটি হচ্ছে ‘জগতে কেহ নাই সবাই প্রাণে মোর’। এখনো চোখের পাতা দুটি বন্ধ করলে দেখতে পাই হাজার হাজার মানুষের মুখচ্ছবি। ১৯৭২ সালের জানুয়ারির ১০ তারিখের সেই অভুতপূর্ব দৃশ্য। সেকালের রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনকের উপস্থিতির দৃশ্য। পিতাকে শুধু একবার চোখে দেখেই সার্থক হয়েছিল জানুয়ারির ১০ তারিখের সেই দিনটি। মানুষের মনেপ্রাণে স্বাধীন হওয়ার আনন্দ ঝরে পড়েছিল শাহবাগের রাজপথে। আমরা নেচে গেয়ে প্রকাশ করেছিলাম আমাদের উচ্ছ্বাস। বয়স কম থাকায় কয়েক বন্ধু মিলে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে সন্ধ্যার অনেক পরে ফিরে গিয়েছিলাম ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের একটি ভাড়া বাড়িতে। ভাড়াটিয়া ছিলেন আমার ভগ্নিপতি প্রকৌশলী আবুল মুনছুর। ভগ্নিপতির নিজের একটি দৃষ্টিনন্দন বাড়ি ছিল শ্যামলীর রিং রোড। ইছামতি হাউস নামে খ্যাত ডুপ্লেক্স বাড়িটি। বাড়িটি বানিয়েছিলেন ১৯৬৪-৬৫ সালে। তিনি হাউজিং অ্যান্ড সেটেলমেন্টের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেছিলেন। অফিস নিয়েছিলেন ঢাকা স্টেডিয়ামের দোতলায় ২৪ নম্বর কক্ষটি। বেশ কয়েক বছরের ভিতরেই ঠিকাদারি ব্যবসায় প্রভুত উন্নতি হয়েছিল ‘ট্রফিক্যাল বিল্ডার্স’ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির। প্রায় ৫০-৬০ জন কর্মরত ছিলেন ট্রপিক্যালে। স্বাধীনতার পরে ওই ফার্মে যুক্ত হয়েছিলেন স্থপতি ইয়াফেজ ওসমান, অপরেশ দাশ, গোলাম মুস্তফা এবং বিশিষ্ট অভিনেতা প্রকৌশলী আবুল হায়াতসহ আরও অনেকেই। স্বাধীনতার আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অনেকগুলে স্থানে রেসিডেনশিয়াল ক্যাডেট স্কুল এবং কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিল সরকার। ঝিনাইদহ, ফৌজদারহাট, পাবনাসহ অনেকগুলো জেলায়। সেসব স্কুলে একটি মাত্র প্লাস্টিকের মডেল তৈরি হতো, ওই প্লাস্টিক মডেলের অনুকরণে তৈরি হয়েছে ক্যাডেট স্কুল ও কলেজগুলো। সেসব ক্যাডেট স্কুলে ক্লাস সেভেন থেকে উচ্চমাধ্যমিক পড়ার সুযোগ ছিল ছাত্রদের। তবে মেয়েদের জন্য একটি ক্যাডেট স্কুল ও কলেজ আছে ময়মনসিংহ জেলায়। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের সচিবালয় মসজিদ এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসভবনের প্লাস্টিকের মডেল বানাতে পারত একমাত্র ট্রপিক্যাল বিল্ডার্স। সেই সবাদে বিল্ডার্সের মালিক আবুল মুনছুরকে প্রায়ই করাচি লাহোরে যেতে হতো। মডেলগুলো বিশাল, বিশাল কাঠের ফ্রেমে ভরে চিটাগং থেকে পাঠানো হতো করাচিতে। আমি ১৯৬৮ সালে ১৫০ টাকা বেতনে ভগ্নিপতির ফার্মে যোগ দিয়েছিলাম।
মাকিদ হায়দার। কবি। জন্ম ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭। জন্মস্থান দোহারপাড়া, পাবনা। পিতা মোহাম্মদ হাকিম উদ্দিন শেখ, মাতা রহিমা খাতুন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। গণসংযোগ ও গণমাধ্যম বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) মহাব্যবস্থাপক ছিলেন। সাহিত্যচর্চার শুরু ছড়া দিয়ে। গল্প ও নাটক লিখলেও শেষ পর্যন্ত থিতু হয়েছেন কাব্যচর্চায়। তাঁর স্বতন্ত্র কাব্যশৈলী পাঠ-আস্বাদনের আনন্দ বাড়িয়ে দেয়। আটপৌরে ভাষা, নির্মাণশৈলী ও যাপিত জীবনের সহজ উপলব্ধি তাঁর কবিতাকে স্বতন্ত্র মহিমা প্রদান করে। চলমান জীবন ও সময়ের বহুভঙ্গিম স্রোত থেকে আত্মীকৃত কাব্য-উপাদান সহজেই নজর কাড়ে। নারীপ্রেম, রাজনীতি ও নন্দনতত্তে¡র সংশ্লেষ তাঁর কবিতায় নিয়ে এসেছে অভিনতুন মাত্রা। প্রিয় রোকোনালী তাঁর কবিতার বিশেষ চরিত্র। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ রোদে ভিজে বাড়ি ফেরা, আপন আঁধারে একদিন, ও প্রার্থ ও প্রতিম, কফিনের লোকটি, প্রিয় রোকোনালী, মুমুর সাথে সারা দুপুর, অদৃশ্য মুখগুলো, যে আমাকে দুঃখ দিলো সে যেন আজ সুখেই থাকে, পাকশী লোকাল এক্সপ্রেস প্রভৃতি। গল্পগ্রন্থ বিপরীতে অন্য কেউ এবং মাকিদ হায়দারের গল্প। গবেষণাগ্রন্থ রবীন্দ্রনাথ : নদীগুলো।