বাংলা নাটকের হাজার বছরের ইতিহাস বিনির্মাণকারী নাট্যকার সেলিম আল দীন। সমকালে স্বীয় শিল্পরীতি ও নাট্যদর্শনের মধ্য দিয়ে বাংলানাট্যের শিল্পভূমি ও ইতিহাসে প্রদান করেন নবমাত্রা। পাশাপাশি, তাঁর নাট্যাখ্যানের বিষয়ের মহাকাব্যিক বিস্তৃতির মধ্য দিয়ে বাংলা ও বাঙালির জীবন ধারাকে প্রতিফলিত করেন। বস্তুত তিনি বাংলার জনপদ ও বাঙালির বহুমাত্রিক জীবনচিত্র নাট্যাখ্যানে রূপায়ণ করতে চেয়েছেন। তিনি রাষ্ট্র-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠীর অধিক প্রাধান্য দিয়েছেন মানুষকে। ফলে তাঁর নাটকের বিষয় হয়ে উঠেছে এদেশের খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী সম্প্রদায় এবং তাদের বহুধা বৈচিত্র্যময় জীবনচিত্র। কিংবা বলা যায়, সেলিম আল দীন তাঁর পরিণতকালের রচনায় শ্রমজীবী মানুষ তথা বাঙালির জীবনাচার ও সংস্কৃতিকে বয়ান করেন। সেইসঙ্গে তাঁর বিভিন্ন নাটকে জীবন ও মানবতাবাদী দার্শনিক অভিপ্রায়ের নানামাত্রিক প্রতিফলনও প্রস্ফুটিত। এ কারণেই তাঁকে বঙ্গীয় জনপদের শ্রমজীবী মানুষের জীবন ও সংস্কৃতির বয়ানকারী জীবনপ্রেমিক ও মানবতাবাদী নাট্যকার বলে অভিহিত করাই সংগত। বর্তমান বইয়ে শাহাদৎ রুমন নাট্যকার সেলিম আল দীনের নাটকের প্রধানতম অনুষঙ্গ শ্রমজীবী মানুষের পরিচয় এবং তাদের সংস্কৃতির রূপ উদ্ঘাটনের প্রয়াস পেয়েছেন। বলা যায়, সেলিম আল দীনের নাটকের বহুমাত্রিক রূপ অন্বেষণের এটি একটি যাত্রামাত্র। এই যাত্রাপথে গবেষক নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হলেন কি-না তা সময়ই নির্ধারণ করবে। তদুপরিও একথা বলতেই হয়, বইটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সাহিত্যের ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠে সহায়কগ্রন্থ হিসেবে স্থান লাভ করবে এবং সমালোচক-গবেষক ও নাট্যব্যক্তিত্বের কাছেও বিশেষভাবে আদৃত হবে।
পরিচিতি শাহাদৎ রুমন (ড. শাহাদৎ উল্লাহ সরকার), জন্ম ময়মনসিংহে। পিতা রুহুল আমিন সরকার ও মাতা রোকেয়া আমিন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ‘সেলিম আল দীনের নাটকে শ্রমজীবী মানুষ ও সংস্কৃতি’-শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য ২০১৫ সালে এমফিল এবং ‘ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাটকের বিনির্মাণ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সেলিম আল দীনের স্বকীয়তা অনুসন্ধান’-শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য ২০১৯ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। চলচ্চিত্র, নাটক, সাহিত্য ও থিয়েটার বিষয়ে তার বেশকিছু লেখা বিভিন্ন পত্রিকা ও জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। লেখালেখির জন্য তার প্রধান ক্ষেত্র নাটক ও চলচ্চিত্র। ‘হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র : চিরায়ত রসবোধ’ বইয়ের জন্য ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০১৮’ অর্জন করেন তিনি। তার প্রকাশিত বইগুলো হলো : সহজে বাংলা বানান [২০২০], চলচ্চিত্রবিষয়ক প্রবন্ধ [২০২০], হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র : চিরায়ত রসবোধ [২০১৮], দশটি অনুবাদ নাটক [২০১৬], যথাযোগ্য নিঃসঙ্গতা [২০১১]।