আমার একলা পথের সাথি একটি মহিমান্বিত বর ই আত্মজীবনীকে সুস্বাদু করতে এর বিকল্পও অবশ্য নেই। তবে তা মহিমান্বিত হয় কিভাবে? প্রশ্নটি অমূলক না হলেও পাঠের ভেতর দিয়ে বিশ্লেষিত হওয়ার আগে খোলাসা করাও অসম্ভব। শুধু বলা যায়, লেখক হিসেবে গড়ে ওঠার সুদীর্ঘ পথে পাপড়ি বহমান ধারা, বিষ, র, অসহযোগিতা, অপ্রাপ্তি ও মানসিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তাঁরা সবাই দারুণভাবে উন্মোচিত তাঁর এই গ্রন্থে। সমৃদ্ধ ও নেপথ্য কুশীলব হয়তো সবাই আমাদের পরিচিত বলয়ের: অথবা অপরিচিত হলেও বিভিন্ন আড্ডায় তাঁদের নাম কেউ কেউ শুনেও থাকব হয়তো। ফলে আমাদের শ্রবণসীমার তাঁরা কেউ বহিরাগত নন। আপনজন। নব্বইয়ের উত্থানপর্ব থেকে হালনাগাদ লেখকের সেই আপনজনদেরই অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ ও রূঢ় ব্যবহার দিব্যালোকে উদ্ভাসিত। শক্তিশালী লেখকের কলমের ডগায় ভর করে সে দিব্যালোক। যে আগুনে পুড়ে সোনা খাঁটি হয়, সেই আগুনের উল্লেখে আগুন যেভাবে মহিমান্বিত, গিবত এখানে সেভাবেই। মনে হয়, ক্ষতকে অক্ষত রাখার খুবই সাবলীল ভাষা আয়ত্ত করেছেন পাপড়ি রহমান। আরেকটি জিনিস তাঁর আয়ত্তে । সেটি হলো সাহস। কেননা অতিক্রান্ত অতীত কিংবা অধরা ভবিষ্যৎ শুধু নয়, তিনি বলেছেন স্পর্শযোগ্য সমসাময়িকদের নিয়ে। দুঃসাহসী না হলে কে পারে এতটা চক্ষুলজ্জা এড়াতে? পাপড়ি রহমান সিংহভাগ পেরেছেন। ফলে কোথাও কোথাও তাঁর অনুভূতির প্রকাশ কিছুটা তারল্যনির্ভর। যেখানে তাঁর নেতিবাচক উচ্ছ্বাস বেশি আবেগমণ্ডিত, সেখানে সামান্য স্থূলতা পরিলক্ষিত। কিন্তু লেখক হিসেবে তিনি যে মহীয়সী হয়ে ওঠার ভণিতা করেননি, সেখানেই তিনি সৎ। আমাদের মানবিক মনস্তত্ত্ব ঠিক এই জায়গায় তাঁর প্রতি শিল্পিত সহানুভূতি খুঁজে পায়। অসংখ্য মানুষের ইতিবাচক সাড়ার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। পেয়েছেন তাঁদের অবাধ ভালোবাসা, নিঃস্বার্থ সহযোগিতা। মানববিদ্বেষ ডিঙিয়ে তাঁদের স্থান সেখানে উচ্চাসনে। তাই মানুষের দিকে প্রশস্ত ও কৃতজ্ঞ দৃষ্টি নির্মাণেও বইটি সহায়ক। গ্রন্থের ভূমিকা ও উপসংহারের নান্দনিক ভাবাচ্ছন্নতা সামান্য খোলস মাত্র। ভেতরটা পুরোই বাস্তবের লীলাখেলা। শুধু লেখক কিংবা নারী হিসেবেই নয়, মানুষ হিসেবে দাঁড়ানোর পথে কত যে প্রতিবন্ধকতা, সংগ্রামের পথ যে একদমই নিষ্কণ্টক নয়, আপন যে কর্মযজ্ঞের গভীরে অগভীর ছলনাময় এবং অকৃষ্ঠ অপর - এসবের জ্যাস্ত দৃষ্টান্তে যাঁরা পরিপক্ক হতে চান, তাঁদের জন্য বইটি শুধু উপাদেয় নয়, পুষ্টিকরও। বিপরীতে মানুষেরই প্রেম, উদার আশীর্বাদ ও অনন্য সহমর্মিতার দৃষ্টান্তে যে আশাবাদ জাগে, তা যে-কোনো পাঠকের জন্যই নিরাময়