আমার স্মৃতিশক্তি প্রবল বিধায় আমি বহু পূর্বে দেখা জিনিসকেও হুবহু মনে রেখেছি। আমি বানিয়ে গল্প লিখতে পারি না বলে যা দেখেছি তাই আমার লেখার প্রতিপাদ্য বিষয়। মানুষের জীবনের সবচেয়ে উত্তম গল্প তার নিজের জীবনের গল্প। যেখানে সে হ্যামলেট, শ্রীকান্ত অথবা গয়া মেম। এদের মাঝে অনেক স্মৃতি আমাকে এখনো ভাবায়, কাঁদায় আর বিবশ করে। হে নিরঞ্জন গল্পটিতে আমি যে বন্ধুর কথা লিখেছি যেখানে সে ভালোবাসাকে হৃদয়ে রেখে তার প্রেমিকার সন্তান দুটিকে নিজের সন্তান ভেবে নিয়েছে। মানুষ এক অবাক সৃষ্টি। তার আনন্দ বেদনার পরিধি যে কতো বিস্তারিত আর রহস্যময়, সেই সংবাদ ভিন্ন ভিন্ন জীবন প্রবাহে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখলে সাক্ষাৎ মেলে। মাধবপুরের হরিহর মাঝি এখনো আমার স্মৃতিতে খেয়া পারাপার করে । হাজার হাজার মানুষকে খেয়া পারাপার করে একদিন একটি পারাপারের বেদনা তার আর সইল না। সে নদীর বুকে গভীর রাতে চাঁদের আলোয় অন্য এক বিমোহিত জগতে পারাপার হয়ে গেল। আমার ছেলেবেলার দরিদ্র অসুস্থ বন্ধু জুবেদ আলী ঘরের দুয়ারে বসে একদিন মরে গেল। আর রক্তহীন ফ্যাকাসে মুখটি এখনো আমাকে কাঁদায়। এইসব নানা কথা লিখেছি আমি এখানে যা শুধু আমার কথা নয় জগতের সব মননশীল মানুষের একান্ত গভীর হৃদয়ের কথা। আমরা সবাই 'হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল,' তবে সবাই তা পারে না।
১৯৫০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার গুনিয়াউক গ্রামে লেখকের জন্ম। ৫ বছর বয়সে পিতৃহীন হন। গ্রামের পাঠশালায় শৈশব কাটে পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। অন্নদা উচ্চবিদ্যালয় হয়ে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে ইতিহাসে স্নাতকত্তোর ডিগ্রি নিয়েছিলেন। কলেজ জীবনেই বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন আর সেখানেই তিনি মুক্তচিন্তা ও নিজেকে ধর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত করার প্রেরণা পান ।। নানা রকম বই পড়ার প্রবল আগ্রহ ছিল বলে ক্রমে ক্রমে প্রাচীন ভারতীয় দর্শনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। দর্শন, সাহিত্য, ইতিহাস আর প্রগাঢ় জীবনবোধ তাকে মননশীল করে তোলে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মেছিলেন বলে মানুষের সুখ দুঃখ তাকে জীবনকে আরো গভীর ভাবে দেখার সুযোগ দিয়েছিল। এটি তার চতুর্থ বই। অন্যগুলি আমার সময় আমার পথ (২০১৬), My Lonely Thoughts (২০১৬), হে মহাজীবন (২০১৯)। কোলকাতা থেকে প্রকাশিত হে মহাজীবন তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই যেখানে তিনি তাঁর নিজের কথা লিখেছেন। তার কর্মজীবন শুরু হয় পাকিস্তান ইন্টারনেশন্যাল এয়ারলাইন্সে রাওয়ালপিণ্ডিতে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে বাংলাদেশ বিমানে যোগদেন। ১৯৮৩ সালে বিমানের বাণিজ্যিক প্রশিক্ষকের কাজ ছেড়ে আবুধাবিতে কাজ নিয়ে চলে যান। ১৯৯২ সালে আমেরিকায় যান এবং ১৯৯৭ সালে কানাডায় স্থায়ী আবাস নেন এবং নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। তিনি পৃথিবীর নানা দেশ ভ্রমণ করে নিজের দৃষ্টি ও চিন্তাকে প্রসারিত করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি দুই সন্তানের পিতা এবং এখনো আমেরিকান এক্সপ্রেসে কর্মরত।