অনুবাদকের কথা ‘ইশ্, আমার যদি একটা টাইম মেশিন থাকতো...?’ এমন আক্ষেপ করেনি এরকম মানুষ পাওয়া দুষ্কর। নানা কারণেই আমরা টাইম মেশিন চাই; কেউ অতীতের ভুলকে সংশোধন করতে, কেউবা ভবিষ্যতকে জানতে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এমন কোনো মেশিনের আবিষ্কার সম্ভব হয়নি। মূলতঃ স্থানের (Space) এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো বস্তু বা ব্যক্তির ভ্রমণকেই সময় পরিভ্রমণ (Time Travel) নামে অভিহিত করা হয়। আর এ কাজে যে কাল্পনিক যন্ত্র ব্যবহৃত হয় সেটাই হল টাইম মেশিন। প্রাচীন পুরাণে এটির উল্লেখ থাকলেও টাইম মেশিনের ধারণাটি সর্বপ্রথম জনপ্রিয় করে তোলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক এইচ.জি. ওয়েলস্, ১৮৯৫ সালে তাঁর রচিত ‘দ্য টাইম মেশিন’ নামক উপন্যাসে। যেসব বই আমাদের কল্পনার জগতকে রাঙিয়েছে, এইচ.জি ওয়েলসের দ্য টাইম মেশিন বইটি তাদের অন্যতম। আজ পর্যন্ত এই বইটিকে নিয়ে অসংখ্য মুভি, সিরিজ, কমিক নির্মিত হয়েছে। এমনকি এর সিক্যুয়েলও লেখা হয়েছে বেশ কয়েকটা। সশরীরে সময় পরিভ্রমণ করার বিষয়টি অনিশ্চিত এবং যদি তা সম্ভব হয়েও থাকে, তবুও কিছু কারণে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। স্বাভাবিক অর্থের বাইরে সময় নিয়ে চিন্তা করলে ‘বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ (Special Relativity) এবং ‘সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ’ (General Relativity) এর কাঠামোতে অগ্রগামী সময় পরিভ্রমণ (Forward Time Travel) বিষয়টি বেশ সহজবোধ্য এবং ব্যাপকভাবে উপলব্ধি করার মতো একটি ঘটনা। যাইহোক, একটি বস্তুকে অপর কোনো বস্তুর সাপেক্ষে কয়েক মিলিসেকেন্ডের বেশি অগ্রগামী কিংবা পশ্চাদগামী করার কৌশল বর্তমান প্রযুক্তিতে সম্ভবপর নয়। তবে সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ এ পশ্চাদগামী সময় পরিভ্রমণ’ (Backward Time Travel) এর সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব, যেহেতু এটি সে অনুমতি দেয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে ঘূর্ণায়মান ব্ল্যাকহোল (Rotating Blackhole) এর কথা। স্থান-সময় (Spacetime) এর যেকোনো প্রান্তে ভ্রমণের বিষয়টি ‘তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান’ (Theoretical Physics) তেমন সমর্থন করে না। শুধুমাত্র ‘কোয়ান্টাম মেকানিক্স’ এবং ‘ওয়ার্মহোল’ (Warmhole) এর সাথে বিষয়টি সম্পকির্ত।
পুরো নাম হারবার্ট জর্জ ওয়েলস। বৃটিশ। জন্ম ১৮৬৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। কমার্শিয়াল এ্যাকাডেমিতে লেখাপড়া করেন ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত। সার্টিফিকেট নেন বুক-কিপিং অর্থাৎ পদ্ধতিমাফিক হিসাব রাখার বিদ্যায়। ১৮৮০তে শিক্ষানবিসি করেন উইন্ডসরের এক বস্ত্ৰ-ব্যবসায়ীর কাছে। ঐ বছরেই ছাত্র-শিক্ষক ছিলেন সমারসেটের একটি স্কুলে। ১৮৮০-৮১তে শিক্ষানবিস কেমিস্ট ছিলেন সাসেক্সে। ১৮৮১-৮৩ তে শিক্ষানবিস বস্ত্ৰ-ব্যবসায়ী ছিলেন হ্যাম্পশায়ারের হাইড্রস এম্পেরিয়ামে। ১৮৮৩-৮৪তে ছাত্র-সহকারী ছিলেন মিডহাস্টগ্রামার স্কুলে। ১৮৮৪-৮৭তে পড়াশুনা করেন লন্ডনের রয়াল কলেজ অফ সায়ানেস-কিন্তু উত্তীর্ণ হতে পারেন নি পরীক্ষায়। শিক্ষকতা করেন ১৮৮৭-৮৮ সালে রেক্সহ্যামের হােল্ট এ্যাকাডেমিতে এবং ১৮৮৮-৮৯ সালে লন্ডনের হেনলি হাউস স্কুলে। ১৮৯০তে বি. এসসি ডিগ্রি পান ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে। দুই বিয়ে। প্রথম বিবাহ হয়। চাচাতো বোন ইসাবেল মেরি ওয়েলসের সঙ্গে ১৮৯১ সালে—বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে ১৮৯৫-তে। ঐ বছরেই দ্বিতীয় বিবাহ হয় এ্যামি ক্যাথরিন রবিন্সের সঙ্গে। দ্বিতীয় স্ত্রী মারা যান ১৯২৭ সালে। দুই পুত্র। লেখক এ্যান্টনি ওয়েস্টও তাঁর পুত্ৰ-মা ছিলেন লেখিকা রেবেকা ওয়েস্ট। ১৮৯১-৯২তে শিক্ষকতা করেন লন্ডনের ইউনিভার্সিটি টিউটােরিয়াল কলেজে। পুরো সময়ের লেখক হন। ১৮৯৩ সাল থেকে। ১৯২২ এবং ১৯২৩-এ ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের পক্ষে পার্লামেন্টের লেবার নির্বাচনপ্রার্থী হন। ১৯০৩ থেকে ১৯০৮ পর্যন্ত ছিলেন ফেবিয়ান সোসাইটির সদস্য। ১৯৩৬-এ ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে পান ডক্টরেট অফ লিটারেচার সম্পমান। লন্ডনের ইম্পিরিয়েল কলেজ অফ সায়েন্স এ্যান্ড টেকনলজির সম্পমানজনক সদস্যপদে থাকার পর দেহাবসান ঘটে ১৯৪৬ সালের ১৩ আগস্ট।