’৭১ এ ২৫ মার্চের পর সমগ্র বরিশাল এলাকার ৩৩টি থানার মধ্যে শুধুমাত্র ঝালকাঠি থানার তখনকার এই তরুণ সেকেন্ড অফিসার দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাকিস্তান সরকারের তথা পুলিশের নতুন চাকরিটি ফেলে বিদ্রোহ করেন। থানার মালখানা থেকে পুলিশ ও আনসারের ৩৬ রাইফেল সিনিয়ে নেয়া, এলএসডি গোডাউন থেকে খাদ্যসংগ্রহ শেষে জনসমক্ষে বিলি করে দেয়া, শেষে থানা সদর থেকে পেয়ারা বাগানের কীর্তিপাশা আটঘর কুড়িয়ানায় মুক্তিযোদ্ধাদের সরিয়ে নিয়ে প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধ করা, নিঃসন্দেহে একটি বীরোচিত সাহসীপূর্ণ ব্যতিক্রমী ঘটনা। ’৭১ এর অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতে ঢাকার অবস্থা, পেয়ারা বাগানে ঝালকাঠি আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী খান ও বেলায়েত হোসেনসহ পূর্বাবাংলা শ্রমিক আন্দোলন-এর সাথে ঐক্যফ্রন্ট গঠন পূর্বক ডুমুরিয়া ও আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগানে অবস্থান গ্রহণ, ওই এলাকায় পূর্বেই অবস্থানরত বিপ্লবী মুক্তিযোদ্ধা কমরেড সিরাজ সিকদারের সঙ্গে একত্রে সম্মিলিতভাবে পাকিস্তান আর্মির উপর সরাসরি আক্রমণ ও যুদ্ধ, ১১জন পাকিস্তান আর্মি খতম, কমরেড সিরাজ সিকদারের রাজনৈতিক দর্শন আদর্শ এবং বিচক্ষণতা, গৌরনদীর হাসনাবাদ উজিরপুরের ধামুরা হয়ে মুজিবনগর গমন, ভারতের বসিরহাটের পিফা ইয়োথ ক্যাম্পের এ্যাডজুটেন্ট হিসেবে ভারতীয় ক্যাপ্টেন এপি সিপাহ-এর সাথে কাজ করার স্মৃতিচারণসহ বিভিন্ন বিষয়াদি স্থান পেয়েছে এই বইটিতে।
Title
বিপ্লবী মুক্তিযোদ্ধা কমরেড সিরাজ সিকদার ও মুক্তিযুদ্ধের প্রথম যুদ্ধ
শফিউল ইসলাম। জন্ম ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭, ঝিনাইদহ জেলায় শৈলকুপা থানার নলকোলা গ্রাম। পিতা ইমান উদ্দিন বিশ্বাস। মাতা নেকজান বেগম। স্নাতক ডিগ্রির পর সাব-ইন্সপেক্টর হিসাবে পুলিশ একাডেমীর ট্রেনিং শেষে ১৯৬৯ সালে বরিশাল জেলায় যােগদান করেন। ১৯৭০-এর সাইক্লোনের সময় ভােলা এবং ১৯৭১-এর ফেব্রুয়ারির প্রথমে ঝালকাঠি থানায় সেকেন্ড অফিসার ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই তিনি ঝালকাঠি সেক্টরের দায়িত্ব পালনকালে থানার অস্ত্রগুলি নিয়ে ঝালকাঠি ও স্বরূপকাঠির ডুমুরিয়া, আটঘর-কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগানে অবস্থান গ্রহণ। করেন। সেই সময় কমরেড় সিরাজ শিকদারের সঙ্গে একত্রে স্বরূপকাঠীর আটঘর-কুড়িআনার পেয়ারা বাগানের ইন্দুকাঠিতে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। পরবর্তীতে মুজিবনগরে চলে যান এবং বশিরহাটের পিফা ইয়ুথ ক্যাম্পে ভারতীয় ক্যাপ্টেন আদ্য প্রসাদ সিপাহ-এর সাথে ট্রেনিং এ্যাডজুটেন্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন। স্বাধীনতার পর প্রথম ঝালকাঠি থানায় ওসি হিসেবে যােগদান করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি পুলিশ একাডেমী সারদা, কুষ্টিয়া, বরিশাল, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, পটিয়া, সিএমপি, কক্সবাজার, ডিএমপি, নরসিংদী ও শরিয়তপুরে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধি হিসেবে ফিলিপাইন্সের ম্যানিলাতে ইন্টারপােলের এশিয়ান রিজোনাল কনফারেন্সে যােগদান করেন। ২০০৫ সালে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকা থেকে এআইজি হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ২০০৭-এর বইমেলাতে আগামী প্রকাশনী থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রণাঙ্গনের সারি বাঁধা পথে’ এবং মুক্তচিন্তা প্রকাশনা থেকে কবিতার বই ‘ভােরের সূর্য দেখি’ আইন বিষয়ক বই ‘পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট এবং আইন-আদালত’; ২০০৮ এর বই মেলায় পুলিশ জীবনের স্মৃতিচারণমূলক বই ‘পুলিশ জীবনের সারি বাঁধা পথে’ প্রকাশিত হয়েছে।