বঙ্গবন্ধু মুজিবকে নিয়ে যাদের লেখার কথা ছিল তারা তেমনটি লেখেননি। মুজিবকে নিয়ে আত্মার টানে যারা লিখেছেন তারাও কোনো কোনো জায়গায় এসে হোঁচট খেয়েছেন ২০১২ সালে ইউপিএল থেকে প্রকাশিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশের পর। শহীদ হওয়ার ৩৭ বছর পর স্বর্গীয় মুজিব যেন নতুনভাবে দেখা দিয়েছে আমাদের সামনে। যারা জীবন্ত মুজিব সম্পর্কে তেমন একটা জানতে চাইনি বা বুঝিনি বা বুঝতে চেষ্টা করিনি তারা যেন বঙ্গবন্ধু মুজিবের রাজনৈতিক মেধা, প্রজ্ঞা, দূরদৃষ্টি, স্বদেশপ্রেম, অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা, রাজনৈতিক শিষ্টাচার, কর্তব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, আত্মীয়ের বন্ধন রক্ষা, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ছোটদের স্নেহ প্রদান, সমস্যা সংকুল অবস্থায় বাধা অতিক্রমে দুরন্ত সাহস ও মনোবল, সাধারণ মানুষের প্রতি মমত্ববোধ ও সহমর্মিতা এবং রাজনীতিতে তথাকথিত নেতা না হয়ে কর্মী হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় গ্রন্থ হিসেবে বইটি এখন বিবেচিত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস মুজিব আদর্শের কোনো লোক এই বই না পড়লে প্রকৃত অর্থে যথার্থ কর্মী হতে পারবে না- নেতা হওয়া তো দূরের কথা। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে গড়ে ওঠার যে নিরলস পরিশ্রম এবং ত্যাগ তার হাজার ভাগের এক ভাগ না করে বা বঙ্গবন্ধুর বিস্তীর্ণ কর্মময় জীবনের কিছু না জেনেই এখন সবাই নেতা হতে চায়। যে দেশে মহৎ প্রাণ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ঘাতকেরা ক্ষণিকের জন্য হলেও পবিত্র সংসদ ও রক্তক্ষয়ী এবং ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত পতাকার অবমাননা বা কলঙ্কিত করেছে সেখানে রাজনৈতিক শিক্ষা ও শিষ্টাচারের অবমূল্যায়ন হওয়ারই কথা। তবুও তা হবে সাময়িক। ইতিহাস এটাই শিক্ষা দেয়।
মোহাম্মদ এমদাদুল হক বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও গবেষক মোহাম্মদ এমদাদুল হক। তিনি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর থানাধীন বাঁশবাড়িয়া গ্রামে ১৯৫০ সালে ২৬ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। মূলত শিক্ষাজীবন কেটেছে দেশের উত্তরাঞ্চলের শহর ঠাকুরগাঁওয়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। একাত্তরের ৭ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও থেকে বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র 'দৈনিক বাংলাদেশ' এবং ২৫ সেপ্টেম্বর তেঁতুলিয়া থেকে প্রকাশিত 'সাপ্তাহিক সংগ্রামী বাংলা'র সম্পাদনার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সংবাদপত্রের সাথে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধের একজন ক্ষুরধার কলমযোদ্ধা হিসেবে তিনি পরিচিত। ১৯৭৭ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের বিভিন্ন পদ ও স্থানে চাকরি করেছেন। তিনি 'ছয়-ম এর প্রবক্তা- মা, মাতৃভূমি, মাতৃভাষা, মুক্তিযুদ্ধ, মুজিব ও মানবতা। তিনি মনে করেন খাঁটি বাঙালি হতে হলে এর বিকল্প নেই। তিনি বিভিন্ন সাহিত্য, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা, শিশুসাহিত্য, নাটক ও গীতিকার হিসেবে পরিচিত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪১।