গৌর চন্দ্রের পেছনে কেউ একজন এসে দাঁড়াল। পরনে লাল শাড়ি। চোখে কাজল। বৃষ্টির পানিতে সেই কাজল ধুয়ে সারা মুখে লেপ্টে যাচ্ছে। কপালের লাল টিপ ভিজে ফুলে উঠেছে। মেয়েটা তার একটা হাত রাখল গৌরের কাঁধে। চমকে উঠল গৌর। এমন স্পর্শ আগে কখনো পায়নি সে। কেমন যেন নির্ভরতা রয়েছে স্পর্শে! গৌর অন্ধকারেও বুঝতে পারল এ স্পর্শে আলো রয়েছে। প্রেমের আলো। পূর্ণিমার হাত ধরে উঠে দাঁড়াল। অন্ধকারে ওকে এত সুন্দর লাগছে কেন! বৃষ্টি ও অন্ধকার পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কোথাও মানুষের চিহ্ন নেই। গৌর আর পূর্ণিমা পালিয়ে যাচ্ছে। অন্ধকারকেও বড় আপন মনে হচ্ছে আজ। পালিয়ে যাওয়ার এই বুদ্ধি পূর্ণিমার। সে জানে, জেলখাটা ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে দেবে না মা—বাবা। বাড়ির কেউ মেনে নেবে না তাদের সম্পর্ক। তাই বলে ভালোবাসাকে হারতে দেবে কেন! আশ্চর্যের বিষয় হলো, গৌরের চোখেও আজ পানি! এমন ঘটনা বুদ্ধি হওয়ার পর কখনো ঘটেছে বলে গৌর মনে করতে পারছে না। অন্ধকার হওয়ায় সুবিধা হয়েছে। পূর্ণিমা এই অশ্রম্ন দেখতে পারছে না। সে শক্ত করে গৌরের হাত ধরে আছে। একটা মেয়ে তার জন্য এতগুলো দিন, এতগুলো রাত অপেক্ষা করেছে ভাবতেই জীবনটাকে মধুর মনে হচ্ছে। এই প্রাপ্তির কাছে গৌরের সব অপ্রাপ্তি বিলীন হয়ে গেছে। এখন থেকে সে আর একা নয়। পথচলার সঙ্গী পেয়ে গেছে। আজ এই মুহূর্তে কেন জানি গৌরের ইচ্ছে করছে লালনের ভাবসঙ্গীত বাদ দিয়ে রবীবাবুর কোনো প্রেমের গান গাইতে!
সোহেল নওরোজ এ প্রজন্মের লেখক। রচনার অজস্রতায়, বিষয়ের বৈচিত্রে তার নামটি পাঠকমহলে সুপরিচিত। যথার্থ ভাব প্রকাশে নিজস্ব আঙ্গিক ব্যবহার ও উপযুক্ত শব্দ চয়নের পারঙ্গমতা স্পষ্ট। মূলত গল্পকার হলেও সমসাময়িক বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কলাম ও মতামত প্রকাশে চৌকস। তবে তিনি যা-ই লিখুন, গতানুগতিকতা এড়িয়ে নিজের স্বকীয়তা তুলে সফল প্রচেষ্টায় তিনি স্বতন্ত্র।
ঝিনাইদহের বেতাই গ্রামে নানাবাড়িতে সোহেল নওরোজের জন্ম। বাবার ডায়েরি অনুযায়ী ১ অক্টোবর। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাৎস্যবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। ‘সুন্দরবন ঊপকূলীয় মৎস্যজীবীদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ বিষয়ক গবেষণাগ্রন্থ জার্মানির ল্যাম্বার্ট থেকে প্রকাশ পায়। বিসিএস (সমবায়) ক্যাডারে ইস্তফা দিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে আগ্রহ জন্মে প্রকৃতি, পরিবেশ আর জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়ে। লেখকের মতে, মনের খেয়ালে নিজের মতো করে বলতে পারায় যে আনন্দ, তার তুলনা নেই। আরোপিত নয় বরং সানন্দে লিখেই গল্পের কাছাকাছি যাওয়া যায়। সে থেকেই মূলত বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিকে লেখালেখির শুরু। মূল আগ্রহ গল্পে; তবে প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও রম্য লিখতেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয়। সোহেল নওরোজ বাংলা একাডেমি আয়োজিত তরুণ লেখক প্রশিক্ষণ প্রকল্প-এর পঞ্চম ব্যাচের সদস্য। ২০১৩ সালে অধিকোষ সাহিত্য প্রতিযোগিতায় তার ‘নিয়তি কিংবা আগুনে পোড়া স্বপ্ন’ সেরা গল্প নির্বাচিত হয়।