শব্দ ছাড়া আমার আর কোনো আশ্রয় নেই। সুখ-শোক-আনন্দ-বিষাদ-বিরহ-রাজনীতি পরিস্থিতি যাই সামনে এসেছে, তা বাক্যে বন্দি করার চেষ্টা করেছি। তুষারের আঁচে ঢাকা এই চরাচরে কবিতা, অণুপদ্য ও মুক্তগদ্য লেখা হয়েছে হাত খুলে। দুই হাজার বাইশে পছন্দের মানুষদে কাছ থেকে এত বেশি ধাক্কা খেয়েছি সেখানে পড়া ও লেখা হয়ে ওঠে আমার একমাত্র উপশম। সৈয়দ শামসুল হকের 'পরানের গহীন ভিতর' এত বছর পরে আবার পড়া আমার লেখাকে প্রভাবিত করে, তা পাঠকমাত্র বুঝতে পারবেন প্রেমাবতারকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠি পড়লে। যেসব আলাপ দেশে থাকলে আড্ডায় করতাম তার অনেককিছুই পত্র আকারে লেখা হয়েছে যেমন বিএনপির মহাসমাবেশ দশ দফা, এদিকে বিভিন্ন দার্শনিক আমাকে ঘিরে রেখেছেন সেই দর্শন পড়ার সময় থেকে। তাদের নিয়েও আমার ভাবনা প্রকাশ করেছি ফাঁকে ফাঁকে। হাইপেশিয়া, ইমানুয়েল কান্ট, ভিটগেনস্টাইন, কনফুসিয়াস, সিমোন দ্য বোভোয়ার এরকম অনেক টুকরো টুকরো চরিত্র এসেছে যখন নিজের মুখোমুখি নিজে হয়েছি। অল্প শব্দে জাপানিরা যেভাবে হাইকু আকারে প্রকাশ করে চিন্তার জগৎকে সে ধরনের চেষ্টা করেছি অণুপদ্য অংশে। এবার অণুপদ্যের সংখ্যা অনেক কাটছাঁট করার পরেও দু'শো ছাড়িয়ে গিয়েছে। আশা করি কোনো না কোনো অণুপদ্য কারও না কারও ভালো লেগে যাবেই। অণুপদ্যগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে 'পদ্ম পদ্য' ট্যাগে প্রকাশ করেছি বেশিরভাগ। এর আলোকে বইয়ের নামকরণ। কবিতাংশে আমার নিজের প্রিয় কবিতা "প্রিয় নারীকে"-এ যেন আমাদের প্রত্যেক সফল নারীর জীবনের গল্প। কেউ নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে যাচ্ছে দেখতে পেলেই পরিচিত পুরুষ- নারী যেভাবে এগিয়ে চলার পথ রুদ্ধ করতে ষড়যন্ত্র করতে থাকে, তা আমি আমার এক বন্ধুর বলা জবানিতে শুনে তাৎক্ষণিক এ কবিতা রচনা করি। আমার প্রতিটা কবিতা বা লেখার পেছনেই ব্যক্তিগত গল্প থাকে। খুব ভালো হতো যদি লেখার পটভূমি বলে তারপর লেখা প্রকাশ করতে পারতাম। মানুষের জীবন হলো প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই, নিজেকে নিজে ছাপিয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষাই মানুষকে আত্মোন্নয়নের দিকে নিয়ে যায়। বিগত বছরগুলোতে প্রকাশিত বইয়ের লেখার সঙ্গে তুলনা করে পাঠকই বলতে পারবেন আমি নিজেকে কিঞ্চিৎ হলেও অতিক্রম করতে পেরেছি কি না এবারের বইয়ে। প্রেমে না পড়ে, প্রেমে থাকুন-কবিতার সঙ্গে থাকুন।
আফসানা কিশােয়ারের জন্ম ঢাকাতে, ১৯৭৮ সালের ৮ মার্চ। ২০০০ সালে লেখালেখির শুরু ‘যায় যায়। দিন’ এর মাধ্যমে। তারপর প্রথম আলাে’র সেরা ফিচার লেখকের স্বীকৃতি। এরপর আর পেছন ফেরা নয়। বেশ কটি জাতীয় দৈনিকের নিয়মিত লেখক হয়ে ওঠেন। দেশের ভেতর, বাহির থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন ম্যাগাজিনে তার লেখা ছাপা হচ্ছে। ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় লেখকের প্রথম কাব্যোপন্যাস ‘রােজনামচা : ভালােবাসা', অপূর্ব নির্মাণশৈলী ও শব্দচয়ন এই কাব্যোপন্যাসকে দান করে ভিন্নমাত্রা। পদ্য, লেখকের অন্যতম প্রিয় বিষয় হলেও গদ্যে তিনি সমান সাবলীল। নস্টালজিয়া’ ও ‘ত্রৈরাশিক’ এই দুই গল্পগ্রন্থে তিনি তার সেই পারদর্শীতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ২০০৫ ছিল লেখকের জন্যে স্মরণীয় বছর। এ বছর শব্দোৎসব’, ৬০টি কবিতার একটি দীর্ঘ সিকুয়েল, নান্দনিক অলংকরণসহ প্রকাশিত হয় এবং সুধীমহলের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়। একই বছর বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের উপর লেখা লেখকের ‘প্রবাসের খেরাে কবিতার প্রকাশ ও ভিডিওচিত্র নির্মাণ করে মালয়েশিয়ায় অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছে এমন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘টেনাগানিটা'। আফসানা কিশােয়ার বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত। পাল্টায় নারী, বাহারি’ তার চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ।