একটা সময় ছিল যখন মানবজীবনের সমস্যাগুলো শুধুমাত্র পরিবার, গোত্র বা সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, অথবা এভাবেও বলতে পারি, অতীতে মানবজীবনে যে সব সমস্যা উদ্ভূত হতো সেগুলো শুধুমাত্র ব্যক্তি, পরিবার, গোত্র কিংবা সমাজের সাথে সম্পর্কিত ছিল। আর সে সকল সমস্যা সমাধান করার জন্য তাদেরকে এসব (ব্যক্তি, পরিবার, গোত্র বা সমাজ) ক্ষেত্রের বাইরে চিন্তা করতে হতো না, কিংবা প্রয়োজনও পড়েনি। কিন্তু বর্তমান একুশ শতাব্দীর সময়টা পুরোপুরি ভিন্ন। বর্তমান সময়ে একজন মানুষের জীবন; তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থা, তাঁর জীবনাচার, তাঁর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, তাঁর সামাজিক আচার-আচরণ, তাঁর রাজনৈতিক কর্মকা- এবং তাঁর জীবনদর্শন কেমন হবে সেটা শুধু তাঁর ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না। মানুষের এসকল বিষয়সমূহ অতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে বর্তমান দুনিয়ার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, শিক্ষাব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে। আমরা সবাই কম-বেশি অবগত বিগত সাড়ে তিনশ-চারশ বছরের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে বর্তমান দুনিয়া এমন একটি পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, যেখানে পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে নির্দিষ্ট একটা গোষ্ঠি। অধিকাংশ দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার কলকাঠি পরিবর্তন হয় তাদের হাত দিয়ে। তথাকথিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুরো দুনিয়ার শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে তারাই। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যাচ্ছে তাদের মতো করে দুনিয়াকে সাজানোর জন্য, তাদের চিন্তা ও দর্শ নের আলোকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম তৈরি করার জন্য। এমন একটি দুনিয়াকে ভালোভাবে না জেনে, এ সভ্যতার কারিগর ও এর নিয়ন্ত্রকদের না বুঝে বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে যতই পর্যালোচনা করা হোক না কেন, এগুলোর পিছনের সত্যিকারের কারণ উদ্ঘাটন করা সম্ভব নয়। আর যে কোনো সমস্যার মূল কারণ বের না করে যতই সমাধান পেশ করা হোক না কেন, তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। সত্যি কথা বলতে গেলে, আজকের দুনিয়ায় এমনটাই চলছে। সবাই মুক্তির আওয়াজ তুলছে, নিত্য-নতুন সমাধানও পেশ করছে, কিন্তু মূল সমস্যা কোথায় সেটা কেউ বুঝে উঠতে পারছে না। কেউ কেউ কিছুটা আঁচ করতে পারলেও সত্যিকারের সমাধান কী হবে সেটা ভাবতে গিয়ে কুল-কিনারা হারিয়ে ফেলছে। তাই এমন একটি পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী, সে বিষয়ে বিস্তর আলাপ করা যেতে পারে। তবে অল্প কথায় বললে, সর্বাগ্রে আমাদের দায়িত্ব হলো, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা এবং এ বিশ্বব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত জ্ঞান দর্শনের উপর সামগ্রিক ধারণা লাভ করা। জ্ঞান ও চিন্তার মধ্যে প্রবাহমান সকল বিকৃতি, অসঙ্গতি ও বিক্ষিপ্ততা দূর করে জ্ঞানকে হাকীকতের উপর প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। আর এই ধরনের বৃহৎ লক্ষ্যকে সামনে রেখে সূচনালগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে জ্ঞানের পুনর্জাগরণ ও নবধারার কাগজ ত্রৈমাসিক মিহওয়ার। ইসলামী চিন্তা ও দর্শন এবং যুগজিজ্ঞাসার জবাবকে সর্বোচ্চ যৌক্তিকভাবে তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর ত্রৈমাসিক মিহওয়ারের ৪টি সংখ্যা ইতোমধ্যে আপনাদের হাতে পৌঁছে গিয়েছে। বিগত ৪টি সংখ্যার ন্যায় মিহওয়ার ৫ম সংখ্যাতেও থাকছে সময়ের সেরা চিন্তাবিদ ও আলেমদের লেখনী। এ সংখ্যার মূল প্রবন্ধে থাকছে বিশিষ্ট অনুবাদক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ বুরহান উদ্দিন আজাদের ‘লিবারেলিজম ও লিবারেলিস্টদের ওয়াদাকৃত জান্নাত’। বিশেষ প্রবন্ধে ‘আমাদের শহর ভাবনায় ইসলামী সভ্যতার প্রশস্ততা বনাম ভোগবাদী সভ্যতার সংকীর্ণতা’ শিরোনামে লিখেছেন তরুণ গবেষক, চিন্তক ও লেখক আব্দুল্লাহ আল নোমান। এবারের সংখ্যায় ‘ত্বহা আবদুর রহমানের চিন্তা ও দর্শন’ নামে নতুন বিভাগে অনূদিত হয়েছে প্রখ্যাত আলেম, ফকীহ, উসূলবিদ ও মুহাদ্দিস প্রফেসর ড. মেহমেদ গরমেজের ‘আল্লামা ত্বহা আবদুর রহমান ও তাঁর চিন্তাদর্শন’। অনুবাদ করেছেন আবু যেইনেপ। রাজনীতি বিভাগে লিখেছেন, প্রখ্যাত লেখক ও গবেষক ফাহমি-উর-রহমান। অর্থনীতি বিভাগে অনূদিত হয়েছে, ইমাম শাহ ওয়ালীউল্লাহর অর্থনৈতিক চিন্তার উপর প্রফেসর ড. আব্দুল আজীম ইসলাহীর কাজ। আন্তর্জাতিক বিভাগে লিখেছেন হিশাম আল নোমান। কৃষিতে অনূদিত হয়েছে মারওয়ান হাদিদের আর্টিকেল। এছাড়াও থাকছে মুভি, বই ও ব্যক্তিত্ব পর্যালোচনা। বরাবরের ন্যায় এবারও সময়ের সেরা চিন্তাবিদগণের লেখনী ও তরুণ চিন্তকদের লেখনীর মেলবন্ধনের মাধ্যমে ইতিহাস ও নতুনত্বের ছোঁয়ায় উপস্থাপিত হবে ‘জ্ঞানের পুনর্জাগরণ ও নবধারার কাগজ’ মিহওয়ার এর পঞ্চম সংখ্যা।
হাসান আল ফিরদাউস জন্ম : বাংলাদেশের টাংগাইল জেলায়। তিনি সমাজবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি 'ইসলামী চিন্তা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের' ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন এবং ত্রৈমাসিক মিহওয়ারের সম্পাদক।