বাংলা ভাষার খুব কম পাঠক মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় এমন বই পড়তে স্বস্তি পান। যে কারণে ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর টেলিভিশন জনপ্রিয় হয়েছে আজকাল। একটা নির্বোধ ‘ব্রেইনলেস মনস্টার’ তৈরি হয়ে গেছে চারপাশে। ‘ফ্যামিলিয়ার এসে’র সুবিধা হলো, আপনি এটাকে আত্মকথন, প্রবন্ধ, গল্প বা উপন্যাস যেকোনোভাবেই পড়তে পারেন। আপকি দিল কি মর্জি, এ বিষয়ে লেখক হিসেবে দাবি নেই। ‘এই তো জীবন’ ট্রিলজির প্রথম বই ‘কথারা আমার মন’ বের হয়েছে ২০১৮ সালের এপ্রিলে, বেঙ্গল পাবলিকেশান্স থেকে। এই বইটাকে ট্রিলজির দ্বিতীয় বই বলা যায়। যারা সামাজিক চাপে এখনও পুরোপুরি বিবেক হারাননি, স্বাধীন ও সচেতনভাবে শান্ত জীবন যাপন করেন, তাদের এই বই ভালো লাগবে বলে আশা রাখি। লিখতে লিখতেই লেখক বুঝতে পেরেছেন, গদ্য বা রচনা মানে একটা ‘সংযুক্তি’, ‘আর্টিকুলেশন’, ‘ইন্টারলিংকড’, ‘সমন্বয়’, আন্তঃযোগাযোগ এবং জগতের যেকোনা বিষয় দিয়েই তা হতে পারে। এই ‘আর্টিকুলেশন’টুকুতে নানান মাত্রায় দুনিয়া আপন ইতিহাসকে লিখে রাখে। দেখা যায় যেমন দর্শনের ইতিহাস, সমাজ বিদ্যার ইতিহাস ইত্যাদি থেকে আমার নিজের আগ্রহ চলে গেছে লেখা থেকে। যখন আমি নিশ্চিতভাবে জানিই যে, এমন কাব্যিক ইতিহাস, দর্শন বা ভাষার বিষয়ে বিরতিহীনভাবে লিখতে পারব, তাহলে কেনই-বা আমি লিখব? চলচ্চিত্রের ইতিহাসের ‘উজ্জ্বল নক্ষত্র’ তারকোভস্কি কী সুন্দর করে বলেছেন কথাটা— ‘মানুষ আর্ট বা শিল্প তৈরি করে কেন? অন্যের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য? কিন্তু আমি যদি সত্যই জানি যে আমি প্রতিভাবান, তাহলে কেন আমি শিল্পচর্চা করব?’ ‘যখন ফুটিল কমল’-এর গদ্যগুলোতে ‘ফ্যামেলিয়ার এসে’ লেখা হয়েছে, রচনার দিকেই ঝোঁক। এখানে লেখার গন্তব্য ‘অনুপস্থিত’, বলা যায়, সব মিলিয়ে ‘অনুপস্থিতি’ই লেখার বিষয়। অনুপস্থিতি লেখায় গতির এক মাত্রা যুক্ত করে, অপ্রত্যাশিত মাত্রা, যোগাযোগহীন ও বহুমাত্রিক যাত্রা, ব্যক্তিজীবনের মতোই। অনুপস্থিত থাকলেও বিষয়হীন লক্ষ্যহীন লেখা হয় না, সম্ভব না। ‘যোগাযোগহীনতা’ পাঠক লেখায় পাবেন, যা দূরত্বে থেকে দেখা যাবে স্পষ্ট, কিন্তু অতিক্রম করা যাবে না কখনোই। সবগুলো শব্দের মধ্যেই নৈঃশব্দ্যের একটা দুঃখ যেন কুয়াশার মতো ছড়ানো। যে দুঃখ ‘প্রেমকেন্দ্রিক’ কাব্যিক দুঃখ না-দূরত্বের; অপরিচয়ের, অসম্পূর্ণতার অভিজ্ঞতার দুঃখ।