বহুদিন কবিতায় চোখ বুলাতে বুলাতে ক্লান্তি নামে। কোনো চিত্রকল্প, কোনো উপমা-উৎপ্রেক্ষা, অনুপ্রাস-অন্তমিল চেতনে সাড়া দেয় না। বোধে অংশগ্রহণ করে না। জীবনের অভিজ্ঞতায় টোকা দেয় না। কবিতা থেকে মুখ ফেরাতে ফেরাতে কখনো আবার দেখা মিলে যায় নতুন কোনো শব্দ কিংবা চিত্রকল্পের। তখন ফের চোখ ফিরিয়ে এনে লাইনের পর লাইনে প্রতিস্থাপন করতে হয়। পড়তে হয়। অনুভবে অনুরণন মাখতে হয়। শাহেদ কায়েসের ‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’ কাব্যগ্রন্থ পাঠে আমার মধ্যে তেমন একটা অনুরণন কাজ করেছে। পড়তে-পড়তে থেমেছি। আবার নতুন করে লাইনগুলো পড়েছি। ভুলে গেছি। আবার মনেও করেছি। পাঠে এটি কোনো সহজ পদ্ধতি নয়। বৈশ্বিক উল্লম্ফন আমাদের চেতন প্রবাহে যে নৈরাজ্য মেখে দিয়েছে, চেষ্টা করলেও তা আর এড়ানো সম্ভব নয়। ফলে শাহেদের ‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো সহজ করে পাঠের উপায় নেই। সহজে-গরলে-জটিলে-কুটিলে মাখামাখি। এটিই বর্তমান জীবন-যাপনের একটি নমুনা। মানে আছে, আবার নেই। প্রেম আছে, আবার নেই। সারল্য আছে, আবার নেই। এভাবে শোক-বেদনা-মহামারি-মানুষের জন্য কাতরতা, প্রকৃতির জন্য ভালোবাসা-হাহাকার থেকেও নেই। কিংবা নেই, তবু আছে। এ কারণে ‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো বিভিন্ন মানসিকতায় পাঠ আবশ্যক। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশেও।
জন্ম ঢাকায়, ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭০। পৈতৃক নিবাস সোনারগাঁ। কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক, হিউম্যান রাইটস-এ স্নাতকোত্তর। পেশা ফ্রি-ল্যান্স গবেষক। মুক্ত-চিন্তক, সংস্কৃতিকর্মী, কাজ করেন মানুষের অধিকার নিয়ে। শখ ভ্রমণ, সুযোগ পেলেই ঘুরে বেড়ান দেশ-বিদেশ। . কাব্যগ্রন্থ: বাঁক ফেরার অভিজ্ঞতা (দোয়েল প্রকাশনী, ১৯৯৯), চূড়ায় হারানো কণ্ঠ (মঙ্গলসন্ধ্যা, ২০০৩), মায়াদ্বীপ (ঐতিহ্য, ২০১৫), কৃষক ও কবির সেমিনার (অভিযান, ২০২০), সহজিয়া প্রেমের কবিতা (অভিযান, ২০২১), নৈরাজ্যবাদী হাওয়া (চৈতন্য, ২০২৩), স্বনির্বাচিত কবিতা (ভাষাচিত্র, ২০২৩), স্বনির্বাচিত কবিতা (আগরতলা সংস্করণ; নীহারিকা, ২০২৩), স্বনির্বাচিত কবিতা (কলকাতা সংস্করণ; কবিতা আশ্রম, ২০২৩)। . অন্যান্য গ্রন্থ: মঙ্গলসন্ধ্যা প্রেমের কবিতা (সম্পাদিত গ্রন্থ; ধ্রুবপদ, ২০১৭); এশিয়ার বারটি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি (ইংরেজি গ্রন্থ, মে এইটিন মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, দক্ষিণ কোরিয়া, ২০১৫); বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম স্মরণগ্রন্থ (ঐতিহ্য, ২০২০)। . পুরস্কার ও সম্মাননা: চন্দ্রাবতী সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার (কবিতায়, ২০২১), শালুক সম্মাননা (২০১৯)।