ঢাকা বাংলার রাজধানী রূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়। তাঁর ইচ্ছাতেই রাজমহল থেকে বাংলার রাজধানী সরিয়ে আনা হয় ঢাকায়। ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার প্রথম সুবাদার ইসলাম খাঁ ঢাকায় আগমন করেন। তিনি রাজধানীর নাম রাখেন জাহাঙ্গীরনগর। বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তরের প্রধান কারণ ছিল পর্তুগিজ ও বর্মী মগদের অত্যাচার থেকে বাংলার মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা। দ্বিতীয় কারণ, বাংলার বারো ভূঁইয়াদের দমন করা। প্রধানত এই দুটি সমস্যার কারণে মুঘল শাসকদের বাংলা থেকে ভূমি রাজস্ব আদায় করা কঠিন হয়ে পড়ে। সুতরাং রাজমহল থেকে রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরের নেপথ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণ প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। আজ থেকে চারশো বছর আগে ঢাকার রাজনৈতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব যতটুকু ছিল, চারশো বছর পরও সেই গুরুত্ব আদৌ হ্রাস পায়নি। সময়ের পরিবর্তন, সামাজিক ও রাজনৈতিক গতিময়তার কারণে রাজধানী ঢাকার গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। মুঘল রাজধানী ঢাকার উত্থান এবং মুঘল যুগের শেষে কোন্ পরিস্থিতিতে ঢাকা হারায় রাজধানীর মর্যাদা, সেকথাও উল্লেখ করা হয়েছে বর্তমান গ্রন্থে। সেই যুগের মুঘল শাসকদের নানা ঘটনা যেমন তুলে ধরতে চেষ্টা হয়েছে, এর পাশাপাশি জনজীবনের কথাও উঠে এসেছে আলোচনায়। মুঘল যুগকে কেন্দ্র একটি বই অনেক আগে স্টুডেন্টওয়েজ থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। বর্তমান গ্রন্থ পূর্বের গ্রন্থের পরিবর্ধিত রূপই শুধু নয়, লেখাও হয়েছে নতুন আঙ্গিকে; নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে অনেক দুর্লভ তথ্য, নামটাও তাই নতুন। অতীতের ঘটনাবহুল তথ্য এ-কালে খুব সহজলভ্য নয়। তাই রাজধানী ঢাকার অতীত ইতিহাস নিয়ে কাজ করাটা বেশ কঠিন। বইটি লেখা হয়েছে সাধারণ পাঠকদের কথা ভাবনায় রেখে। দিব্যপ্রকাশ-এর স্বত্বাধিকারী জনাব মঈনুল আহসান সাবেরের আগ্রহের কারণে বর্তমান গ্রন্থটি প্রকাশ করা সম্ভব হলো।