‘অতলান্তে তুমি, ঝরে যেও না বৃষ্টির মতো’ বর্তমান কালখণ্ডের কবি অনন্যা জান্নাতের এটি তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। তাঁর আগের দুটি কাব্যগ্রন্থ আছে, ২০২০ এ প্রকাশিত ‘প্রণয়ের আটপৌরে অসুখ’ এবং ২০২২ এর বইমেলাতে প্রকাশিত ‘নাকফুলে আদিম ঘ্রাণ’। তিনি ২০১৭ সালে কবিতার জগতে এসে নিজস্ব কাব্যভাষা গড়ে ফেলতে পেরেছেন কেননা উপলব্ধি করেছেন জীবন স্বাভাবিকভাবেই ন্যায্য নয়; সংগ্রাম, কষ্ট এবং ক্ষতির সময়কাল অনিবার্য। অনন্যা জান্নাত স্বীকার করছেন, ‘আমার ভেতর যে বিষবাষ্প, ভালোবাসার তুলকালাম ঘূর্ণি, জলোচ্ছ্বাস তা হয়তো আর কোনো দিনই তোমাকে বলা হবে না। বলা হবে না অপ্রকাশিত হৃদয়-ক্ষত, দীর্ঘশ্বাস।’ প্রেমে বিচ্ছেদ একটি শক্তিশালী আবেগ যা স্থায়ী ক্ষত রেখে যায়। অনন্যা জান্নাতের কবিতাগুলোয় বিচ্ছেদ এনেছে যন্ত্রণা এবং ক্রোধ ও অন্তর্দৃষ্টি, যা তিনি ক্ষতের আকারে কবিতার অবয়বে সেইভাবে বুনে দিয়েছেন যেমন আমরা পাই সিমাস হিনি, ডিলান টমাস, অ্যানে সেক্সটন, ক্রিস্টিনা রসেটি প্রমুখের বেদনাদায়ক বিশ্বাসঘাতকতার প্রেমের কবিতায়। এই কাব্যগ্রন্থে অনন্যা জান্নাত বলছেন, ‘এতটা বিষাদ দিয়ো না, এতটাও দিয়ো না, যতটা বিষাদ পেলে মৃত্যুর জন্য আর কখনো কারো অপেক্ষা করা না লাগে। সমস্ত বাঁধন খুলে, খুলে দিয়ে সমস্ত পিছুটান নিজেকেই নিজের পৌঁছতে হয় বিভীষিকাময় বীভৎস মৃত্যুর সকরুণ নির্মম দুয়ারে।’ প্রেমিককে তিনি অনুরোধ করছেন, ‘ফিরে এসো, ফিরে এসো, আমি এখনো তোমার অপেক্ষায়, উপেক্ষায়; চিবুকের নিচে জমেছে দেখ বিষাদের কী বিভীষিকাময় বিষাক্ত ঘনকালো ধোঁয়াটে নিরেট অন্ধকার। আমি এখনো তোমার অপেক্ষায়; উপেক্ষায়, একবার ফিরলেই মিশে যাব তোমাতে, মিশে যাব গভীর থেকে আরও গভীরতর আলিঙ্গনে।’ অনন্যা জান্নাত কিন্তু কেবল মনের কথা বলছেন না ‘অতলান্তে তুমি ঝরে যেও না বৃষ্টির মতো’ কাব্যগ্রন্থে তিনি বলছেন তাঁর সমগ্র জীবন নষ্ট হয়ে যাবার কথা। পাঠকের মননে তাঁর ব্যথাবেদনা সরাসরি পৌঁছে দেবার জন্য অনন্যা জান্নাত ছন্দ বর্জন করে গদ্য কবিতাকে তাঁর অন্তরক্ষরণের বাহন করেছেন। কবিতায় গদ্যের লয় ব্যবহার করে নিজের বিষাদ ও মনোকষ্টকে পাঠকের মনোজগতে নিগূঢ় ধ্বনিদ্যোতনা সৃষ্টি করে পৌঁছে দিতে সফল হয়েছেন। অনন্যা জান্নাত, নিঃসন্দেহে, বর্তমান কালখণ্ডের একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি। মলয় রায়চৌধুরী
যশাের শহরে বেড়ে ওঠা কবি অনন্যা জান্নাতের জন্ম ১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সহজ, সরল, সৎ, স্পষ্টভাষী, সাহসী, প্রতিবাদী ও দৃঢ়চেতা এই কবি, তফসির আহমদ ও নিলুফার ইয়াসমিন দম্পতির বড় সন্তান। ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থী হিসেবে মনে স্বাভাবিকভাবেই সাহিত্যের বীজ সুপ্তাবস্থায় ছিল। যাপিত জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত সেই বীজকে উসকে দিয়ে গড়েছে মহীরুহ। তার লেখায় নান্দনিক শব্দ আর মেদহীন উপমার সাথে মিশে আছে হৃদয়ের নিখাদ অনুভূতি। ‘প্রণয়ের আটপৌরে অসুখ সাহিত্যপাড়ায় অনন্যা। জান্নাতের প্রথম নিবেদন। প্রচণ্ড আবেগী জীবনের সাথে প্রণয়ের অমিমাংসিত পরিণয়ের অপূর্ব মেলবন্ধন। এই কাব্য। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কবির বেশকিছু কবিতা। প্রকাশিত হয়েছে তােপধ্বনি' (২০১৯) নামের যৌথকাব্য। হৃদয়ের নির্যাস থেকে বেরিয়ে শব্দমালা সময়ের সাথে। এগিয়ে যাবে সাফল্যের স্বর্ণচূড়ায় সেই প্রত্যাশা রাখি।